পার্কিং সমস্যা সমাধানে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তাদের অভিমত পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে পার্কিং ফি বৃদ্ধি ও প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ জরুরী
 
“পার্কিং সমস্যা সমাধানে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তাদের অভিমত
পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে পার্কিং ফি বৃদ্ধি ও প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ জরুরী
 
ঢাকা শহরে প্রাইভেট গাড়ির পার্কিং যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। যানজট নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ ও জায়গার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বের করা জরুরী। সেক্ষেত্রে পার্কিং ফি বৃদ্ধি এবং প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। আজ সকাল ১১.০০ টায় ধানমন্ডির আইমেক্স সেন্টারে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে “পার্কিং সমস্যা সমাধানে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
সভায় বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানী’র সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রজেক্ট অফিসার মারুফ রহমান। আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর পরিকল্পনাবিদ শরিফ মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান, সিনিয়র জিওগ্রাফার মো: জাহাঙ্গীর আলী, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম অফিসার বিধান চন্দ্র পাল, উশিকা’র ইবনুল সাঈদ রানা। সভা পরিচালনা করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র চেয়ারম্যান জনাস আবু নাসের খান।
 
বক্তারা বলেন, দ্রুতহারে প্রাইভেট গাড়ী বৃদ্ধি পাওয়ায় পার্কিংয়ের জন্য বেশি বেশি জায়গা প্রদানের প্রয়োজন পড়ছে। নিশ্চয়ই মার্কেট বা বাড়ী ভেঙ্গে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা দেয়া সম্ভব হবে না। রাস্তা ও ফুটপাত পার্কিং মুক্ত করার জন্য পার্কিং এর জন্য যতই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হোক না কেন প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করলে রাস্তায় পূনরায় গাড়ী পার্কিং হবে। প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণ না করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।
 
ঢাকা জনবহুল একটি শহর, জনসংখ্যা অনুপাতে ভূমির পরিমাণ খুবই কম। এখানে অবশ্যই পার্কিং এর জন্য সীমিত আকারে জায়গা নির্দ্দিষ্ট করা প্রয়োজন। বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে পার্কিং সুবিধা প্রাইভেট গাড়ী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় সর্বত্রই বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে সারাদিন ধরে গাড়ি পার্কিং করে রাখা যায়। যা মানুষকে প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। পার্কিংয়ের স্থান কমিয়ে দিলে এবং পার্কিং ফি বৃদ্ধি পেলে মানুষ প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে। 
 
বক্তারা আরো বলেন, প্রতিটি ভবনে পার্কিং সুবিধা দিলে গাড়ি ক্রয়ের প্রবণতা বাড়বে। ভবনে পার্কিং করে সড়কের পার্কিং সাময়িকভাবে বন্ধ করা গেলেও গাড়ি বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন করে পার্কিং সমস্যা তৈরি হবে। তখন নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করে এ সমস্যা সমাধানের কথা বলা হবে। এটি দুষ্টচক্রের মতো মানুষের দৈনন্দিন সুযোগ-সুবিধাগুলিকে গ্রাস করবে। পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে পার্কিং এর চাহিদা কমানোর প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে মানুষকে পাবলিক পরিবহণ, হেঁটে ও সাইকেলে চলাচলে উৎসাহী করতে এই মাধ্যমগুলির উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এতে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার হ্রাস পাবে। যা ভবিষ্যতে বেশি বেশি সড়ক ও পার্কিং অবকাঠামো তৈরি করা থেকে রক্ষা করবে। 
 
মতবিনিময় সভায়, পার্কিং সমস্যা সমাধানে পার্কিং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পার্কিং চাহিদা কমানো; সর্বত্র জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি নেয়া; অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা; পার্কিং হতে প্রাপ্ত অর্থ পাবলিক পরিবহণের মানোন্নয়নে ব্যয় করা; নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা; প্রাইভেট গাড়ির লাইসেন্স সীমিত করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে প্রাইভেট গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহণের ব্যবস্থা করা; প্রাইভেট গাড়ি নির্ভর অবকাঠামো (ফ্লাইওভার, পার্কিং এর স্থান তৈরি) নির্মাণ না করা; এবং পাবলিক পরিবহণ, জ্বালানীমুক্ত যান ও পথচারীদের সুবিধা বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।