নদী সুরক্ষায় চাই একক কর্তৃত্ব সম্পন্ন নদী কমিশন
নদী সুরক্ষায় চাই একক কর্তৃত্ব সম্পন্ন নদী কমিশন
 
দেশের সকল নদী সুরক্ষায় সরকারী পদক্ষেপ গ্রহন ও হাই কোর্টের আদেশ জারি হয়েছে। বিগত বিভিন্ন সময়ের মতো বর্তমানেও অবৈধভাবে নদী দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সঠিক ভাবে সীমানা নির্ধারণ না করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। আবার নদী পাড়ের স্থাপনা ভাঙ্গার অংশ নদীতেই পতিত হচ্ছে ফলে পরোক্ষভাবে আবার নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভূমি রেকর্ডের নামে সিএস পরবর্তী এসএ ও আরএস জরিপকালে নদীর বিরাট অংশ ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডভূক্ত করা হয়েছে। নদী শাসনের নামে যত্রতত্র বাঁধ, সড়ক নির্মাণ, পর্যাপ্ত নিষ্কাশনি ব্যবস্থা না রেখেই ব্রীজ-কালভার্ট এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বসতি স্থাপন এবং নির্বিচারে শিল্পের অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে নিক্ষেপের মাধ্যমে নদীর পানি হয়ে পড়েছে বিষাক্ত, কেবলমাত্র বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নয়, সরকারী প্রতিষ্ঠানও নদী ধ্বংস করছে। আজ ২৬ জুন ২০০৯ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও জনউদ্যোগ আয়োজিত “নদী সুরক্ষা ঃ ব্যবস্থাপনা ও আইন” শীর্ষক সেমিনারে আলোচকগন-নদীগুলিকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হলে একক কর্তৃত্ব সম্পন্ন নদী কমিশন গঠনের অভিমত ব্যক্ত করেন।  
 
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর উপাচার্য ড. অধ্যাপক এ এম এম সফিউল্লাহ, অধ্যাপক অজয় রায়, পবা এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, পবা’র নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক কামাল পাশা চৌধুরী, আইইডি এর নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, রাজউক ডেপুটি সেক্রেটারী তপন কুমার নাথ, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক এবং সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ডা. রশীদ ই মাহবুব। এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন লোক সঙ্গীত সম্রাট কুদ্দুস বয়াতী, সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক রকিবুল হাসান, নদী গবেষক ড. হামিদুল হক প্রমুখ। 
 
বাংলাদেশে নদী সংরক্ষণের আইনের শাসন সেই অর্থে কার্যকর নেই বললেই চলে। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা সারা দেশের যেখানে পারে নদীর তলদেশ পর্যন্ত দখল করে নিচ্ছে। নদী সংরক্ষণের যে আইন আছে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ না করার কারণে এবং কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনার ফলে এ দখলদারিত্ব বন্ধ হচ্ছে না। ঢাকা মহানগরীর চতুর্পাশসহ সারা দেশের নদী ও জলাভূমিসমূহ জনগণের মিলিত সম্পত্তি যা খাস জমি। সমাজের একটি বিশেষ মহল এই খাসজমিসমূহ ক্রমশঃ দখল করে নেয়ায় জনগণ তাদের সম্পদের উপর অধিকার তথা ঐতিহাসিকভাবে প্রাপ্ত সুবিধা হারিয়ে ফেলছে এবং সেই সাথে সামগ্রিক পরিবেশ আশংকাজনক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ এবং মিডিয়া এই দখলবাজদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সোচ্চার হলেও জনগণের সম্পত্তি দখল রোধ করা যাচ্ছে না। এই লাগামহীন পরিস্থিতির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ভুমি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদাসীনতা। এরা ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে জাল নথি সরবরাহ করে, যার ভিত্তিতে জাল দলিল প্রস্তুত করে দুর্বৃত্তরা খাস জমির মালিক হয়ে যায় এবং নদীকে নিজের সম্পত্তি করে নেয়। 
 
নদী বাংলার রূপ, বাঙালীর জীবন, বাঙালীর ঐতিহ্যকে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের নদী ও জলাভূমি দখল রোধ ও নদী সুরক্ষার জন্য পবা সহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠন ও ব্যাক্তবর্গরা  দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছে। আশু উদ্যোগ হিসেবে সরকার, বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী মহল ও উন্নয়ন সংগঠকদের নিয়ে একটি একক কর্তৃত্ব সম্পন্ন নদী কমিশন গঠন করে বর্তমান আইনের সঠিক প্রয়োগ করার প্রতিন্ধকতা নির্ণয় করা এবং নদী রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে পবা জোর দাবী জানাই।