যানজট হ্রাসে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি

ঢাকা শহরে প্রাইভেট কারে পাঁচ শতাংশ ট্রিপ হয় এবং এজন্য সড়কের সত্তর ভাগ জায়গা দখল করে রাখে। এরপরও ঢাকা শহরে প্রতিদিন শতাধিক নতুন প্রাইভেট কারের নিবন্ধন দেওয়া হয়। এছাড়া প্রাইভেট কারের বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে পার্কিং সুবিধা, লোন সুবিধা, ফ্লাইওভার ও উড়াল সড়ক নির্মাণ এবং সড়কে অগ্রাধিকারসহ নানা সুবিধা রয়েছে। অপরদিকে বাস, রেল, নৌপথ, হাঁটা ও রিকশা এ সকল মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ চলাচল হলেও এ মাধ্যমগুলির জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয় নি। তাই অনেকেই বাধ্য হয়েই প্রাইভেট কার কিনছেন। হাঁটা, সাইকেল, রিকশার সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাইভেট কারের পার্কিং ফি বৃদ্ধি, কনজেশন চার্জ (যানজট মাশুল) আরোপ, আমদানী কর বাড়ানো, কিছু গলি রাস্তায় নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রাইভেট কারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য কার্যকরী নীতিমালা প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরী।  ৮ নভেম্বর ২০১৫, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, বিসিএইচআরডি, পরিবর্তন চাই, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, আইনের পাঠশালা, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বারসিক, প্রত্যাশা ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘যানজট হ্রাসে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা চাই’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা এ মতামত ব্যক্ত করেন।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, হাঁটা, সাইকেল, রিকশার সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রাইভেট কারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে শহরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হবে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য। যানজট হ্রাস, ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন এর মাত্রা কমিয়ে আনা এবং পার্কিং, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভারের মত অবকাঠামো ব্যয় কমিয়ে আনাটাও এ নীতিমালার উদ্দেশ্য হওয়া প্রয়োজন।

বক্তারা আরো বলেন, প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ নীতিমালায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পার্কিং ব্যবস্থাপনা, লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ, কর আরোপ এবং বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনাসহ ইত্যাদি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এজন্য দ্রুততম সময়ে প্রাইভেট কারের ব্যবহার কমানোর জন্য একদিন বেজোড় সংখ্যা এবং অন্যদিন জোড় সংখ্যার লাইসেন্স অনুযায়ী এর চলাচলের ব্যবস্থা করা, কিছু সড়কে প্রাইভেট কার চলাচল নিষিদ্ধ করা, সপ্তাহে একদিন প্রাইভেট কার চলাচল বন্ধ রাখা, কনজেশন চার্জ আরোপ ও আদায় করা যেতে পারে। এছাড়া ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৬ নং ধারা সংশোধন করে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পার্কিং এর জায়গা রাখার বিধান ঐচ্ছিক করা আবশ্যক।

কর্মসূচিতে বক্তারা কর্তৃপক্ষের প্রতি লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ এবং লাইসেন্স ফি বৃদ্ধির আহবান জানান। গাড়ির আমদানি কর, রোড ট্যাক্স বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলেও তারা মত প্রকাশ করেন। তারা প্রাইভেট কারবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ থেকে বিরত থেকে হাঁটা, সাইকেল, রিকশা এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করার দাবি জানান। পাশাপাশি প্রাইভেট কার ক্রয়ের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং প্রাইভেট কার সিএনজিতে রূপান্তর বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহবান জানান।

হাফিজুর রহমান ময়না, সভাপতি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন)-অস্ট্রেলিয়ার চ্যাপ্টার এর সমন্বয়কারী কামরুল আহসান খান; ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার, মারুফ হোসেন; নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান, ইবনুল সাঈদ রানা, পবা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আতিক মোর্শেদ, বিসিএইচআরডি এর নির্বাহী পরিচালক, মাহবুবুল হক, আইনের পাঠশালা এর সভাপতি সুব্রত দাস, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র গবেষক ফারহানা জামান; বারসিক এর প্রোগ্রাম অফিসার ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল; পরিবর্তন চাই এর সহপ্রতিষ্ঠাতা দিদারুল ইসলাম ভূইয়া; প্রত্যাশা’র সদস্য ফয়সাল; গ্রীন মাউন্ড সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আমির হাসান; ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এইচআর, এনসিডি, সৈয়দা অনন্যা রহমান এবং সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা, জিয়াউর রহমান লিটুসহ আরো অনেকে।