যানজট নিরসনে অফিস সময়ে সড়ক চাই প্রাইভেট কারমুক্ত চাই হাঁটার সুব্যবস্থা ও নৈরাজ্যমুক্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা সহজে-সুলভে-সর্বত্র যাতায়াতে চাই পর্যাপ্ত বাস
যানজট নিরসনে অফিস সময়ে সড়ক চাই প্রাইভেট কারমুক্ত
চাই হাঁটার সুব্যবস্থা ও নৈরাজ্যমুক্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা
সহজে-সুলভে-সর্বত্র যাতায়াতে চাই পর্যাপ্ত বাস
 
ঢাকা শহরে যানজটে মানুষ অস্থির। ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষের সময় কাটছে রাস্তায়। এতে যেমন ক্ষতি হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থের তেমনি ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির। প্রাইভেট কার কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করে যাতে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ সহজে আরামে এবং সকল স্থানে যেতে পারে সেরকম একটি যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। মানুষের হাটার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে অধিকাংশ মানুষ সাচ্ছন্দে স্বল্প দুরত্বের ট্রিপগুলি হেটে সম্পন্ন করবে। পায়ে হাটা সুযোগ সুবিধা অল্প খরচে স্বল্প সময়ের মধ্যে করা সম্ভব। দ্রুত যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ একটি বাসে ৬০ থেকে ৮০ জন যাত্রী বহন করা সম্ভব। একই পরিমাণ যাত্রী পরিবহণের জন্য ৩০ থেকে ৪০টি প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার হয়ে থাকে। কাজেই যানজট নিরসন করতে হলে প্রাইভেট কার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে পর্যাপ্ত পরিমাণে বড় বড় বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং যাতে সহজে সব জায়গায় যাওয়া যায় সেজন্য রুট সংখ্যা বাড়াতে হবে। একটি কোম্পানিকে একটি রুট ইজারা প্রথা বাতিল করলে বাসের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। সরকার নির্ধারিত কিঃমিঃ প্রতি ৮০ পয়সার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে। সাইকেল ও নিু ও মধ্যবিত্ত্বের ট্যাক্্ির-রিক্্রা চলাচলের জন্য পুথক লেন সৃষ্টি করতে হবে। আজ ২২ অক্টোবর/০৯ সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ এর উদ্যোগে অফিস সময়ে সড়ক প্রাইভেট কারমুক্ত ও পর্যাপ্ত বাসের দাবীতে সমাবেশে পবা এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট লোক সঙ্গীত শিল্পী কদ্দুস বয়াতী, পবা’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ: সম্পাদক সৈয়দ সাগীরুজ্জামান শাকীকÑআমীর হাসানÑতৌফিকুর রহমান সেন্টুÑইবনুল সাঈদ রানা। সদস্যবৃন্দÑহাফিজুর রহমান ময়নাÑক্ষিরোদ রায়Ñসুমন, এছাড়াও সাভার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান, পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক সদরুল আনাম প্রমুখ।    
 
সম্প্রতি সরকার যানজট কমাতে অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময়সূচী পরিবর্তন, বিগত দিনে দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল নিষেধ করা, আন্তঃজেলা বাসের প্রবেশ নিষিদ্ধ, বিভিন্ন সড়কে রিকশা বন্ধ, ট্রেনের সময়সূচী পরিবর্তন, পথচারী পারাপারের জ্রেবা ক্রসিং বিলুপ্ত করে ফুটওভার ব্রিজ ও ফ্লাইওভার তৈরি এবং প্রচুর অর্থ ব্যয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার প্রবর্তনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও যানজট নিরসন সম্ভব হয়নি বরং যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যানজট সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত না করে এ সকল পদক্ষেপ গ্রহন কোন কাজেই আসবেনা। কারণ ঢাকার যানজট প্রাইভেট কার নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থার ভুল পরিকল্পনার ফলাফল বর্তমান অসহনীয় যানজট। 
 
