সরকারের সহযোগিতা পেলে বাস যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব
সরকারের সহযোগিতা পেলে বাস যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব
 
সরকারের সহযোগিতা পেলে বাস ভাড়া কমানোসহ যাত্রীদের অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব। আজ সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত “বাস রুটের সংখ্যা কমানো ও ভাড়া বৃদ্ধি: মানুষের দূর্ভোগ ও যানজট বৃদ্ধি” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বক্তারা আরো বলেন, ঢাকার সর্বত্র বাসে যাতায়াত করা যায় বাস রুট ডিজাইন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বাসের ভাড়াও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ বেশিরভাগই মধ্যম  নিম্ন আয়ের মানুষ বাসে চলাচল করে। এছাড়া ঢাকার পরিবহণ ব্যবস্থায় রেল ও নৌ-পরিবহণসহ সিএনজি থ্রি হুইলার ও ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসের উপর মনযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে পাবলিক পরিবহণের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরী। যাতে এ সকল মাধ্যমে চলাচলকারীরা কাঙ্খিত সেবা-পেতে পারে। এর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
 
বক্তারা আরো বলেন, পরিবহণ খাতে ব্যবহৃত সিএনজি এর মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকে ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। সিএনজিচালিত বাসের জ্বালানী খরচ এখনও ডিজেল চালিত বাসের চেয়ে কম বলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষনা ছিল বাস ভাড়া বাড়নো যাবে না। কিন্তু বাসের ভাড়া ঠিকই বেশি পরিমাণে আদায় করা হচ্ছে এবং বাস ভাড়া বাড়ানোর আলোচনা চলছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তূকি দিয়ে আমাদানীকৃত জ্বালানী তেলের অর্ধেকের বেশি ব্যবহার হচ্ছে পরিবহণ খাতে। পরিবহণ খাতে জ্বালানীর প্রায় ৮০ ভাগ ব্যবহৃত হয় প্রাইভেট কারে। সেক্ষেত্রে প্রাইভেট গাড়ির জন্য ব্যবহৃত জ্বালানীর দাম বৃদ্ধি করে পাবলিক পরিবহণের জ্বালানীর দাম কমানো জরুরী। পাবলিক পরিবহণে অধিকাংশ যাত্রী চলাচল করে  বলে এতে ব্যবহৃত জ্বালানীর জন্য ভর্তূকির ব্যবস্থা করা হলে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া মালামাল বহনকারী পরিবহণের জন্যও জ্বালানী ভর্তূকি দেওয়া হলে দ্রব্যমূল্য অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বাস মালিক সমিতির সহ সভাপতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন বাস কোম্পানীরগুলোকে পযার্প্ত সুবিধা প্রদান করলে ও সরকারের সহযোগিতা পেলে বর্তমান থেকেও বাস ভাড়া কমানোসহ যাত্রীদের অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব।
 
ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতিদিন মানুষের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে জ্বালানী, বাড়ছে দূষণ এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে পাবলিক পরিবহণকে প্রাধান্য দিয়ে এর সুবিধা বাড়াতে হবে। যাতে মানুষ পাবলিক পরিবহণে চলাচলে উৎসাহী হয়। ঢাকা শহরে পাবলিক পরিবহণের মধ্যে বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকো পালন করছে। বাসে খুব কম জায়গায় অনেক বেশি মানুষ চলাচল করতে পারে। ছোট ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে সকলের চলাচলের উপযোগী বাসের ব্যবস্থা করা হলে যানজট কমানো সম্ভব। ঢাকায় প্রাইভেট কারের বৃদ্ধি ও এর চলাচল এবং পার্কিং এর কারণে রাস্তায় জায়গা সংকুচিত হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর জন্য প্রাইভেট কারের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া বাসের জন্য পৃথক লেন করা প্রয়োজন। তাহলে যানজট এড়িয়ে বাসে চলাচলকারীরা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। এর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবহণ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। যার কাজ হবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ, ডিটিসিবি, ট্রাফিক পুলিশ এর মধ্যে কাজের সমন্বয় করা। এছাড়া পাবলিক পরিবহণ কোম্পানী যেন স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে জনদূর্ভোগ তৈরি করতে না পারে সেজন্যে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
 
আলোচনা সভায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবহণ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, ঢাকার পরিবহণ ব্যবস্থায় বাসকে প্রাধান্য দিয়ে সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা, সড়ক ও সিগন্যাল এ বাস চলাচলে অগ্রাদিকার দেয়া, বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে সটিক অবকাঠামো গড়ে তোলা, যাত্রী ছাউনি, কাউন্টার ও বাসে উঠার সুব্যবস্থা করা, বাস ও যন্ত্রাংশ আমাদানী কর মওকুফ করা, পাবলিক পরিবহণের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা, সুষ্ঠ পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাস রুট নির্ধারণ ও অন্যান্য পাবলিক পরিবহণের (রেল, নৌ-পরিবহণ) মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করতে হবে, চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিটি রুটে যৌক্তিকভাবে বাস (নির্ধারিত সংখ্যায়) সার্ভিস পরিচালনার অনুমোদন দেয়া, সিএনজি থ্রি হুইলার ও ট্যাক্সি ক্যাব এর ভাড়া নির্দ্দিষ্ট করা এবং মিটার অনুযায়ী ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কিনা সেটি নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।
 
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ট্রান্স সিলভা গ্র“পের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম, বেলা’র সিনিয়র আইনজীবি সৈয়দ ইকবাল কবির, সাংবাদিক লতিফুর বারী হামীম, সাংবাদিক মাহবুবুল হাসান নীরু, সিটিজেন রাইট্স মুভমেন্ট এর মহাসচিব তুষার রেহমান, পিস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মারুফ রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক কে এম মনিরুজ্জামান।