যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে রেলওয়ের প্রকৃত উন্নয়নে সঠিক খাতে বিনিয়োগের আহ্বান
যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে রেলওয়ের প্রকৃত উন্নয়নে সঠিক খাতে বিনিয়োগের আহ্বান
 
পরিবেশ, অর্থনীতি, জনসেবা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেক্ষেত্রে রেল পরিচালনার জন্য যে কোন বরাদ্দ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে বিনিয়োগ। সরকার রেলের মাধ্যমে পরিবহণ সুবিধা প্রদান করে দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের পরিবহণ ব্যবস্থা ও সার্বিক উন্নয়নে রেল যোগাযোগ আরো বিস্তৃত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে যে কোন মূল্যে যমুনা সেতুতে রেল চলাচল অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী। আজ বিকাল ৩.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফানন্স লাউঞ্জে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত “পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চল রেল যোগাযোগ ও সাম্প্রতিক বিনিয়োগ” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। 
 
বক্তারা বলেন, যমুনা সেতুতে ফাটলের বিষয়টি কোনভাবেই হালকাভাবে গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ অনেক সময় দেখা গেছে, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অনেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ অকার্যকর ঘোষনা করে বন্ধ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার পূনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। যমুনা সেতুতে ফাটলের কারণ সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে যদি দেখা যায়, সেতু থেকে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন না করা যায় তাহলে শুধুমাত্র নির্মাণকারী ও পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করার প্রেক্ষিতে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে যমুনা সেতুর ক্ষতিপুরনের লক্ষ্যে দ্রুত ও নিখুতভাবে মামলা দায়ের করা জরুরী। এছাড়া বর্তমানে যমুনা সেতুর ফাটলের কারণ নিরূপনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কার্যক্রমের ফলাফল নিয়মিত জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। 
 
বক্তারা আরো বলেন, ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে সড়কপথেই বেশিরভাগ ঋণ প্রদান করায় রেলওয়ের উন্নয়ন বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। গবেষক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতো সড়ক পথে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ বর্তমানে পরিবেশ দূষণ, দুঘর্টনা, অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন পর বিগত কয়েক বছরে কিছু ঋণ প্রদানকারী সংস্থা কর্র্তৃক রেলওয়ের উন্নয়নে ঋণ প্রদানের বিষয়টি খুবই আলোচিত। কিন্তু এ সকল ঋণ সহায়তায় রেল উন্নয়নে স্টেশন রি মডেলিংয়ের নামে শত শত কোটি টাকা এরকম অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। স্টেশন আধুনিক করা অপেক্ষা রেল লাইন উন্নয়ন করা জরুরি, জরুরি রেলে বগি ও ইঞ্জিন বাড়ানো। একদিকে বলা হচ্ছে ঋণ ছাড়া চলা সম্ভব নয়, অপর দিকে এমন খাতে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া হচ্ছে যা অপ্রয়োজনীয়।  তথাকথিত ঋণ সহযোগীদের পরামর্শ ও দিক নির্দেশায় অনেক উন্নয়ন গৃহীত হচ্ছে, ফলে দেশীয় অনেক প্রেক্ষাপটের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায়, আশানুরূপ উন্নয়ন হচ্ছে না। 
 
সম্মেলনে বলা হয়, দুঃখজনক হলেও সত্য যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে রেলওয়ে সেবাকে জনগণের কাছে সহজলভ্য ও রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়ক হতো সেসব খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ নেই। ফলে রেলের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত ঋণের টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে বছরের পর বছর চলে যাবে। বস্তুতপক্ষে ঋণপ্রদানকারী সংস্থার কারণে রেলের সত্যিকার উন্নয়ন হয়ে উঠেছে বাধাগ্রস্ত, যা কারো কাম্য নয়। ঋণ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন এ অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে? এ ঋণ হতে কি পরিমান লাভ হবে? যদি দেখা যায়, স্টেশন আধূনিকায়নের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু রেল লাইন সংস্কার, ইঞ্জিন বা বগি ক্রয়ের জন্য নয়। তবে এ ধরনের ঋণ গ্রহণ করা উচিত নয়। বক্তারাগণ ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর সম্পর্কে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ এবং অনুযোগ সর্তকতার সাথে বিবেচনা করার আহবান জানায়। কারণ ইতিপূর্বে যে সকল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর অনেকেই দেশেই এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তর স্বার্থে এডিবির ঋণে রেলওয়ের চলমান সংস্কার কর্মসূচী মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। রেলের উন্নয়নে দেশের নীতিমালার আলোকে ঋণ নিতে হবে এবং এর প্রেক্ষিতে রেলের মাধ্যমে পরিবহণ ব্যবস্থার যথাযথ উন্নয়ন হবে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই রেলের কোন কোন খাতে সংস্কার করতে হবে তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কোন ঋণ প্রদানকারীর সংস্থার পরামর্শে বা শর্ত পূরণের জন্য ঋণ গ্রহণ করা হলে কাঙ্খিত সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।
 
দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতা, বাজারের লাগামহীন বৃদ্ধি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ বেসরকারীকরণ দূর্নীতি হ্রাস ও উন্নয়নের মাধ্যম নয়। বেসরকারীকরণ রাষ্ট্রকে কিছু ব্যক্তি বা কোম্পানির মুখাপেক্ষী করে তোলে। আর এ ক্ষেত্রে রেলের মতো একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেসরকারীকরণ করা হলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হবে এবং অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসায় জনগণ একটি চক্রের কাছে জিম্মি হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যদি নিজেদের অদক্ষতা, দূনীতি, স্বেচ্ছাচারীতা কারণে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে গেলে পরামর্শ প্রদান করা হয় বেসরকারীকরণের। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারীকরণের ফলে বিশাল জনগোষ্ঠী এবং সম্পদের ক্ষতি করা হয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠার বেসরকারীকরণ সমাধান নয় বরং কোন ব্যক্তি যদি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাকে পরিবর্তন করতে হবে। যারা একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে পারে না, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পোষণ করা অপচয়।
 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে শুধু একটি রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানই নয়। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, সাংবিধানিক অধিকার, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি, দারিদ্র বিমোচন, জনগণের অধিকার ও আকাংখার বিষয়সমূহ। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস, পরামর্শ ও প্রচেষ্টা সরকারকে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়নে শক্তি, সাহস ও সামর্থ যোগাবে। দেশীয় বিশেষ্ণগদের রেল উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারকে সঠিক ও যুগোপযোগী পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানকে সতিকার জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান করা হয়।