বিপথগামীতা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় ছেলে-মেয়েদের বেড়ে উঠার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

বিপথগামীতা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় ছেলে-মেয়েদের বেড়ে উঠার
সুষ্ঠু সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে


দেশের কিশোর-তরুণদের যেখানে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার কথা সেখানে তারা বিপথগামী হচ্ছে। তারা ঝুঁকে পড়ছে সন্ত্রাণবাদের দিকে। ফলে দেশ এবং জাতি যেমন অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তেমনি ঝরে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে এই কিশোর-তরুণদের বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করা এবং এটাই হবে সন্ত্রাসকে মুলোৎপাটনের মৌলিক কাজ। আমাদের পারিবারিক, সামাজিক জীবন ক্রমাগত অস্থির হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সামাজিক পরিবেশের অবক্ষয় হচ্ছে, আমরা সজ্ঞানে বা না জেনে এই পরিবেশ ধ্বংসকে ত্বরাণি¦ত করছি। তরুণ-কিশোরদের বিপথগামী হওয়ার পিছনে এটাও একটি অন্যতম কারণ। বিপথগামীতা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় ছেলে-মেয়েদের বেড়ে উঠার সুষ্ঠু সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ২৩ জুলাই ২০১৬, শনিবার, সকাল ১১টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৬টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন নাসফের সভাপতি ও পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোরশেদ, নির্বাহী সদস্য তাসনীম নাঈমা, পবার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য তারিক হাসান মিঠুল, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক, গ্রীণ এনভায়রনমুভমেন্টের সভাপতি মঞ্জুর হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার সংস্থার সভাপতি মো: বাবুল, সুবন্ধন সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান, ডিসি ক্লাবের সভাপতি সি এম মামুনুর রশিদ, ইয়থ সানের সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দযুগল হচ্ছে ‘সন্ত্রাস’ এবং ‘সন্ত্রাসী হামলা’। মাত্র গত (১৫ জুলাই) ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহ ফলাফল আমরা অতীব বেদনা ও তীব্র ঘৃণার সাথে প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশেও এই বর্বর ঘটনার শুরু হয়েছে গত শতাব্দীর শেষ দশক হতে। বিগত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে এবং ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতের সন্নিকটে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় দেশবাসী হতবিহ্বল এবং আতংকিত। আরো শিউরে ওঠার মতো বিষয় হচ্ছে এ দুটো সন্ত্রাসী হামলায়  অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছে তারা সকলেই কিশোর-তরুণ। দেশের কিশোর-তরুণদের যেখানে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার কথা সেখানে তারা বিপথগামী হচ্ছে। তারা ঝুঁকে পড়ছে সন্ত্রাণবাদের দিকে। ফলে দেশ এবং জাতি যেমন অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তেমনি ঝরে যাচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে এই কিশোর-তরুণদের বিপথগামীতা থেকে রক্ষা করা। এবং এটাই হবে সন্ত্রাসকে মুলোৎপাটনের মৌলিক কাজ।

আমাদের পারিবারিক, সামাজিক জীবন ক্রমাগত অস্থির হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সামাজিক পরিবেশের অবক্ষয় হচ্ছে, আমরা সজ্ঞানে বা না জেনে এই পরিবেশ ধ্বংসকে ত্বরাণি¦ত করছি। তরুণ-কিশোরদের বিপথগামী হওয়ার পিছনে এটাও একটি অন্যতম কারণ। একটি শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ সংগঠনের সুস্থ ও এবং প্রকৃতিসম্মত পরিবেশ। কিশোর-তরুণদের বিপথগামী থেকে ফেরাতে প্রকৃতিসম্মত মনোসামাজিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। একটি শিশুর বিকাশের প্রধান পীঠস্থান হচ্ছে তার পরিবার। পরিবারে মা-বাবা যদি শিশুর বিকাশ সম্পর্কে আবেগ, মন ও ধারণাগতভাবে অপরিপক্ক থাকে তাহলে সেই পরিবারে শিশুর বিপথগামিতার সম্ভাবনা অধিকতর। এছাড়া বাবা-মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের অসদাচারণ, মিথ্যাচার, দূর্নীতিপরায়ণতা, ভারসাম্যহীন ব্যবহার শিশুকে বিপথগামী করে তোলে। প্রতিবেশি ও আত্মীয়স্বজন দ্বারা শিশুরা দারুণ প্রভাবিত হয়। স্কুল-কলেজ হচ্ছে শিশু কিশোরের অনন্য ভুবন। এখানে লেখাপড়ার সাথে সাথে শিশূ কিশোরদের


সামাজিকীকরণ হয়। এখানে সহপাঠি, বন্ধু, শিক্ষক দ্বারা ব্যক্তি শিশু বা কিশোরটি খুব বেশি প্রভাবিত হয়। কিশোর তরুণটির জীবনপথের গতিমুখ নির্ধারণে এদের যে কেউ নির্ধারক ভ’মিকা পালন করে। কিশোর বা তরুণ বিপথগামী হওয়ার সুযোগ এখানে বেশি পায়। পিঠে বইয়ের বোঝা বহন করতে করতে শিশুটির পিঠ বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, প্রাইভেট পড়া, পাঠের বোঝা তার জ্ঞানচর্চা ও পড়ার আনন্দ নষ্ট করে দিয়েছে। খেলার মাঠ নেই, নেই বিনোদনের জায়গা। শহরগুলো ইটের বস্তি। বছরের পর বছর কেটে গেছে মাটির সাথে পায়ের স্পর্শ লাগেনি। একটি ঘরের    চার দেয়ালের ভিতর শিশু বন্দী। মাথা গুঁজে মোবাইল, ল্যাপটপে ইন্টারনেট সার্চ করে ফেসবুকিং ও অন্যান্য        সামাজিক মাধ্যম ভ্রমণ করে করে সে ক্লান্ত। সব মিলিয়ে সে হতাশ অথবা ক্ষুব্ধ।

বিপথগামী এই তরুণদের এই কিশোরদের আমরা কিভাবে বিপথগামীতা থেকে ফিরাবো ? ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রজীবন পর্যন্ত সদাচারী হতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সর্বপর্যায়ে শিক্ষা হবে আনন্দময় ও প্রকৃতিসম্মত। শিশুদের জন্য আনন্দের বিনোদনের পর্যাপ্ত আয়োজন রাখতে হবে। খেলার পর্যাপ্ত মাঠ, পার্ক রাখতে হবে। প্রকৃতির বিন্যাসের সাথে সামঞ্জস্য জীবনধারা গড়ে তুলতে হবে। যেসব কারণে শিশুদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ  ও ক্রোধ তৈরি হয় সে কারণগুলো যথাসাধ্য দূর করতে প্রয়াসী হতে হবে। সর্বোপরি শিশু-কিশোর তরুণদের সামনে মানব কল্যাণের স্বপ্ন তুলে ধরে সেই পথে তাকে নিরন্তর ডেকে যেতে হবে। তাহলেই আমাদের কিশোর তরুণেরা বিপথগামী হবে না।