যানজট হ্রাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার নির্মাণ বন্ধ ও উন্নত গণপরিবহণ ব্যবস্থা চালুর দাবি

নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রাইভেট কারের ব্যবহার ঢাকা শহরের যানজট সমস্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। উন্নতমানের গণপরিবহন ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রাইভেট কার ক্রয় ও ব্যবহারে নানান সুবিধা প্রদান করায় মানুষ প্রাইভেট কার ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট। তাই যানজট ও যাতায়াত সমস্যা দূর করতে অবিলম্বে মানসম্মত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব এর ভিআইপি লাউন্সে “প্রাইভেটকার কেন্দ্রিকতা: যাতায়াতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে প্রাইভেট কারকেন্দ্রিক নীতি, পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করায় যানজট সমস্যা ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করছে। পাশাপাশি পাবলিক পরিবহন, হাঁটা, সাইকেল ও রিকশাকে উপেক্ষা করার কারণেও মানুষ প্রাইভেটকার ক্রয়ের দিকে ঝুকে পড়ছে। এজন্য ভালো মানের বাস নামানো এবং তার সঙ্গে বাসের জন্য পৃথক লেন, যাত্রী ছাউনী প্রদান, ফুটপাত ও রাস্তায় পারাপারে জেব্রা ক্রসিং এর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।  

বুয়েট এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড.সারোয়ার জাহান বলেন, ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এই শহরের যাতায়াত ব্যবস্থায় সঙ্কট আরো বৃদ্ধি করবে। শহরের অভিভাবত্বহীনতা ও যানজট সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ছোট ও মাঝারি শহরের উন্নয়ন করা প্রয়োজন। যেখানে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে ঢাকার উপর চাপ কমবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর এর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, সারা বিশ্বে যখন প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে আমরা চলছি উল্টো পথে। নগর পরিকল্পনা মানুষের জন্য হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সকলেই বুঝতে পারছি প্রাইভেট কার আমাদের যানজট সৃষ্টিতে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও আমরা এ বিষয়ে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছি না।

নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, প্রাইভেট কারের কারণে আমরা একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছি তা হলো যানজট। আমাদের শহরে ২ লক্ষ নিবন্ধিত গাড়ি চলাচল করে। আমাদের চলাচলকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে হলে অবশ্যই প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি যানজট নিরসনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার হওয়ার আহবান করেন।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান বলেন, ২টি প্রাইভেট কার একটি বাসের সমান জায়গা নেয় এবং ২ থেকে ৪ জন বহন করে অথচ একটি বাস ২০০ যাত্রী বহন করে। প্রাইভেট কার পার্কিং এর জন্য ১৬০ বর্গফুট জায়গা নেয় এবং ৯০ ভাগ সময় পার্কিং অবস্থায়ই থাকে। ঢাকায় মাত্র ৩.৮ শতাংশ চলাচল হয় কিন্তু সড়ক পথের প্রায় ৭০ভাগ স্থান দখল করে রাখছে। অথচ বাস, রিকশা, সাইকেল ও হেঁটে ৯৬.২ শতাংশ যাতায়াত হলেও সড়ক মাত্র ৩০ভাগ ব্যবহার করে থাকে। এজন্য প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরী।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাটেজি এর চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সমাজকর্মী একেএম সিরাজুল ইসলাম, কবি লিলি হক, পরিবেশকর্মী ড. আব্দুল হাই মজুমদার প্রমূখ।