স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমতা আনয়নে এসডিজি ১১.২-এ হাটা ও বাইসাইকেল অন্তর্ভূক্ত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান
মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) ২০০০-২০১৫ মেয়াদ শেষে সাসটেইনএবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) ২০০১৫-২০৩০ অনুমোদিত হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলির সরকার প্রধানদের নিয়ে আগামী ২-২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে বিশেষ সামিট হতে যাচ্ছে। এসডিজি’র ১৭ টি গোলের মধ্যে এর ১১ নং গোলটি নগরকে নিরাপদ, টেকসই ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার বিষয়টি নির্দেশ করে। যার অধীনে ১১.২ এ গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে হাঁটা এবং সাইকেল চালানোর বিষয়টি সেখানে অনুপস্থিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন জ্বালানী সংকট আসন্ন এবং পরিবেশ দূষণ একটি অন্যতম মুখ্য সমস্যা, তখন হাঁটা এবং সাইকেল চালানো একটি যুগোপযোগী সমাধান। হাঁটা ও সাইকেলে চলাচল স্বাস্থ্যের উন্নয়ন সমতা আনয়নে ভূমিকা রাখে। কাজেই এসডিজি’র ১১.২-এ হাঁটা এবং সাইকেলের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা জরুরী। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আজ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন।  
 
মারুফ হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এলসি, এনসিডি, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এসডিজি’র ১১.২-এ গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি হাঁটা এবং সাইকেল চালানোর বিষয়টি যুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। যান্ত্রিক যান নির্ভরতা কমিয়ে জ্বালানী সাশ্রয় ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য হাঁটা ও সাইকেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত মাধ্যম। নিয়মিত হাঁটা ও সাইকেলে চলাচল স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায় এবং সমাজে সমতা আনয়নে ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে বিশ্বে বছরে প্রায় ৩২ লক্ষ মানুষ মারা যান। নগরে এই সঙ্কট আরো প্রকট। নগর জীবনে আলাদা করে ব্যায়ামের সময় বের করার সময় পাওয়া দুস্কর। তাই হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের সুবিধা মানুষের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম পেতে সাহায্য করবে এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করবে।
 
নাজনীন কবীর, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, সমাজে সমতা আনয়ন এসডিজি’র অন্যতম উদ্দেশ্য। সমাজে’র প্রতিটি ব্যক্তিকে গাড়ি ব্যবহার করেন না, কিন্তৃ প্রতিটি মানুষ হাঁটেন। হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক সমতা আনয়ন সম্ভব। জিয়াউর রহমান লিটু, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, বিশ্বে ২৫ শতাংশ দূষণ হয় যান্ত্রিক যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ার মাধ্যমে। কাজেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে হাঁটা এবং সাইকেলের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে এসডিজি’র ১১.২-এ এ বিষয় দুটি অন্তর্ভূক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। 
 
মো: নজরুল ইসলাম সরকার, নির্বাহী পরিচালক, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা হোমনা বলেন, সাইকেলও একটি পরিবেশবান্ধব বাহন। কাজেই সাইকেল এবং হাঁটার বিষয়টি এসডিজি’র ১১.২-এ অন্তর্ভূক্ত হওয়া প্রয়োজন। মাহবুবুল হক, বিসিএইচআরডি বলেন, সরকারের কাছে আহবান জানাই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যেন এসডিজি সংক্রান্ত আলোচনায় এসডিজি’র ১১.২-এ সাইকেল এবং হাঁটার বিষয়টি দুটি অন্তর্ভূক্তির জন্য মতামত দেন। 
 
আতিক মোরশেদ, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলেন, যখনই গণপরিবহণ নিয়ে আলোচনা করা হয়, তখন পথচারী এবং সাইকেল চালানো বিষয় দুটি অবহেলিত থেকে যায়। কিন্তু এ দুটি উপাদানকে বাইরে রেখে এসডিজি’র ১১ নং গোলটি পূরণ সম্ভব নয়। কারণ সফল গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হেঁটে যাতায়াত এবং পরিবেশবান্ধব অযান্ত্রিক যানবাহন প্রয়োজনীয়। হেলাল খান, সাধারণ সম্পাদক, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায় থেকে এসডিজি’র উপর মতামত গ্রহণের আহবান করা হয়েছে। আশা করি সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে আগামী দিনে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি অর্জনে ভুমিকা রাখবেন। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা শারমিন আকতার রিনি, মো: আতিকুর রহমান, ফাহমিদা ইসলাম এবং সহকারী এডভোকেসী কর্মকর্তা তানজিলা হক ও নাঈমা আকতারসহ আরো অনেকে।