গুলশান লেক ভরাট করে রাস্তা/ব্রীজ তৈরির স্থান ও সামগ্রিকভাবে লেকের পরিবেশ পর্যক্ষণের জন্য সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রাথমিক প্রতিবেদন
গুলশান লেক ভরাট করে রাস্তা/ব্রীজ তৈরির স্থান ও সামগ্রিকভাবে লেকের পরিবেশ পর্যক্ষণের জন্য সরেজমিনে পরিদর্শনের
প্রাথমিক প্রতিবেদন
 
গত ১৩ নভেম্বর ২০০৭ সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি টিম ৪১ নং সড়ক থেকে বনানী ১১ নং সংযোগ স্থলে ব্রিজ নির্মান করণে গুলশান লেকের বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন-পবা’র আহ্বায়ক আবু নাসের খান, প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সি এম মুর্শেদ, গুলশান সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট দেলোয়ার হোসেন দুলাল, গুলশান সোসাইটি জোন-৩ এর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান চৌধুরী, গুলশান সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার রায়হান খালিদ সহ স্থানীয় জনগণ ও এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 
 
বনানী ১১ নং রোড থেকে গুলশান ৪১ নং সড়ক ও ৪৩  নং সড়ক সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে গুলশান লেক মাটি দিয়ে ভরাট করে ব্রিজের কাজ চলছে। যা লেক ইকোসিস্টেমকে দ্বিখন্ডিত করেছে। বালি দিয়ে লেক ভরাট করার ফলে লেকের স্বাভাবিক প্রবহ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও শিল্প-বর্জ্য, পয়ঃবর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্যসহ নানা ধরণের তরল ও কঠিন বর্জ্য লেকের পরিবেশকে দুষিত করছে। লেক ভরাট করে উন্নয়নের নামে প্লট বরাদ্দ এবং লেকের ভিতরে অবৈধ স্থাপনা নির্মানের কারণে লেকটি সংকুচিত হচ্ছে।
 
জানা যায় যে গুলশান লেকের উপর নির্মানাধীন ব্রিজটির উচ্চতা হবে বর্ষার পানি থেকে মাত্র ৫ ফুট উপরে ফলে নৌ-যান চলাচলে সমস্যা দেখা দেবে। লেক উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক জনাব হায়দার আলীর সাথে কথা বলে জানা যায়Ñগুলশান লেক উন্নয়নের জন্য ঊওঅ স্টাডি করা হয় নাই। তবে এ ব্যপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মৌখিক সম্মতি নেওয়া হয়েছে যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইনকে তুচ্ছ জ্ঞান করা হয়েছে। তাছাড়া এটি জলাধার আইনেরও পরিপন্থি। যদি গুলশান লেকটিকে সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন করা হয় তাহলে এটি ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়ন্ত্রণ, বাতাসে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বায়ো ডাইভার্সিটি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও গুলশান লেকটি নগরবাসীর জন্য অবকাশ বিনোদন ও দৃষ্টি নন্দন স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব। 
 
সরকার লেক উন্নয়নের জন্য যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আমরা তা নীতিগতভাবে সাধুবাদ জানাই । তবে এই লেক উন্নয়নের জন্য সামগ্রিক পরিকল্পনাটি জন সম্মুখে প্রকাশ করা উচিত এবং ব্রীজ বা রাস্তা করা হলে তা ঐ পরিকল্পনার    অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। যানজট নিরসনে গুলশান - বনানী এলাকায় কোন নতুন রাস্তা বা ব্রীজ নির্মান করতে হলে তা এলাকার সামগ্রিক যোগাযোগ পরিকল্পনার অংশ হওয়া উচিত। 
নগর যোগাযোগ পরিকল্পনা এবং লেক উন্নয়নের সাথে সমন্বয় এবং ‘ঊওঅ’ স্টাডি ছাড়া উক্ত গুলশান লেকে ব্রিজ নির্মান করা হলে লেকের অপূরণীয় ক্ষতিসহ গুলশান এলাকার যানজট আরো বৃদ্ধি পাবে কারণ গুলশানের ৪১ নং সড়কটি এমনিতেই অত্যন্ত সংকীর্ন এবং মূল এভিনিউ এ সংযোগের জন্য তিনটি ক্রসিংও অতিক্রম করতে হয় যা যানযট নিরসন আরো তিব্রতর হবে। ফলে যানজটের কোন স্থ্রায়ী সমাধান না হয়ে যানজটের স্থান পরিবর্তন হবে।
 
এমতাবস্থায় গুলশান-বনানী লেকের উপর কোন ব্রীজ বা রাস্তা করতে হলে এটি এক দিকে যেমন যোগাযোগ পরিকল্পনার অংশ হওয়া উচিত, অন্যদিকে লেক উন্নয়নের পরিকল্পনার সাথেও সামঞ্জস্যপুর্ন হওয়া উচিত। একই সাথে ব্রীজ করার পূর্বে এর উপর পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব নিরুপন অর্থাৎ ঊওঅ ষ্টাডি করা উচিত।
 
সুতরাং উপরোক্ত কাজগুলো না করা পর্যন্ত গুলশান-বনানী লেকের উপর ব্রীজ বা রাস্তা নির্মাণ কার্যক্রম সম্পূর্ন ভাবে বন্ধ রাখা উচিত।