পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান সরিয়ে নেয়া হোক

পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান সরিয়ে নেয়া হোক

পুরান ঢাকার রয়েছে গৌরবোজ্জল এক ইতিহাস। কালের বিবর্তনে আজ তা হারিয়েছে যাচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকাবাসী বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্য নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একদিকে প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তা-ঘাট, নালা-নর্দমা, উম্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতা। অন্যদিকে পুরা এলাকা একটি মিশ্র এলাকা হিসাবে গড়ে উঠেছে। যেখানে একই সঙ্গে অবস্থান করছে আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন, শিল্পকারখানা, কেমিক্যালের গুদাম, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া একই ভবনে রয়েছে কারখানা, রাসায়নিক  দাহ্য পদার্থসহ বিভিন œমালামালের গুদাম ও দোকান, বাণিজ্যিক কর্মকান্ড এবং আবাসিক ফ্ল্যাট।

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে এবং পবার প্রোগ্রাম অফিসার সাকিবুল হাসানের  সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পবার সহ সম্পাদক মোঃ সেলিম, দেবীদাশ ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মোঃ মুসা, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ সভাপতি নাজিম উদ্দিন, পবা সদস্য জাহাঙ্গীর যুবরাজ,  নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম -নাসফের প্রচার সম্পাদক ক্যামেলিয়া চৌধুরী, পুস্প সাহা পুকুর রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মিন্টু, বুড়িগঙ্গা পূনউদ্ধার কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি শহীদ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আদি ঢাকাবাসী ফোরামের সদস্য সচিব জাভেদ জাহান, দেবীদাশ ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সদস্য মোঃ সিরাজ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন- রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনায় সামান্য ত্রুটির কারণে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে একটি ভবনের নিচতলার রাসায়নিক  দাহ্য পদার্থের গুদামে আগুন লেগে মুহূর্তেই তা বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাসায়নিক কারখানা, গুদাম, দোকানে আগুন নিভানোর নিজস্ব কোন ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনীয় রাস্তার অভাবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীগুলো দুর্ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারে না। অনেক সময় অগ্নিকান্ডস্থলের কাছে জলাধার না থাকায় পানির অভাবে ফায়ার সার্ভিসকে বেগ পেতে হয়।

জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, সিটি করপোরেশন -এর উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা এবং ভবনের মালিক ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হওয়া ও অসচেতনার কারণে নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার পর পর সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কথা বলা হলেও  বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈধ ও অবৈধ কারখানাগুলো সরাতে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও  গত ছয় বছরে নিমতলীর আশেপাশের এলাকা এবং পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা, দোকানগুলো সরিয়ে নেয়ার বাস্তসম্মত দৃশ্যমান কোন কার্যত্রম পরিলক্ষিত হয়নি। বরং অলিতে-গলিতে গড়ে উঠছে রাসায়নিকের

গুদাম, কারখানা ও দোকান এবং প্লাস্টিক ও পলিথিন কারখানা। নিমতলী এলাকায়  রাসায়নিকের পুরাতন গুদামের সংখ্যা কমে এলেও আবার নতুন গুদাম গড়ে উঠেছে, রয়েছে প্লাস্টিকের অনেক কারখানা। নিমতলী এখনো একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।

ঢাকা মহানগরীতে এক হাজারেরও বেশী কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে আট শত পঞ্চাশেরও বেশী অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স গ্রহণের বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম পরিচালনার কোন সুযোগ নেই।

আবাসিক এলাকা থেকে  বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, শিল্পকারখানা ও দোকান সরিয়ে নেয়া না হলে নিমতলীর মতো আবারও যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুরান ঢাকায় বিদ্যমান  বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, শিল্পকারখানা ও দোকানগুলো ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার জনজীবন, জননিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।  তাই জরুরীভিত্তিতে পুরান ঢাকাসহ  রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।

করণীয়ঃ
*   ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান সরিয়ে নেয়া।
*    বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকানের জন্য সরকার কর্তৃক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থাসহ একটি পরিকল্পিত এলাকা গড়ে তোলা।
*  পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক আবাসিক এলাকায় পরিচালিত কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম- এর বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।।
*  কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট আইন মোতাবেক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
*  পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর সব এলাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা, গুদাম সরাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।
*    নিমতলী অগ্নিকান্ডে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা।
*    প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সংগৃহীত অর্থ ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে সুষ্ঠু বন্টনের ব্যবস্থা করা।