ডিসিসি’র আওতাধীন ৪৩ টি খালসহ মহানগরীর শতাধিক খাল উদ্ধার-রক্ষার্থে কমিশন গঠন ও ভূমিদস্যুদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাই
ডিসিসি’র আওতাধীন ৪৩ টি খালসহ মহানগরীর শতাধিক খাল উদ্ধার-রক্ষার্থে 
কমিশন গঠন ও ভূমিদস্যুদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাই
 
অপরিকল্পিত নগরায়নসহ ভূমিদস্যুদের বেপরোয়া কার্যক্রমে বিলীন হতে চলেছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৪৩ টি খালসহ ঢাকা মহানগরীর অসংখ্য খাল। এতে করে মহানগরী ঢাকা জলাবদ্ধতা, নৌ-যোগাযোগ ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়াসহ নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকার আশপাশের অসংখ্য জেলেদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করতো  এসব খালের উপর এবং কৃষক তার  উৎপাদিত সব্জি সহজেই ঢাকায় পৌছাতে পারতো, কিন্তু এখনতা  শুধুই স্বপ্নমাত্র। ঢাকা শহরের ভিতরের ও চারপাশের খালগুলো রক্ষা এবং সচল করতে না পারলে আগামী দিনে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। আজ ২১ মে ২০১০ শুক্রবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে ‘‘ঢাকার অস্তিত্ব ও কৃষক-জেলে-মাঝির জীবন-জীবিকা রক্ষায় ডুমনী, আতির খাল, হাইক্কার খালসহ সকল খাল উদ্ধার-রক্ষা কর’’ দাবীতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও গ্রীণবেল্ট ট্রাস্ট আয়োজিত  মানববন্ধনে উপরোক্ত সুপারিশ জানানো হয়।
 
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, গ্রীণবেল্ট ট্রাস্টের মহাপরিচালক জসিম কাতাবী, লোক সঙ্গীত সম্রাট কুদ্দুস বয়াতী, ডুমনী অধিবাসী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ হোসেন, পবার কোর্ডিনেটর গাজী লুৎফুল কবীর সুমন, নগরবাসী সংগঠনের হাজী আনসার আলী, জালালাবাদ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহরিয়ার। এছাড়াও নৌকা, জাল, কাস্তে, লাঙ্গল, মাছ ধরার বর্শা সহ বিভিন্ন মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে মাঝি-জেলে, কৃষক সহ বিপুল সংখ্যক ছাত্র জনতা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। 
 
আবু নাসের খান বলেন, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট্য কতৃপক্ষ খালগুলো সংস্কারের নামে বক্্র কালভার্ট নির্মাণ, খালের উপর সড়ক নির্মাণ করছে। যা খালের স্বাভাবিক গতি প্রবাহে বিঘœ সৃষ্টি করছে। আমার মনে করি এ রূপ সংস্কার খাল দখলের সামিল। এছাড়া স্বার্থন্বেষী মহলের প্ররোচনায় এবং কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শীতায় উন্নয়ন ও পরিকল্পনার নামে ঢাকার অধিকাংশ খালই আজ সুয়্যারেজ লাইন বানানোর প্রক্রিয়াধীন। আমার এই ধরনের উন্নয়নের নিন্দা জ্ঞাপন করছি। 
 
বক্তারা আরো বলেন, পূর্বে এই শহরে ৪৩ টি খাল ছিল। বেশিরভাগ খালের প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটের বেশি।স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র তিন যুগের ব্যবধানে ২৫টি খাল বিলুপ্ত হয়েছে। যে ১৮ টি খালের অস্তিত্ব আছে তা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।  সেই সাথে পাল¬া দিয়ে ভরাট-দখল করছে খাল পাড়ের স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু ও স্বার্থান্বেষী মহল। এ সকল ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে খালগুলোকে রক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া ঋণ প্রদানকারী গোষ্ঠী ও সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিবেশ বিষয়ক উদাসীনতাও আজ খালগুলো ধ্বংসের অন্যতম কারণ।    
 
খাল ও জলাশয় উদ্ধার বা সংস্কার কেবল মহানগরীর পানি ও বর্জ্য চলাচলের জন্যই প্রয়োজন এমন নয়; জলাবদ্ধতা সমস্যা ছাড়াও জলাশয়বিহীন রাজধানী এই জনপদ ও জনজীবনের জন্যই বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। দেখা দিবে ভূমিকম্প, ক্ষতিগ্রস্থ হবে জীববৈচিত্র । ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধি সহ নানা পরিবেশ সংকটের জন্ম দেবে এবং ইতোমধ্যে সংকট শুরু হয়ে গেছে। যা শুধু পরিবেশ নয় অর্থনীতির উপরও  নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই অবিলম্বে ডুমনী, আতির খাল ও হাইক্কার খাল রক্ষায় সরকারী পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি।