শিল্পবর্জ্যে পরিবেশ ও জনজীবন হুমকির মুখে
শিল্পবর্জ্যে পরিবেশ ও জনজীবন হুমকির মুখে
 
আজ ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ রবিবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ‘শিল্পবর্জ্যে পরিবেশ দুষণঃ আমদের করনীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর জসিম উদ্দীন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ শাহজাহান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর পরিচালক (প্রোগ্রাম) সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এবং সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক জনাব শ্যামল দত্ত।
 
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়Ñবাংলাদেশের সর্বাধিক দূষণ-প্রবণ শিল্প উপখাতগুলো: টেক্্রটাইল, ট্যানারী, পেপার মিল, চিনি মিল, শোধনাগার, ঔষধ র্শিপ, রাসায়নিক সামগ্রি, রাবার ও প্লাষ্টিক। এরা ভূমিতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, পানিতে বিষাক্ত ধাতু এবং বাতাসে বিষাক্ত রাসায়নিক ও জৈব অক্্িরজেন ছাড়ে। এরা দুষক দ্রব্যাদির মোট অংশের অন্ততঃ ৫/. ছড়ায়। এ বিষাক্ত শিল্পবর্জ্য বিভিন্ন নদী-নালা, খাল, বিলে ফেলার ফলে পরিবেশ ও জনজীবনের যে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি এবং জানি। কলকারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য শোধন ছাড়া কোন ভাবে বাইরে ফেলা যাবেনা এ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও তা কোন ভাবেই শিল্প মালিকগণ মেনে চলছে না। কিছু কিছু কল-কারকানা শোধনাগার স্থাপন করার পরেও সে মেশিন নিয়ম মাফিক চালু রাখে না। কারণ তাতে মুনাফার কিছু কমতি হবে ভেবে।
 
সেমিনারের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মোঃ শাহজাহান বলেন- সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। অধিদপ্তরের জনবলের অভাব রয়েছে, কোন এলাকায় পরিদর্শনে যাবার জন্য পর্যাপ্ত যানবাহনের স্বল্পতা রয়েছে। তিনি বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও পরিবেশ অধিদপ্তর বিষাক্ত শিল্পবর্জ্য নির্গমন বন্ধের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় এখন অনেক দায়িত্বশীল হয়েছে এবং নতুন করে কিছু শাস্তির ব্যবস্থা এবং তার কার্যকরী প্রয়োগের ব্যাপারেও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। 
 
সেমিনারের সভাপতি বলেন-পরিবেশ আন্দোলনে সচেতনতা ও উদ্বুদ্ধকরণ এই দুটি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারলে আজকের এই বিষয়ে আমাদের সমস্যা অনেক খানি দুর হতে বাধ্য। আর সেই সাথে আইনকে সঠিকভাবে হাটতে হবে অবশ্যই।  
 
বেলা’র পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা বলেন-বিশেষ করে ট্যানারি শিল্পের কথায় ধরা যাক, আমরা যে পরিমান এ খাত থেকে অর্ধনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করি তার থেকে অধিক পরিমানে আমাদের পরিবেশগত অবক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে হিসাব করে দেখা যায় এ খাত থেকে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বেলার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং সেখানে কিছু রায়ও হয়েছে। কিন্তু সে রায় কার্যকর হচ্ছে না। 
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, যে সকল শিল্প-কারখানা শোধন না করে বর্জ্য বাইরে ফেলছে তাদের আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন শাস্তি দিতে হবে যেন তা দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায়। আমরা বিভিন্ন সময় সরকারী প্রতিষ্ঠানকে/ সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছি, এ ভয়াবহ শিল্পবর্জ্য থেকে পরিবেশ  ও মানুষকে রক্ষা করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আমরা এখন বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সে এলাকার স্থানীয় এলাকাবাসীর সমন্বয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরী মনে করছি। পরবর্তীতে এই এলাকাবাসীরাই আইনকে সাহায্য করবে বিভিন্নভাবে তথ্য প্রদান করে। 
 
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, দৈনিক আমাদের সময়ের বার্তা সম্পাদক বিলকিস নাহার স্মৃতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ.কে মনোয়ার উদ্দীন আহমেদ, প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, অদ্যাপক ফ’লহ হোসেন, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান প্রমখ।