শতবর্ষী সিক্কাটুলি পুকুর সহ অন্যান্য সরকারী সম্পত্তি বেহাত হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক
শতবর্ষী সিক্কাটুলি পুকুর সহ অন্যান্য সরকারী সম্পত্তি
বেহাত হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক
 
পুরানো ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী সিক্কাটুলী পুকুরটি কতিপয় ভূমিদস্যু ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে ভরাট করে বিল্ডিং করার পায়তারা চালাচ্ছে। সম্প্রতি কতিপয় ব্যক্তি পুকুরটি চুড়ান্তভাবে নিজ মালিকানায় নেওয়ার নিমিত্তে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করে। সিটি কর্পোরেশন মামলার বিপরীতে আত্বপক্ষ সমর্থনের যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় মাত্র চার মাসে একটি দেওযানী মামলার নিষ্পত্তি হয় এবং পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তি হিসেবে রায় প্রদান করা হয়। সরকারী/ওয়াক্ফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানায় রুপান্তরিত হওয়া এবং দায়েরকৃত মামালার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের জোরালো ভূমিকা গ্রহনে গাফিলতির বিষয়টি জনমনে সন্দেহের উদ্রেক করেছে। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মামলা সংক্রান্ত ব্যপারে রহস্যজনক আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন এবং পুকুর সহ অন্যান্য সরকারী সম্পত্তি বেহাত হওয়ার বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। আজ সকাল ১১:০০টায় ঢাকা নগর ভবনের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে এবং সিক্কাটুলির সর্বস্তরের অধিবাসীদের উপস্থিতিতে এক জনসমাবেশে বক্তাগন এ অভিমত ব্যক্ত করেন এবং দাবী জানান এবং সমাবেশ শেষে সিটি মেয়রের কাছে স্মারকলিপি প্রদানে মেয়র মহোদয় স্মারকলিপি গ্রহন করেন।  
 
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পবা’র সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, সিক্কাটুলীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন, মুসলিম যুব সংঘের সভাপতি মোস্তফা আহমেদÑসাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন মাসুম, পঞ্চায়েত কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শুকুর মোহাম্মদ, মুসলিম যুব সংঘের কোষাধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ। সমাবেশে সিক্কাটুলির অসংখ্য অধিবাসী উপস্থিত ছিলেন।   
 
দীর্ঘদিন যাবত এই পুকুরটি ওয়াক্ফ সম্পত্তি হিসেবে এলাকার অসংখ্য মানুষ ব্যবহার করে আসছে। যে পুকুরটি শত বছর ধরে জনসাধারণ ব্যবহার করে আসছে তা হঠাৎ করে ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তি করার অভিপ্রায় সম্পূর্ন অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুকুরটি এলাকার একমাত্র পকুর এবং দীর্ঘদিন ধরে আশেপাশের অসংখ্য মানুষ পুকুরটিতে গোসল, ছেলেমেয়েদের সাঁতারকাটা সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পাদন করে আসছে। এই পুকুরটি এলাকার বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার হাত থেকে এলাকাবাসীদের রক্ষা করে ও ভূগর্ভস্থ পানির পুনঃভরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে চলেছে। অত্র এলাকায় অগ্নিকান্ডের মতো দূর্যোগের সময় এ পুকুরটির পানিই মূল ভরসা। 
 
ঢাকা শহরের বাড়ছে জনসংখ্যা, বৃদ্ধি পাচ্ছে পানির চাহিদা। এই বাড়ন্ত চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন বসানো হচ্ছে অসংখ্য গভীর নলকুপ। ঢাকার অভ্যন্তরের পুকুর, খাল, ডোবা-নালাগুলি ভরাট করে শুধুই বিল্ডিং এবং ইট-পাথরের কংক্রিট বিছানোর ফলে বৃষ্টির পানি তা ভেদ করে মাটির তলদেশে প্রবেশ করতে না পারায় পানির পুন:ভরণ হচ্ছে না। ঢাকা শহরের পানির চাহিদার ৯০ শতাংশ মিটছে গভীর নলকুপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে। গবেষণা মতে প্রতি বছর ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে ৫-৬ মিটার। যদি ঢাকার পুকুর ও খাল সংরক্ষণ করা হতো তাহলে আজ পানির জন্য মানুষকে অসহনীয় দূর্ভোগে পোহাতে হতো না। বিদেশ হতে অনেক কিছুই আমদানী করা সম্ভব কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনিয় পানি আমদানি কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফলে ঢাকা শহরে যেসমস্ত পুকুর-খাল এখনও অবশিষ্ট আছে তা সংরক্ষণ করার কোন বিকল্প নাই।     
 
তাছাড়া সিক্কাটুলির এই পুকুর দখলের প্রচেষ্টা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং “মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ সনের ৩৬ নং আইন” এর পরিপন্থী এবং ইধহমধষ ঢ়ড়হফ অপঃ-১৮৬৪ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই সিক্কাটুলি পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানার সম্পত্তি হতে রক্ষা কল্পে সিটি মেয়র কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানানো হয়। সেই সাথে আরো দাবী জানানো হয়- (১) শতবর্ষী সিক্কাটুলি পুকুর সহ অন্যান্য সরকারী সম্পত্তি বেহাত হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক; (২) দখলদার দুষ্টচক্রের হাত থেকে পুকুরটি উদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা; (৩) পুকুরটি সংস্কার ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ গ্রহণ; (৪) পুকুরের সামনের ময়লার স্তুপ পরিস্কার ও ডাস্টবিন অপসারণ করা।