মার্কেট নয় খেলার মাঠ চাই নগরে বসবাসোপযোগী পরিবেশের জন্য জলাধার ও উন্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করুন
মার্কেট নয় খেলার মাঠ চাই
নগরে বসবাসোপযোগী পরিবেশের জন্য
জলাধার ও উন্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করুন
 
নগরে বসবাসোপযোগী পরিবেশের জন্য ঢাকাসহ বাংলাদেশের সকল ছোট, বড় ও মাঝারী শহরগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলাধার ও উন্মূক্ত স্থান নিশ্চিত করতে প্রচলিত আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা জরুরী। দরকার হলে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংশোধন ও প্রয়োজনে নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে “বসবাসযোগ্য নগরী: জলাধার-উন্মূক্ত স্থানের অপরিহার্য ও করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
বক্তারা বলেন, নগরে মানুষে মানুষে সামাজিক আদান প্রদানের জন্য প্রয়োজন উম্মুক্ত স্থান, পার্ক, খেলার মাঠ। কিন্তু ঢাকা নগরীতে এ সকল সুবিধা ধ্বংস করা হচ্ছে। ঢাকায় একটি অংশের শিশুরদের বিনোদনের কোন সুযোগ নেই অন্য শিশুরাও চার দেয়ালে বন্দী, বড় হচ্ছে কম্পিউটার আর ভিডিও গেমসের খেলে। ফলে শিশুদের পূর্ণাঙ্গ মানসিক ও শারিরীক বিকাশ ঘটছে না। এছাড়া তারা নানা ধরনের সামাজিক অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। খেলাধূলার সুযোগের অভাবে শিশু-কিশোরদের মাঝে অতিরিক্ত মোটা হওয়াসহ নানা অসুখ বিসূখে আক্রান্তের প্রবণতাও বাড়ছে। 
 
বক্তারা বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে ৪৭ টি পার্কের মধ্যে কয়েকটি পার্কের অস্তিত্ব কোন রকমে টিকে আছে। যেগুলি আছে তাও আবার দখল হয়েছে পানির পাম্প, প্রাইভেট গাড়ীর পার্কিং, মার্কেট, গ্যারেজসহ নানা কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজউক নগর পরিকল্পনার প্রাণ হিসেবে কাজ করার কথা থাকলেও মানুষের বিনোদন, সামাজিকতা, মানসিক ও শারিরীক বিকাশের সুবিধা নিশ্চিত করতে এই সংস্থাটির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঢাকা শহরের মাত্র ২% লোক প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহার করে, বাকী ৯৮% মানুষের গাড়ী নেই। অথচ ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় প্রতিটি বাড়ী ও মার্কেটে সুনির্দিষ্ট ও সুপষ্টভাবে প্রাইভেট গাড়ীর রাখার জন্য জায়গা রাখার বিধান রাখা হয়েছে। অথচ প্রতিটি বাড়ীতে শিশুদের খেলাধূলা ও অন্যদের পারস্পরিক সাক্ষাতের জায়গা রাখার কথা উল্লেখ নেই। অনুমোদিত এমনকি ডিটেইল এরিয়া প্লান-এ প্রতিটি এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা রাখার দিক-নির্দেশনা নেই। 
 
বক্তারা বলেন, ঢাকা ওয়াসার হিসেবমতে একসময় ঢাকায় ৪৭টি খাল ছিল, এখন আছে মাত্র ২৬টি। সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগে বাকী খালগুলিকে হত্যা করে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক, ড্রেন ও বক্স কালভার্ট। বর্তমানে খালের দুই ধার বাধাই করে খালকে রক্ষা করা নামান্তরে খাল ড্রেনে পরিণত হচ্ছে। খালের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। ঢাকায় ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে পুকুরের সংখ্যা ছিল ২ হাজার, ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালে তা কমে দাড়ায় ১ হাজার ২ শতে। বর্তমানে হাতেগোনা যে কয়েকটি পুকুর আছে তার অস্তিত্বও সংকটে। এছাড়া ঢাকার চারপাশে যে নদীগুলি রয়েছে সেগুলিও আজ দখল ও দূষণের শিকার। লাগামহীন আবাসন ব্যবসা, নিয়ন্ত্রনহীন শিল্প-কারখানা এবং শহরের বর্জ্য ফেলার কারণেই নদীগুলি দখল ও দূষণের শিকার। নগরীকে বসবাসযোগ্য করতে নদী-খাল-বিল-পুকুরসহ সব ধরনের জলাধার রক্ষায় সরকারে পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
বক্তারা বিশুদ্ধ পানির উৎসঃ নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় বিদ্যমান আইন প্রয়োগ এবং প্রয়োজনে সংশোধন করা; সরকারী ও বেসরকারী যে কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের পূর্বে পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা; পুকুর, দীঘি, খাল-বিল-নদীসহ যে কোন জলাশয় ভরাট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; নদী, খাল, বিলসহ যে কোন ধরনের জলাশয়কে পেছনে দিয়ে এ ধরনের স্থাপনা বা পরিকল্পনা নিষিদ্ধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; নদী ও খালের দুইপারে মানুষের বিনোদনের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা রাখা; খালগুলো উদ্ধার ও সংস্কার করে নৌ-পথগুলো চালু ও সম্প্রসারণ করা; ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করে পার্কিং এর পরিবর্তে শিশুদের খেলাধূলার জায়গা রাখার বিধান করা; প্রতিটি এলাকায় মাঠ, পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানগুলো সংরক্ষন  ও ব্যবহার উপযোগী করা; ডিটেইল এরিয়া চুড়ান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে, জলাধার সংরক্ষন ও উম্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করাসহ সুপষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করা হয়। 
 
গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স এর সভাপতি অধ্যাপক ড. সারোয়ার জাহান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান.................., ........................... 
 
