গুড়ো দুধে মেলামিন ঃ জনস্বাস্থ্যের সমস্যা সরকার এ দায় এড়াতে পারেনা দুধে মেলামিন বিষয়টি বানিজ্য মন্ত্রণালয় নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুরাহা হওয়া উচিৎ
গুড়ো দুধে মেলামিন ঃ জনস্বাস্থ্যের সমস্যা সরকার এ দায় এড়াতে পারেনা
দুধে মেলামিন বিষয়টি বানিজ্য মন্ত্রণালয় নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুরাহা হওয়া উচিৎ
 
দুধে মেলামিন মেশানোর বা অন্যান্য খাদ্যে বিষাক্ত দ্রব্যের উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যোর জন্য মারাত্বক হুমকি। তাই বিষয়টি মুখ্যত জনস্বাস্থ্যের। বর্তমানে বানিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগকে উপেক্ষা করায় আমরা খুবই মর্মাহত। যেভাবে দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তাতেও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন দুধে মেলামিন বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি দুধে মেলামিন বিষয়টি বানিজ্য মন্ত্রণালয় নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুরাহা হওয়া উচিৎ। আজ ২২ অক্টোবর ২০০৮ বুধবার বেলা ১২ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে পরিবেশ বাাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মাহমুদ, পবা এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পবা এর বিষমুক্ত খাদ্য আন্দোলন এর আহ্বায়ক সৈয়দ আবুল মকসুদ।
 
গুড়োদুধে মেলামিনের কথা আমরা সকলেরই জানি। আমাদের সন্তানদের গুড়োদুধ খাওয়াবো কি না? এ বিষয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। কিন্তু প্রথমেই আমাদের বিবেচনা করা প্রয়োজন আজকের এই অবস্থায় আসার অবস্থা কেন হয়েছে। আমরা এই বিবেচনা আগামী দিনে আমরা কি করবো এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবে। দেশের বাজারে একের পর এক গুড়োদুধ প্রবেশ করেছে নিয়ন্ত্রতহীনভাবে। সরকারের মাননিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটির পক্ষে এই জটিল বিষয়টি নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানিগুলো অনুমোদন ব্যতীতই বাজারজাত করেছে খাদ্য দ্রব্য। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে অর্থনৈতিক দোহাই দিয়ে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি অবহেলা করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো অন্যায়ভাবে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে দেশ হতে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে। এত কিছুর পরও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং কোম্পানিগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে দেশীয় বিশেজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে বিদেশে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হচ্ছে। যা প্রকান্তে কোম্পানিগুলোর পরিকল্পিত কার্যক্রমের একটি অংশ। 
 
দেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য রক্ষা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হওয়া স্বত্ত্বেও কোম্পানিগুলোর নিকট জিম্নি থাকায় সরকার এ ধরনের জীবননাশী কর্মকান্ডের পরও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয় বিগত দিনে শিশুদের জন্য মায়ের দুধ ও সম্পুরক খাদ্য গ্রহনে উৎসাহী করার পরিবর্তে কোম্পানিগুলো অনিয়ন্ত্রিত প্রচারণা কার্যক্রমে নীরবতার মাধ্যমে পরোক্ষ সমর্থন যুগিয়ে আসছে। কোম্পানিগুলোর অনৈতিক ও ভ্রান্ত প্রলূব্ধকরন বিজ্ঞাপন মানুষকে এ ধরনের খাদ্যগ্রহনে উৎসাহী করেছে। কোম্পানিগুলোর নীতিহীন ও ভ্রান্ত প্রচারণা বন্ধের লক্ষ্যেও কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। 
 
সুপারিশসমূহঃ ১. অবিলম্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা, যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞসহ পরিবেশবাদীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা; ২. দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভোক্তা অধিকার আইন অবিলম্বে প্রনয়ণ ও কার্যকর করা; ৩.  গুড়ো দুধে মেলামিন ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স বাতিলসহ, কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা; ৪. কোম্পানিগুলোর অনৈতিক, ভ্রান্ত, প্রলুদ্ধকরণ বিজ্ঞাপন বন্ধ করা; ৫. বিদেশ হতে আগত সকল খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষা করা; ৬. বিদেশী এ ধরনের বিলাসী খাদ্য গ্রহনের লক্ষ্যে মানুষদের নিরুৎসাহী করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ; ৭. বিএসটিআইকে শক্তিশালী করা; ৮. শিশুদের জন্য মায়ের দুধ ও সম্পুরক খাদ্য গ্রহনে উৎসাহী করার লক্ষ্যে সরকারীভাবে ব্যাপক প্রচারণা গ্রহণ; ৯. শিশুদের গুড়ো দুধ খেতে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা। 
 
মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা করার অধিকার সরকার কাউকে প্রদান করতে পারে না। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা সরকারের সাংবিধানিক দায়। আর এ দায় পালনে ব্যর্থ হলে সরকার সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে দুষ্ট হবেন। আমরা আশা করি সরকার দেশের মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।