অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন প্রয়োজন
অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে
রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন প্রয়োজন
 
রেল উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব। রাষ্ট্রীয় রেলের সেবামানসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেকের অভিযোগ থাকলেও স্বল্প খরচ, নিরাপদ এবং আরামদায়ক ভ্রমনের ক্ষেত্রে রেলের ভূমিকার বিষয়ে কারোই দ্বিমত নেই। পরিকল্পিতভাবে রেলের উন্নয়ন করা হলে এটি দেশের প্রধান জনপ্রিয় বাহনে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি রেলের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা প্রয়োজন। আজ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে পরিবেশ বাচাঁ আন্দোলন (পবা) এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত “অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রেলের অপরিহার্যতা ও করণীয়’’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র নীতিবিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব আবু নাসের খান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা আহছানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. মো আনোয়ারুল হোসেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. রোকসানা হাফিজ, মাসিক শিক্ষাবার্তার সম্পাদক-এ এন রশিদা, উন্নয়ন ধারার মোঃ আমিনুল রসুল, রেলওয়ে শ্রমিক নেতা মোঃ হুমায়ন রশিদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট-এর সাধারন সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, নগর পরিকল্পনা বিদ মাইনুল হোসেন, জেএফসিই এর সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে প্রমুখ। 
বক্তারা বলেন, সড়ক অপেক্ষা রেল অনেক সস্তা পরিবহন। রেলের মাধ্যমে কম খরচে অধিক পরিমান যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা সম্ভব। সড়ক পরিবহন অপেক্ষা রেলে দূর্ঘটনা, প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম। ২০০২-০৩ সালে সড়ক দূঘর্টনার কারণে বার্ষিক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান রেলে ২২৪ কোটি টাকা এবং সড়ক পথে ৪৫০০ কোটি টাকা। আমাদের এই জনবহুল দেশে এমনিতেই ভূমির সংকট রয়েছে। তাই প্রতিবছর সড়ক পথ নির্মাণের জন্য যে পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তার হাত থেকে রক্ষা পেতে রেল সম্প্রসারন জরুরী। 
আলোচকগন বলেন, নগর ব্যবস্থার বিকেন্দ্রকরণে রেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একই প্রক্রিয়ায় ঢাকার পার্শ্ববর্তী টাংগাইল, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল¬া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যদি প্রতি সকালে ট্রেনে ঢাকায় এসে অফিস করতে পারে এবং কাজ শেষে আবার তারা ফিরে যেতে পারে তাহলে ঢাকা শহরের উপর যে জনচাপ আছে তা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হবে। মানুষের কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহজ, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঢাকার অল্প কিছু মানুষকে সুবিধার দিতে ২৩ হাজার কোটি এবং ৬২৪০ কোটি টাকা খরচ করে দুইটি পাতাল রেল নির্মাণ এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে ভর্তুকী দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই পরিকল্পনা করার সুপারিশ করা হচ্ছে। অথচ সারাদেশের বিপুল মানুষকে পরিবহণ সুবিধা দেয়ার পরও স্বল্প ভর্তুকির কারণে রেলকে অলাভজনক খাত হিসেবে অবহিত করা হচ্ছে।
 
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ বলেন, আন্তজার্তিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রেলওয়ের চেয়ে সড়ক পথের উন্নয়নে বেশী আগ্রহী। দ্বিতীয়ত ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো শর্তসাপেক্ষে রেলওয়ের উন্নয়নখাতে সরকারকে ঋণ দিয়ে থাকে যা স্টেশন রি-মডেলিংয়ের মত অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। বক্তারা বলেন ঋণ প্রদানকারী গোষ্ঠীর পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রেল অলাভজনক এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঋণের টাকা যখন সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন রি-মডেলিং করা হচ্ছে, ঠিক সে সময়ে অর্থের অভাবে সিলেট-খাজাঞ্চি-ছাতক রেলপথ সংস্কার করা যাচ্ছে না, ফলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।  বাংলাদেশ রেলওয়ে যখন উন্নয়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তখন বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল রেলকে ধবংস করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিগত দিনের তুলনায় বর্তমান সময়ে রেলের বিভিন্ন সেক্টরে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি চুরি ও দূর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা বেড়ে গেছে।
 
রেল উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ, রেলওয়ে সাথে সমগ্র দেশের বন্দর ও শিল্প কারখানাগুলো সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ, রেলওয়ের সাথে সড়ক ও নৌপথের সমন্বয় ঘটানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ, রেলওয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সাহায্য বৃদ্ধি, অপ্রয়োজনীয়, ব্যক্তি স্বার্থ সংশি¬ষ্ট, বঢ়াস্তবতা বির্বজিত প্রকল্প বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, দেশীয় বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে রেল উন্নয়নে পরামর্শ প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা। রেলের সেবার মান বৃদ্ধিতে সংশি¬ষ্ট ব্যক্তিদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করার  সুপাারিশ করা হয়।