কমলাপুর রেলস্টেশন স্থানান্তর করা হলে যানজট বৃদ্ধি পাবে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
কমলাপুর রেলস্টেশন স্থানান্তর করা হলে যানজট বৃদ্ধি পাবে
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
 
কমলাপুর রেল স্টেশন প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। রেল স্টেশন ঢাকা বাইরে স্থানান্তর করা হলে এ  সকল যাত্রীরা শহরে আগমনের জন্য অন্যান্য কোন বাহন ব্যবহার করবে, যা ঢাকার যানজটকে আরো বৃদ্ধি হবে। কমলাপুর রেলস্টেশন স্থানান্তর হবে আত্মঘাতী কর্মকান্ড। আজ  জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে পবা ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এম এম শফিউল্লাহ-র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য, জনাব ফজলে হোসেন বাদসা, সংসদ সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু, বাংলাদেশ ইন্সট্রিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি প্রফেসর সারোয়ার জাহান, আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ার হোসেন এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাজমুল করিম সবুজ। 
 
ঢাকার যানজটের জন্য রেল ক্রসিংগুলোর দায়ীর এ মতের বিরোধীতা করে বক্তারা বলেন, সড়ক নির্ভর যানবাহনের অগ্রাধিকারের মানসিকতার কারণে রেলকে দায়ী করা হয়। অনেক সড়ক রয়েছে যেখানে রেল ও রিকশা নেই অথচ যানজট হচ্ছে। প্রবন্ধ উপস্থাপক নাজমূল করিম বলেন, আজিমপুর হতে আবদুল্লাহপুরের রাস্তায় প্রায় ৩০টি রোড ইন্টার সেকশন রয়েছে এবং রেলক্রসিং রয়েছে মাত্র ২টি। প্রতিটি রোড ইন্টারক্রসিং এ একটি সড়কের গাড়ীতে দাঁড়াতে হয়। অথচ ২টি রেল ক্রসিংকে যানজটের কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। যানজটের কারণ হিসেবে পাবলিক পরিবহনের স্বল্পতা ও প্রাইভেট গাড়ী অধিক্যকে দায়ী করা হয়। 
 
বক্তারা বলেন, শত বছরের পুরাতন রেল বিধান অনুসারে রেলের উপর কোন স্থাপনা তৈরি ক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন হয়। সড়ক কেন্দ্রিক পরিবহন পরিকল্পনার উম্মাদনায় অপরিকল্পিত সড়ক তৈরির কারণে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ক্রসিং। রেলের অনুমোদন ও পরিকল্পনা বিহীন এ সকল রেলক্রসিং গড়ে উঠায়, অনেক ক্ষেত্রে রেলের পক্ষে এ সকল ক্রসিংকের রক্ষনাবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ফলে অহরহ ঘটছে দূঘর্টনা। অপরিকল্পিত সড়ক তৈরির সমস্যার দায় চাপানো হচ্ছ্ েরেলের উপর।  এসব ক্রসিং এ গেট নির্মাণ এবং রক্ষনাবেক্ষণের দায় দায়িত্ব খরচ সড়ক বিভাগের উপর অর্পন করা উচিত। 
 
বক্তারা বলেন বাংলাদেশ জনসংখ্যার তুলনায় ভূমির পরিমান কম। প্রতিবছর সড়ক, শিল্প, বাড়ী ঘর স্থাপনের কারণে ভূমি কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণে ভূমি হ্রাস পাওয়া দেশের খাদ্য সংকট বৃদ্ধি পাবে। কম জায়গায় অধিক যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলকে অগ্রাধিকার প্রদান করা উচিত। রেল অগ্রাধিকার প্রদান করা হলে যানজট, পরিবেশ দূষণ, দ্রব্যমূল্য হ্রাস পাবে। 
 
সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদসা বলেন, ঋণপ্রদানী গোষ্ঠীর কারণে রেলের বর্তমান নাজুক অবস্থা। দেশের সার্বিক উন্নয়নে রেলকে দেশের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠান করতে হবে এবং রেলের উন্নয়ন ও শক্তিশালী করণে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন মালামাল পরিবহনের রেলকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হলে দারিদ্র বিমোচন এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সংসদ সদস্য বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, রেলকে বেসরকারী করা কোন অবস্থায় উচিত নয়। বেসরকারী করণ রেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বরং রেলের সম্পদ যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে রেলের উন্নয়নে ব্যবহার করা উচিত। রেলওয়ের স্টেশন আধূনিকায়ন না করে রোলিং স্টকএর মতো প্রয়োজনীয় খাতে অর্থ বরাদ্ধ করা প্রয়োজন। তিনি বড় শহরের আশে পাশের এলাকাগুলো হতে কমিউনিটি ট্রেন বৃদ্ধির করার দাবি জানান। 
 
বক্তারা বলেন চার বা আট লেনের রাস্তা কোন সমস্যা সমাধান করবে না। বরং সড়ক নির্ভর পরিবহন ব্যবস্থা দূঘর্টনা, পরিবহন খরচ, পরিধবেশ দূষণ, দুনীতি, অপরাধসহ নানা সমস্যা বৃদ্ধি করবে। আর এ সমস্যাগুলো হ্রাসের অন্যতম উপায় সমন্বিত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। সভায় বক্তারা রেলের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন, রেলের মাষ্টার প্লান জনগনের জন্য উম্মুক্তকরণ, কমলাপুর রেলস্টেশন স্থানান্তর সংক্রান্ত চিন্তা পরিহার, রেলের বিরাষ্ট্রীয়করণের পরিকল্পনা বন্ধের সুপারিশ করেন। 
 
এ ছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল, রেল মাষ্টার প্ল্যানের স্টাডি টিমের আশরাফুল আলম সরকার, ডা: সরদার ফারুক, হিতৈষী বাংলাদেশের মোঃ সিদ্দীকুর রহমান এবং বিলস এর সমন্বকারী মোঃ কবির হোসেন।