এমভি কোকো- ৪ লঞ্চ দূর্ঘটনা সহ সকল দূর্ঘটনার ব্যর্থতার প্রতিবাদে আর কত লোকের মৃত্যু হলে, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন হবে
এমভি কোকো- ৪ লঞ্চ দূর্ঘটনা সহ সকল দূর্ঘটনার ব্যর্থতার প্রতিবাদে
আর কত লোকের মৃত্যু হলে, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন হবে
 
জনগনের জন্য নিরাপদ নৌ-পথ তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে, জনগনের যাতায়াতের নিরাপত্তাহীনতার প্রতি অবহেলা সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। বিগত দশ বছরের ৫ সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও এ পর্যন্ত কোন সরকারই  নিরাপদ নৌ-পথ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থায়িত্বশীল কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকার কর্মকর্তা ও সংসদের জন্য গাড়ী কেনার টাকা থাকলেও, দরিদ্র মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের স্বার্থে লঞ্চ কেনার অর্থ সরকারের থাকে না। কোম্পানির মালিকের ব্যবসা, সরকারের আশ্বার কাছে জিম্মি জনগন। আমরা জানতে চাই? কত মানুষের মৃত্যু হলে সরকার নিরাপদ নৌ-পথ সৃষ্টির উদ্যোগ নেবে।  আজ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও নিরাপদ নৌ-পথ বাস্তবায়ন আন্দোলন আয়োজিত এক প্রতীকী প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑনিরাপদ নৌ-পথ বাস্তবায়ন আন্দোলন এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, হাওড় অঞ্চলের নিরাপদ নৌ-পথ বাস্তবায়ন আন্দোলন এর সমন্বয়কারী জীবনানন্দ জয়ন্ত, গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা বাহরানে সুলতান বাহার, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, পবা’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ: সম্পাদক ইবনুল নাঈদ রানাÑসদস্য ইফমা হোসেনÑসদরুল আনাম। সমাবেশ পরিচালনা করেন-নিরাপদ নৌ-পথ বাস্তবায়ন আন্দোলন ঢাকা বিভাগের সমন্বয়কারী এস এম ফয়েজ হোসেন এবং ঘোষণাপত্র পাঠ করেন-পবা’র প্রোগ্রাম অফিসার তৌফিকুর রহমান সেন্টু প্রমুখ। 
 
নিরাপদ নৌ-পথ বাস্তবায়ন আন্দোলন এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বলেনÑ উপকুলীয় ও হাওড় অঞ্চলের যাতায়াতের অন্যতম বাহন হলো নৌপথ। এই পথে বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষই যাতায়াত করে থাকে। কারন নৌপথ অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং আরামদায়ক। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন্ সরকারগুলো নিরাপদ নৌপথের আশ্বাস দিলেও ফলাফল শুন্য। আমরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছি, বিশেষ উৎসব, ঈদ পার্বণগুলোকে সামন রেখে মানুষের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থ্য গৃহীত হোক। কিন্তু প্রত্যেক বছরই একই চিত্র দেখা যায়। সরকার, সংশ্লিষ্ট বিভাগ, লঞ্চ মালিকদের উদ্যোগ শুধুমাত্র মুখে বলা বুলি, উদ্বোধন, পরিদর্শন এবং প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাদের এই উদাসীনতার ফলাফল প্রত্যেক উৎসব, ঈদ পার্বণে দূর্ঘটনা এবং মানুষের মৃত্যু। যা বারবারই সংশ্লিষ্টদের চরম দায়িত্বহীনতা প্রমাণ করে। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেনÑ যেই দরিদ্র মানুষগুলো দুর্ঘটনায় মারা যায় তারা রাষ্ট্রের নাগরিক, নিয়মিত কর দাতা, অন্যান্য নাগরিকেরমত এদেরও সমঅধিকার রয়েছে। ঢাকা শহরের মানুষের জন্য হাজার কোটি অহেতুক গবেষণা ও নানান বাহারী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, সড়ক খাতে প্রতিবছর ব্যয় করা হয় হাজার কোটি টাকা। অথচ নৌ-পথের জন্য সরকারের বরাদ্ধ নূন্যতম। দীর্ঘদিন অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার নৌপথে চলাচলকারী মানুষগুলো। নৌমাতৃক দেশে বহুসংখ্যক মানুষের চলাচলের প্রতি সরকারের এই বৈষম্য মূলক নীতি সাংবিধানিক দায়িত্বের ল্ঘংন। 
 
সমাবেশে দশ দফা দাবী ঘোষণা করা হয়:- (১) নিরাপদ নৌ- পথ সৃষ্টির লক্ষ্যে এমডি নাসরিন, এমডি সালাউদ্দিন, কোক-৪ এর মতো দূঘর্টনাকে জাতীয় দূযোর্গ হিসেবে ঘোষণা, (২) দূঘর্টনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান, (৩) লঞ্চ দূঘর্টনায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপুরণ প্রদান, (৪) দূঘর্টনার প্রেক্ষিতে বিআইডাব্লিউটিএ ও বিআইটিসি-র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, (৫) বিআইডাব্লিউটিএ ও বিআইটিসি-র ক্ষমতা, দক্ষতা ও জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ; (৬) রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক নিরাপদ নৌযান বৃদ্ধি, (৭) লঞ্চ পরিচালনায় রোটেশন পদ্ধতি বাতিল, (৮) ঝুকিপূর্ণ লঞ্চগুলো আগামী ১ মাসের মধ্যে চিহিত করে, অপসারণের ব্যবস্থা করা; (৯) লঞ্চ চালকদের দক্ষতা নিশ্চিত করা (১০) উৎসব পার্বনে যানবাহনে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করার দাবি জানান।