‘‘জাহাজভাঙ্গা কার্যক্রম, শ্রমদাসত্ব ও পরিবেশ’
                         ‘‘জাহাজভাঙ্গা কার্যক্রম, শ্রমদাসত্ব ও পরিবেশ’
বাংলাদেশের জাহাজভাঙ্গা একটি লাভজনক ব্যবসা। এই ব্যবসায়  বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ ও একের পর এক জাহাজ আমদানি করা শুরু হলো। এই ব্যবসায় ব্যবসায়ীদের বিবেচনা ছিল যত বেশি সম্ভব মুনাফা অর্জন। কিন্তু এর অন্য চিত্র হচ্ছে, যে জাহাজগুলো মুনাফা এবং লাভ বয়ে আনছে তা একইসাথে বিপুল পরিমাণ দূষিত বর্জ্যও নিয়ে আসে। সচেতনতা ও সুপরিকল্পনার অভাবে এই কার্যক্রম প্রতিনিয়ত পরিবেশকে করছে দূষিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাবে এখানে শ্রমিকদের অধিকার হচ্ছে চরমভাবে লঙ্ঘিত। প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার মাধ্যমে হতাহত হওয়া শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব, মালিকদের দায়িত্বহীনতা, শ্রমিক অধিকার লংঘন, সার্বিক পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি এই জাহাজ ভাঙ্গা কার্যক্রমের নিত্য ঘটনা। অথচ এই সকল স্ট্রাপ জাহাজগুলোকে আনার পূর্বে গ্যাস ও বর্জ্যমুক্ত করে আনার আন্তর্জাতিক নীতিমালা রয়েছ্ ে। কিন্তু এগুলোর কোনটাই এখানে প্রতিফলিত হয়না। আজ ০২ এপ্রিল ২০১০ পরিবেশ বাচাও আন্দোলন পবা জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘‘জাহাজভাঙ্গা কার্যক্রম, শ্রমদাসত্ব ও পরিবেশ’’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আমিনুর রসুল তার প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, জাহাজ ভাঙ্গা উপযুক্ত স্থান হচ্ছে টেকনোলজিভিত্তিক শীপ ইয়ার্ড যেখানে জাহাজ তৈরি ও মেরামত হয় । যেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সাহায্যে জাহাজ ভাঙ্গা হয়্ অথচ আমাদের দেশে  জাহাজ ভাঙ্গা হয় টেকনোলজি বিহীন উন্মুক্ত সাগর সৈকতে।  জাহাজ যেভাবে শীপইয়ার্ডে তৈরি হয়েছে তা কাটার সময় শিপইয়ার্ডে একই পন্থা অবলম্বন করা উচিত। এত আরও বলা হয় আমরা আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দেশের উপক’লের মাটি, পানি ও পানিতে বসবাসকারী প্রাণীর আবাসস্থল ধবংশ করে চলেছি অবলীল্রামে এবং বিষ ঢেলে দিচ্ছি তাদের পরিবেশে। তাই সর্বাগ্রে জাতীয়ভাবে গবেষণার মাধ্যমে যাচাই করা জরূরি যে আমরা আমাদের উপক’লের কতটুকু দূষিত করেছি। আমাদের অবস্থান যাচাইয়ের পর আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে।
উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং  সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, বেলার পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢা.বি. এর জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফে. ড. আবুল বাশার,  সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম,  নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের মহাসচিব আমিনুর রসুল বাবুল।
আবু নাসের খান বলেন, মানুষের শ্রমকে কাজে লাগিয়ে  যারা মুনাফা অর্জন করে কিন্তু শ্রমিকের মানবাধিকার, মজুরি ঠিক মত দেয়না উপরন্তু ব্যবসার নামে জৈববৈচিত্র্য, পরিবেশ দূষণ  এবং রাসায়নিক বিকরণের ফলে নি:শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে মানুষের ক্যান্সার সৃষ্টি করে এমন কর্মকান্ড প্রয়োজন আছে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাহাজ ভাঙ্গার মালিকরা বলে থাকেন তারা দেশের ৮০ ভাগ লোহার যোগান দিয়ে থাকেন কিন্তু তাদের বক্তব্য এবং সরকারের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে তারা ২০ ভাগের বেশি যোগান দেন না। এবং জাহাজ ভাঙ্গার সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়ে থাকে সেটাও সত্য নয়। এখানে ১০ হাজার শ্রমিক থাকতে পারে। 
জনাব আবুল বাশার বলেন, জীবের বৈচিত্র্য ক্ষতি করে এমন কোন কর্মকান্ড চলতে দেওয়া যায় না । জাহাজ ভাঙ্গা কর্মকান্ডে জীববৈচিত্র্য সহ পরিবেশ ও মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ করা যাবে না।  জাহাজ ভাঙ্গা কর্মকান্ডে যে রাসায়নিক বর্জ্য মাছ, পাখি, শস্যতে মিশে গেছে তা যুগ যুগ ধরে সকলে বহন করবে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়বে  পরিবেশ প্রকৃতি মানুষ সহ সকলে ।
সভার শুরুতে জাহাজভাঙ্গা কর্মকান্ড নিয়ে ইয়াসমিন কবীরের প্রামান্য চিত্র “শেষ কৃত্য’’ প্রদর্শন করা হয়।
 বার্তা প্রেরক