গোলটেবিল বৈঠকে সরকারের প্রতি আহবান মানুষকেন্দ্রিক নগর পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিদ্যমান নীতি সংশোধন করা প্রয়োজন
গোলটেবিল বৈঠকে সরকারের প্রতি আহবান
মানুষকেন্দ্রিক নগর পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিদ্যমান নীতি সংশোধন করা প্রয়োজন 
 
নগর পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে মানুষ এবং মালামাল কম খরচে, নিরাপদে, আরামদায়ক ও বিরতিহীনভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ঢাকার কৌশলগত পরিবহণ পরিকল্পনা, ডিটেইল্ড এরিয়া প্লানসহ সরকারের গৃহীত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের পূর্বে সংশোধন প্রয়োজন। কারণ এগুলি গাড়ি কেন্দ্রিক-মানুষকেন্দ্রিক নয়। আজ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে “নগর পরিবহণ ব্যবস্থা” উন্নয়নে সরকারের নিকট প্রত্যাশা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা একথা বলেন।
 
বক্তারা বলেন, বিদ্যমান নীতিসমূহের মধ্যে কৌশলগত পরিবহণ পরিকল্পনা (ঢাকা) এর কিছু ভালো দিক রয়েছে। কিন্তু গবেষনায় প্রাপ্ত কার্যকরী ফলাফল উপেক্ষা করে যে সকল প্রস্তাব করা হয়েছে তা ক্রটিপূর্ণ, যেখানে প্রাইভেট কারকে সবদিক থেকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রাইভেট কার ব্যবহারের সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই পরিবহণ সমূহকে নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন পাবলিক পরিবহণ, জ্বালানীমুক্ত যান, পথচারী এ সকল মাধ্যমে বেশিরভাগ ট্রিপ ও যাতায়াত হলেও এ মাধ্যমগুলি উপেক্ষিত থেকেছে। কৌশলগত পরিবহণ পরিকল্পনায় (এসটিপি) সড়কে যান চলাচলের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 
 
বক্তারা আরো বলেন, এসটিপি’র সুপারিশে ৩০% অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রাইভেট কার বান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। অথচ শহরে মাত্র ৫% লোকের প্রাইভেট কার রয়েছে। এরকম প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ পরিবহণ ব্যবস্থায় সঙ্কট আরো বৃদ্ধি করবে বলে এসটিপি’র গবেষনা থেকে পাওয়া গেছে। এছাড়া পাতাল রেলের জন্য ৬৩% বরাদ্দ রয়েছে যা মাত্র ৮% ট্রিপ যাত্রীর চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষে। সুতরাং এটি বাস্তবায়নের পূর্বে পুনবিবেচনা করা প্রয়োজন। এসটিপিতে পথচারী, জ্বালানীমুক্ত যান, সমন্বিত নৌপরিবহন ও চাহিদা ব্যবস্থাপনার জন্য মাত্র ১.৯৯% বিনিয়োগের প্রস্থাব করা হয়েছে। গৃহীত এসটিপিতে ৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গবেষনায় সবচেয়ে অনুকুল পন্থা অপেক্ষা ২৩৭ গুন বেশি। যা কোন ধরনের উল্লেখযোগ্য কারিগরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়াই বিপুল অর্থ ও সম্পদ অপচয় করবে । এসটিপিতে শুধুমাত্র যাতায়াত চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে যোগান হিসেবে প্রাইভেট কার প্রাধান্য পেয়েছে। বিশ্বের কোথাও প্রাইভেট কার কেন্দ্রিক পরিবহণ পরিকল্পনা দিয়ে যানজট নিরসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি।
 
তারা আরো বলেন, যানজট নিরসনের নামে সম্প্রতি কুড়িল ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারটি চালু হলে সাময়িকভাবে গাড়ি কিছুটা ভালো গতি পেলেও শহরের কেন্দ্রে প্রচন্ড যানজট সৃষ্টি ও দূষণ বৃদ্ধি করবে। উদাহরণ হিসেবে মহাখালী ফ্লাইওভারের কথা উল্লেখ করা হয়। সারা বিশ্বে যখন এলিভেটড এক্সপ্রেসওয়ে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে তখন ঢাকায় এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের যৈাক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। নগর পরিবহণ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য শুধু বড় বড় প্রকল্প ও বেশি করে খরচ করা নয়, বরং সত্যিকারের সমাধানে কাজ করা। তারা বলেন প্রক্রিয়াধীন ডিটেইলল্ড এরিয়া প্লান-এ শুধুমাত্র বেশি বেশি সড়ক ও বিল্ডিং নির্মানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরে একটি সুষম পরিবহণ ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে ভিন্ন ভিন্ন কার্যক্রমের জন্য পৃথক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। তবে এরকম অঞ্চল পৃথকীকরণ যাতায়াতের চাহিদা বৃদ্ধি করবে এবং যানজট বাড়াবে। সুতরাং ঢাকায় মিশ্র এলাকা গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে যাতে কাছাকাছি সবকিছু পাওয়া যায়। 
 
ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে সমন্বিত যোগান ও চাহিদা নিয়ন্ত্রণ কৌশলের অলোকে একটি সমন্বিত বহুমাত্রিক টেকসই পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা; মিশ্র এলাকা গড়ে তোলা; পরিবহণ নীতিমালা প্রণয়নে অর্থনীতি, পরিবেশ, সামাজিক সমতা, নিরাপত্তা এবং সকলের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করা; পরিবহণ মাধ্যম হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পথচারী, সাইকেল, রিকশা ও পাবলিক পরিবহণকে প্রাধান্য দেয়া এবং প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা; কমলাপুরে রেলস্টেশন তার অবস্থানে রেখে শহরের অন্যান্য এলাকায় ঝঁৎভধপব রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং ঢাকার চারপাশের নদী এবং অভ্যন্তরীণ খালগুলি সংস্কার করে নৌপরিবহণের উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়।
 
গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা এর চেয়ারম্যান জনাব আবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. মাহাবুবুল বারী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের উপাচার্য ড. এএমএম শফিউল্লাহ। আলোচনা করেন নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহাবুবুল আলম, আইডিএস এর চেয়ারম্যান ড. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী, বাস মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। সঞ্চালনা করেন ।