কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণসহ সবুজ বলয় গড়ে তোলা হোক

কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণসহ সবুজ বলয় গড়ে তোলা হোক

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার দেশের প্রাচীনতম এবং সর্ববৃহৎ কারাগার। ঐতিহাসিক এই কারাগার থেকে বন্দীদের কেরাণীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তরিত করা হবে। কারাগার স্থানান্তরিত হওয়ার পর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড়স্থ এই কারাগারের স্থাপনা সংরক্ষণ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তেমনিভাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঐতিহ্য সম্মুন্নত রেখে পরিত্যক্ত জায়গায় ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার মানুষের সামাজিক প্রয়োজনে শিশুপার্ক, খেলার মাঠ, পুকুর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ সবুজ বলয় গড়ে তোলতে হবে। ২১ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার, সকাল ১১টায় পরিবেশবাদী ও সামাজিক ২৫ টি সংগঠনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা উক্ত দাবী জানান।

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাসফের সভাপতি ও পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি আতিক মোরশেদ, মর্ডাণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো: মুসা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান, ইয়থ সানের সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ অনির্বাণ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো: বাবুল, বাংলাদেশ বাই সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সুবন্ধন সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মো: হাবীব, বাংলাদেশ কবি পরিষদের মো: ইব্রাহীম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সর্বসাধারণের ব্যবহার উপযোগী উম্মুক্ত এলাকা জনসাধারণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করে এবং সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য, শান্তি, কল্যাণ ও মঙ্গল নিশ্চিত করে। ঢাকা পৃথিবীর জনঘনত্বসম্পন্ন নগরীর একটি। এখানে উম্মুক্ত এলাকা একটি অপরিহার্য ও দুর্লভ সম্পদ।  দ্রুত নগরায়নের সাথে সাথে খোলা জায়গার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ঢাকার উম্মুক্ত স্থানের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বলপূর্বক দখল। সরকার নিজেই ঢাকার একাধিক পার্ক ও উম্মুক্ত স্থান গ্রাস করেছে, যেমন- টিকাটুলি পার্ক, উত্তরা ১ নং সেক্টর পার্ক, মোহাম্মদপুরস্থ শহীদ পার্ক, আজিমপুর পার্ক, ইত্যার্দি। এছাড়াও অনেকগুলো পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের অংশবিশেষ কমিউনিটি সেন্টার ও কমিশনারের অফিসের জন্য দখল করা হয়েছে, যেমন-নবাবগঞ্জ পার্ক, যাত্রাবাড়ি ক্রসিং পার্ক, নয়াটোলা শিশু পার্ক, লালমাটিয়া নিউ কলোনী পার্ক, পান্থকুঞ্জ পার্ক, ইত্যাদি। এটা খুবই দুঃখজনক যে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নিজেই ঢাকার মূল্যবান পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের বিষয়ে সচেতন নয়। বর্তমানে একটি আদর্শ নগরীর জন্য ২৫% খোলা এলাকা রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পুরানো ঢাকায় ৫% এবং নতুন ঢাকায় ১২% এলাকা সবুজ ও খোলা (ঢাকা শহর কাঠামো পরিকল্পনা ১৯৯৫)। ঢাকা স্ট্রাকচার প্লানে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ২০% খোলা এলাকা রাখা হয়েছে (ডিএমডিপি ১৯৯৫)। কিন্তু বাস্তবে এলক্ষ্যে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। বরং এসব এলাকা সরকারি ও বেসরকারিভাবে দখলের ফলে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে।

বর্তমান সরকার নাজিমুদ্দিন রোড়স্থ কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করছে। কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান কারা স্মৃতি যাদুঘর ও জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি যাদুঘর দুটি সংরক্ষণসহ পার্ক, জলাধার, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে একবিংশ শতাব্দির উপযোগী সবুজ বলয় গড়ে তোলা প্রয়োজন। যা পুরান ঢাকাসহ ঢাকা মহানগরীর পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। একই সাথে নগরবাসীর জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে, সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করবেএবং সামাজিক অস্থিরতা দূরীকরণে সহায়ক ভ’মিকা পালন করবে।


পুরান ঢাকাসহ ঢাকা মহানগরীর পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান কারা স্মৃতি যাদুঘর ও জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি যাদুঘর দুটি সংরক্ষণসহ পার্ক, জলাধার, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে একবিংশ শতাব্দির উপযোগী সবুজ বলয় গড়ে তোলা।