ঢাকা শহরের যানজটের প্রধান কারণ প্রাইভেট কার কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করা। শতকরা ৫ ভাগেরও কম মানুষ প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহার করছে। অথচ তাদেরই প্রাধান্য দিয়ে রাস্তার এ চতুর্থাংশ জায়গা প্রাইভে কারের জন্য ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। ৯৫ ভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে কিংবা বাসে বা অন্যান্য যানবাহনে যাতায়াত করছে। ফলে অসহনীয় যানজটের পাশাপাশি অধিকাংশ মানুষ যাতায়াতের চরম দূর্ভোগের শিকার। একেকটি বাস কোম্পানিকে বাসরুটগুলো ইজারা দেওয়ার ফলে বাসের ভাড়া ইচ্ছামত আদায় করছে বিশেষ করে স্বল্প দুরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে। যাত্রী সংখ্যা বাড়লেও বাসের সংখ্যা বাড়ছেনা। ঘন্টার পর ঘন্টা বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রচন্ড ভিড়ের কারণে বাসে উঠতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। মহিলা যাত্রীদের পক্ষে ভদ্রচিতভাবে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ট্যাক্্ির, সিএনজি যেন সোনার হরিণ। নিষিদ্ধ থাকায় রিক্্রায় সব জায়গায় যাওয়া যায় না ফলে ভাড়াও অধিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এক কথায় যাতায়াত ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুয়েকটি জায়গা বাদে অধিকাংশ জায়গায় ভদ্রভাবে পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোন সুযোগ নাই। যেমন কাঠাল বাগানের রাস্তায় হয় রিক্্রা বা গাড়ীতে চড়তে হবে নতুবা গাড়ী-রিক্্রা আপনার উপর চড়বে। এখানে হাটা মানে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা বা শারীরিক আঘাতের ঝুকি নিয়ে কাদামাটিতে একাকার হয়ে চলতে হবে।
 
যাতায়াতের জন্য হাটার অসুবিধা এবং গণপরিবহনে নৈরাজ্যের কারণে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তের মানুষ। প্রতিনিয়ত যাতায়াতের এ ভোগান্তির হাত থেকে রেহাই পেতে সামর্থ না থাকলেও মানুষ প্রাইভেট কার কেনার দিকে ঝুকছে। তাছাড়া গাড়ীর ভর্তুকিকৃত জ্বালানী গ্যাস ব্যহারের ফলে গাড়ী পরিচালনার খরচও অনেক কমে গেছে যা বাস ভাড়ার চেয়ে অনেক কম। এছাড়াও গাড়ীর জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে পাচ্ছে যেমন-ফ্লাইওভার তৈরি, শহরের মধ্যে পার্কিং সুবিধা প্রদান, উন্নত দেশের অনেক পুরানো গাড়ী নিজ দেশে ডাম্প না করে নামমাত্র মূল্যে আমাদের দেশে পাঠানো হচ্ছে এবং গাড়ীর ট্যাক্্র কম। ফলে প্রাইভেট গাড়ীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আমাদের সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে ও যানজট দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তার পরিমাণ বৃদ্ধি করা সুযোগ খুবই সীমিত এবং অত্যন্ত ব্যয় বহুল। দ্বিতল রাস্তা আরও ব্যয়বহুল তাছাড়া নিচে রাস্তার প্রায় ৭০ ভাগ জায়গা যান চলাচলের কোন কাজে আসেনা। ফলে দ্বিতল রাস্তা করলেও সামগ্রীকভাবে রাস্তার পরিমাণ সামন্য বৃদ্ধি পায়। তাই শহরের ভিতরে দ্বিতল রাস্তা করেও যানজট কমানো সম্ভব নয়।
 
যানজট নিরসনে অফিস সময়ে ঢাকা শহরের সড়ক প্রাইভেট কারমুক্ত এবং সহজে সুলভে যাতায়তের পর্যাপ্ত বাস ব্যবস্থার বিকল্প নাই