জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় পাবলিক টয়লেট বৃদ্ধি ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ব্যবহৃত পানি পূনর্ব্যবহার এবং পয়ঃবর্জ্যরে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা জরুরি
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় পাবলিক টয়লেট বৃদ্ধি ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা,
ব্যবহৃত পানি পূনর্ব্যবহার এবং পয়ঃবর্জ্যরে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা জরুরি
 
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী। সারা দেশের মানুষকে নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী সংগঠন, উন্নয়ন সহযোগী, ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলো সারা দেশে কাজ করছে। কিন্তু নির্মম সত্য হচেছ আমাদের শহর অঞ্চলের পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। ঢাকার বেশীরভাগ পয়ঃবর্জ্য বুড়িগঙ্গা বা তুরাগ নদীতে গিয়ে পড়ে যার ফলে প্রতিনিয়তই পানি ও পরিবেশ দূষিত হয়ে নানাবিধ রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় লক্ষ্যে ঢাকা তথা সারা দেশের পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা আয়োজিত ”জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় পাবলিক টয়লেটের গুরুত্ব ও করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
ঢাকা শহরের উপর পরিচালিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে মূল প্রবন্ধে উলে¬খ করা হয় জরিপে অংশগ্রহণকারী ১০০ জনের মধ্যে “পাবলিক টয়লেট” ব্যবহার করে মাত্র ৪৮ জন অর্থাৎ ৪৮%। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে যে সকল বিষয়গুলো উলে¬খ্য করেছেন তা হলো: ১) পরিচ্ছন্নতার অভাব, ২) স্বাস্থ্য সম্মত নয়/ অস্বাস্থ্যকর, ৩) বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়, ৪) কাক্সিক্ষত স্থানে “টয়লেট” না থাকা, ইত্যাদি। মহিলা উত্তরদাতারা ব্যবহার না করার কারনগুলো উলে¬খ করেন ১)নিরাপত্তার অভাব ২) পর্যাপ্ত “পর্দা”র অভাব, ৩ )পুরুষ ব্যবহারকারীদের আধিক্য; ৪)স্বভাবজাত লজ্জাবোধ, ইত্যাদি। কম সংখ্যক বার “টয়লেট” ব্যবহার করার কারণে নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১০% প্রতিবন্ধী হলেও পাবলিক টয়লেটগুলোতে তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। একটি উলে¬খ্যযোগ্য সংখ্যক লোক যত্রতত্র স্থানে টয়লেট করে থাকে।  পাবলিক টয়লেট এর জন্য উপযুক্ত স্থান সম্পর্কে জনগন বলেন শহরে পাবলিক টয়লেটগুলো স্বাভাবিকভাবে দৃষ্টিগোচর, অভিগমনযোগ্য এবং  যেখানে বেশী মানুষের সমাগম হয় এমন স্থানে নির্মাণ প্রয়োজন। যেমন : বাস, লঞ্চ, রেলষ্টেশন বা টার্মিনাল, পার্ক, বাজার, হাসপাতাল, মার্কেট, খেলার মাঠ ইত্যাদি, প্রধান সড়কের পাশে, সভাস্থল, অস্থায়ী বাজার, জনসমাগমপূর্ণ স্থান ইত্যাদি। 
 
আলোচকগণ বলেন, পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে সর্বত্র ইকোস্যান পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে মলমূত্র থেকে উন্নতমানের জৈব সার তৈরি করা যায়। যা ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। এছাড়া ইকোস্যান পদ্ধতির মাধ্যমে ভূ-গর্ভের পানির চাহিদা কমিয়ে ভূপৃষ্ঠের পানি কিভাবে ব্যবহার করা যায়। এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পূর্নব্যবহার করে ঢাকা মহানগরীর পানির চাহিদা অনেকাংশে হ্রাস করা যাবে। ঢাকা শহরের বহুতল ভবন গুলোতে প্রচুর পরিমান পানি অপচয় হয়। ভবনগুলোতে একবার টয়লেট ব্যবহারে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লিটার পানি অপচয় করছে। এছাড়া কাপড় ধোয়া, রান্নাবান্না, গোসলে প্রয়োজনের তুলোনায় প্রচুর পানি ব্যবহৃত হচ্ছে।  কাপড় ধোয়ার পানি, রান্নাবান্না এবং গোসলের পানিকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্নব্যবহার করে পানির অপচয় কমাতে পারি। এছাড়া ঢাকা শহরের আশেপাশে যে সকল নদ-নদী, খাল-বিল আছে তার পানি পরিশোধনের মাধ্যমে পূর্নব্যবহার করে পানির ঘাটতি হ্রাস করা সম্ভব। 
 
বক্তারা ইকোস্যানিটেশন পদ্ধতির মাধ্যমের পয়ঃবর্জ্য ও পানিকে পূর্ণব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকার কর্তৃক উন্নত দেশের পরিকল্পণা পর্যালোচনা এবং দক্ষ নগর পরিকল্পণাবিদদের পরামর্শের আলোকে “পাবলিক টয়লেট” এর উন্নয়ণ পদক্ষেপ গ্রহণ, বাজার, মার্কেট পে¬স, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ যেখানে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক গন্ডির বাইরে মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করে এমন স্থান বা প্রতিষ্ঠানগুলোতে “পাবলিক টয়লেট” এর ব্যবহার সংক্রান্ত সরকারী নীতিমালা প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ন, পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়ানো এবং এর বাজেট বৃদ্ধি পাশাপাশি বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে “পাবলিক টয়লেট” ব্যবহার করতে সুযোগ সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান। 
 
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তেল-গ্যাস-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদূল¬াহ, বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডীন ড. সারোয়ার জাহান, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বস্তি উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তা খন্দকার মিল¬াতুল ইসলাম, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান জনাব আবু নাসের খান। উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র পাবলিক টয়লেট বিয়য়ক টিম এর যুগ্ম আহ্বায়ক ফখরুল ফেরদৌস এবং সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসাসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি রশীদ-ই-মাহবুব।