ধন্যবাদসহ
 
আবারো মিরপুর ১২ নং এ ব্লকের লাল মাঠটি দখল হচ্ছে। আবারো মাঠ ধ্বংস করে পাকা মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। বিগত দিনে মাঠটি দখলের উপক্রম হওয়ায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও এলাকাবাসীর তিব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ফলে মাঠটি রক্ষা হয়েছিল। কিন্তু আবারো পূর্বের ধারাবাহিকতায় মাঠটি ধ্বংস করে মার্কেট নির্মাণ ইতোমধ্যে শুরু করেছে কতিপয় দুস্কৃতকারী ভূমিদস্যুরা। এ মাঠটি এলাকার একমাত্র উন্মুক্ত স্থান ও অসংখ্য শিশু কিশোরদের খেলার জায়গা এবং ঈদের জামাতও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। এ মাঠের আশেপাশে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত হওয়ায় স্কুলগুলির বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা এখানে কাঁচাবাজার বসিয়ে মাঠটির পশ্চিম পাশ দখল করে রেখেছে এবং তারা সাইনবোর্ড লাগিয়ে স্থায়ীভাবে দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। আজ ৩১ অক্টোবর/০৯ সকাল ১১:০০টায় মিরপুর ১২ নং এ ব্লকের লাল মাঠ প্রাঙ্গনে পবা ও বর্ণক সমাজ কল্যাণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এর যৌথ উদ্যোগে জনসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জনসমাবেশে  আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র/ছাত্রী ও সর্বস্তরের জনসাধারণ হাতে হাত রেখে মাঠটিকে ৩ ঘন্টা যাবত ঘিরে রাখে এবং যে কোন মূল্যে মাঠ রক্ষার শপথ গ্রহণ করে। 
জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ঢাকা ১৬ নং সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লা, বর্ণক সমাজ কল্যাণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খাঁন বাবু, সাধারণ সম্পাদক জাফরুল আহসান বাবুল, ভাইস প্রেসিডেন্ট সালাম চৌধুরী, বিশিষ্ঠ লোক সঙ্গীত শিল্পী কুদ্দুস বয়াতী, পবা’র সহ: সম্পাদক তৌফিকুর রহমান সেন্টু, সাবেক জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড় ইমতিয়াজ সুলতান জনি, মুসলিম বাজার কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ সেলিম, অভিনেতা মোঃ মনজুর হোসেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও ছাত্র সংগঠণের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।     
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেনÑ লাল মাঠটির বেশ কিছু অংশ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। অবিলম্বে এ মাঠ থেকে মার্কেট উচ্ছেদ করে মাঠের জায়গা মাঠকে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। কোন সময় বেধে দিয়ে উচ্ছেদ নয় এখনি মাঠের দখল অংশ মুক্ত করতে হবে এবং দখলদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ঢাকা মহানগরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খোলা জায়গা ও খেলার মাঠ নেই। যেগুলো আছে তা দুর্নীতিবাজ ভূমিদস্যুরা দখল করছে। ফলে শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশাপাশি সামাজিক বন্ধন থেকে মানুষ দুরে সরে যাচ্ছে। যা আমাদের সার্বিক পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। 
ঢাকা ১৬ নং সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লাÑলাল মাঠের জায়গায় কোন প্রকার মার্কেট নির্মাণ বরদাস্ত করা হবেনা। লাল মাঠ রক্ষার দাবীর প্রতি আমি সমর্থন জ্ঞাপন করছি এবং এ মাঠ দখল মুক্ত করতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আসন্ন ঈদের পরে দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
বর্ণক সমাজ কল্যাণ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এর সভাপতি-সেক্রেটারী-সহ-সভাপতিগণ বলেনÑ আমাদের এ এলাকার প্রিয় মাঠটি রক্ষার্থে কতিপয় ভূদিস্যুদের প্রতিরোধে যে কোন আন্দোলন ও সংগ্রামের জন্য আমরা প্রস্তুত। 
সাবেক জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড় ইমতিয়াজ সুলতান জনি বলেন- এ মাঠের ধুলাবালি আমার জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে ওঠায় ভুমিকা রেখেছে তাই এ মাঠ দখল মুক্ত করতে আমার সর্বাত্বক সহযোগিতা থাকবে।  
মিরপুর ১২ নং লাল মাঠটি রক্ষায় এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও এলাকাবাসী এ মাঠ দখলের প্রতিবাদে একাত্বতা প্রকাশ করছে। সাথে সাথে হাজার হাজার কন্ঠের উচ্চারণ “অবিলম্বে এ মাঠ দখলমুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করুন।