ঢাকার ৮৭ শতাংশ খেজুর ফরমালিনযুক্ত
ঢাকার ৮৭ শতাংশ খেজুর ফরমালিনযুক্ত

বাজারে মৌসুমী ফলসহ বিভিন্ন ফলমূলের আধিক্য থাকলেও ভোক্তা সাধারণ বিদ্যমান ফল বিষমুক্ত, নিরাপদ কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। কারণ বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, ফলমূলে ফরমালিনসহ বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশানো হয়। পবা ২০১৩ সাল থেকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফলমূলের ফরমালিন পরীক্ষা করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা জনসম্মুখে তুলে ধরে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এবারও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করে দেখা যায় ৮৭ শতাংশ খেজুর ফরমালিনযুক্ত। আজ ১৮ জুন ২০১৬, সকাল ১১টায় পবা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়। 

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে এবং মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মাহবুল হক প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়- ঢাকা মহানগরে দেশী ও বিদেশী ফলে ফরমালিনের বর্তমান অবস্থা নিরুপণের লক্ষে ০৭ থেকে ১৭ জুন ২০১৬ পর্যন্ত আম, জাম, লিচু, আপেল, আঙ্গুর, মালটা, আনারস, খেজুরে ফরমালিন পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আমের ৫১টি, জামের ৬টি, লিচুর ৮টি, আপেলের ৬টি, আঙ্গুরের ৪টি, মালটার ৮টি, আনারসের ২টি ও খেজুরের ৮টি (মোট ৯৩টি) নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব ফল বিভিন্ন বাজার ও এলাকা হতে ক্রয় করে পবা কার্যালয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৮ শতাংশ আমের  এবং ৮৭ শতাংশ খেজুরের নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ফলের নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতির শতকরা হার
সময়কাল    আম    জাম    লিচু    আপেল    আঙ্গুর    মালটা    খেজুর    আনারস
১৮ জুন ২০১৬    ৮    শূণ্য    শূণ্য    শূণ্য    শূণ্য    শূণ্য    ৮৭.৫    শূণ্য
৬ জুলাই ২০১৫    শূণ্য    ৭৫    শূণ্য    শূণ্য    শূণ্য    শূণ্য    ৪০    শূণ্য
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪    ৬৭    ২৫    পরীক্ষা করা হয় নাই    ৩৯    ৫৭    ৭১    পরীক্ষা করা হয় নাই    ৮০
১৫ জুলাই ২০১৪
    ৪০    ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়    পরীক্ষা করা হয় নাই    ১৮    পরীক্ষা করা হয় নাই    ৮৩    ৬৪    পরীক্ষা করা হয় নাই
১১ জুন ২০১৪
    ৬৬    ১০০    ৯৫    ৫৯    ৮৭.৫    ৬৯    পরীক্ষা করা হয় নাই    ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়
২৮ জুলাই ২০১৩
    ৮২    পরীক্ষা করা হয় নাই    পরীক্ষা করা হয় নাই    ৫৯    ৯৫    ১০০    ৭৭    পরীক্ষা করা হয় নাই
১১ জুন ২০১৩
    ৯৪    ১০০    ১০০    ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়    ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়    ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়    পরীক্ষা করা হয় নাই    পরীক্ষা করা হয় নাই
পবা

আমাদের দেশের এক এক এলাকা এক এক ফলের জন্য প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন জাতের একই ফল বিভিন্ন সময়ে পাকে। ফল পাকার সময়ে গাছ থেকে সংগ্রহ করা হলে বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানোর প্রয়োজন হবে না। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কঠোর নজরদারি মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব। ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন দোকানে ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত রাজশাহী আমের ব্যানার লাগিয়ে জনগণকে যে প্রতারণা করা হচ্ছে সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার আইনানুগ ব্যবন্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কেউ কেউ বলে থাকেন যে বিভিন্ন ফলে প্রাকৃতিকভাবে ফরমালিন রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি যে আমাদের দেশে এ ধরনের কোন গবেষণা হয়েছে কি? না হয়ে থাকলে এ ক্ষেত্রে বিদেশী যে কোন তথ্যের উপর ভর কোন মন্তব্য করা সঠিক হবে না। অনেকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ফরমালিন, কার্বাইড ও কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাবকে খাটো করে দেখার চেষ্টা করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি এসব কেমিক্যালমিশ্রিত খাবারে ক্যান্সারসহ কিডনী ও লিভারের জটিল রোগ হতে পারে।

করণীয়
1  খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত ও রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদানই যথেষ্ট নয়, এদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ২৫-গ ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই আইনের ২৫-গ ধারায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
2    ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। আইনের আওতায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হলেও অদ্যাবধি কর্তৃপক্ষের বাস্তব কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আইনটি বাস্তবায়নে জরুরীভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
3   ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫ দ্রুত বাস্তবায়ন করা। দেশের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ফরমালিন আমাদানি করা।
4    জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজালরোধে কোন রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
5   পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা এবং এ কাজে এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
6   বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
7   সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
8 গণমাধ্যমে প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ফরমালিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিষয়ে সচেতন করা।