অনিয়ন্ত্রিত প্রাইভেট গাড়ী এবং পাবলিক পরিবহনের সীমাবদ্ধতা যানজট বৃদ্ধির কারণ
অনিয়ন্ত্রিত প্রাইভেট গাড়ী এবং পাবলিক পরিবহনের সীমাবদ্ধতা যানজট বৃদ্ধির কারণ
 
আকস্মিকভাবে ১৫ বছরের পুরাতন বাস বন্ধ করার প্রেক্ষিতে মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবলিক বাস নিষিদ্ধ করা হলেও, যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে এখনো কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পাবলিক পরিবহন নিষিদ্ধের পদক্ষেপ দূর্ভোগ বৃদ্ধি এবং মানুষকে আরো প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহারে উৎসাহী করবে। আজ সকাল ১১.০০ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, সিটিজেন রাইটস্ মুভমেন্ট, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত “অপারেশন ক্লিন স্ট্রিট” জনদুর্ভোগ কমাতে পাবলিক বাসের সেবামান বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিন শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা একথা বলেন। 
 
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরের পাবলিক পরিবহনের অবস্থা এমনিতেই ভাল নয়। অত্যাধিক ভাড়া, পাবলিক বাসের স্বল্পতা এবং মানহীনতাই বিদ্যমান অবস্থা। তথাপিও এ পরিবহনগুলো নগরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করছে। নগরে নতুন মানসম্মত পাবলিক বাসের ব্যবস্থা না করে, পুরোনো বাস উঠিয়ে দেওয়া কোনভাবেই সমীচীন নয়। এ ব্যবস্থা বিগত দিনের মতোই পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করে, প্রাইভেট কারকে অগ্রাধিকার প্রদানের পদক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হয়। যা নিঃসন্দেহে যানজট বৃদ্ধি করবে। 
 
বক্তারা আরো বলেন, ঢাকা শহরে যানজট কোন বিশেষ সময়ের নয়, সারা বছরের অন্যতম সমস্যা। চলতি রমজান মাসে বিআরটিএ কর্তৃক যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালিত “অপারেশন ক্লিন স্ট্রিট” রাজধানীতে কৃত্রিম পরিবহণ সঙ্কট তৈরি করেছে। হঠাৎ করে এই অভিযানে প্রচুর পরিমাণে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ যাত্রীসাধারণকে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। অথচ যানজট নিয়ন্ত্রণে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ পূর্বের ন্যায় এখনও যত্রতত্র প্রাইভেট কার পার্কিং হওয়ায় সড়কে জায়গা সংকোচনের মাধ্যমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। একটি প্রাইভেট কার চব্বিশ ঘন্টায় পচানব্বই ভাগ সময় পার্কিং অবস্থায় থাকে, যার মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ি একশত ষাট বর্গফুট জায়গা দখল করে রাখছে। অথচ অভিযান চললেও এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরের সর্বত্রই প্রাইভেট কার পার্কিং দৃশ্যমান।
 
বক্তারা বলেন, ঢাকায় পুরোনো বাস চলাচল বন্ধের সাথে সাথে চাহিদানুসারে নতুন বাসের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যানজট নিয়ন্ত্রণে বাস চলাচলকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। ঢাকা শহরে বর্তমানে যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেট কারের লাগামহীন বৃদ্ধি। প্রাইভেট কার সড়কে অনেক বেশি জায়গা নেয়, কিন্তু যাত্রী পরিবহণ করে গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন। অথচ দুইটি প্রাইভেট কারের সমান জায়গা নিয়ে একটি বাস গড়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশত যাত্রী পরিবহণ করে থাকে। যানজট নিয়ন্ত্রণে বাসের সেবামান বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে বাসে চড়তে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমেই প্রাইভেট কারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।
 
বক্তারা বাস সার্ভিসের মানোন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত বাস, যাত্রী ছাউনী, বাসের জন্য পৃথক লেন, এবং হাঁটা, সাইকেল ও রিকশার সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকার সর্বত্র বাসে চলাচলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এছাড়া নগরভিত্তিক বাস আমদানীতেও কর কমানো প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে প্রাইভেট কারের আমদানী কর বৃদ্ধি করা, একদিন লাইসেন্স অনুযায়ী বেজোড় সংখ্যা এবং অন্যদিন জোড় সংখ্যার প্রাইভেট কার চলাচলের ব্যবস্থা করা, নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট কার চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা, সকল স্থানে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি গ্রহণ করা, প্রাইভেট কারের লাইসেন্স বরাদ্দ সীমিত করার সুপারিশ করেন।
 
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সিটিজিন রাউটস্ মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম, পরিবহণ পরিকল্পনা বিশ্লেষক মারুফ রহমান, স্বভূমির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন, নগরবাসী’র সভাপতি হাজী আনসার আলী এবং বাউল শিল্পী আব্দুল কুদ্দুস বয়াতী। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ও পরিচালনা করেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইবনুল সাইদ রানা।