জীববৈচিত্র্য মানুষের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য

জীববৈচিত্র্য মানুষের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করে এবং যোগান দেয় জীবন রক্ষাকারী প্রাচীন আয়ুর্বেদীয় ও আধুনিক ঔষধের কাঁচামাল। নানা কারণে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য উপাদান পানির মারাত্মক দূষণ, জনসংখ্যার চাপ, ও অজ্ঞতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বৈচিত্র্যময় জীব সম্পদ। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে জীববেচিত্র্যের সংরক্ষণ, ব্যবহার ও উন্নয়নে পানি দূষণ বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সুন্দরবনে তেল ছড়ানো বন্ধ ও দূষণ কমাতে বিশেষজ্ঞসহ সমন্বয় কমিটি গঠন কর

৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেলবাহী নোঙর করা একটি জাহাজের সাথে পণ্যবাহী অপর একটি জাহাজের ধাক্কায় তেলবাহী জাহাজটি ডুবে যায় এবং বিপুল পরিমাণ তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে। তেলের আস্তরণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমুলীয় এই বনের গাছ মারা যাওয়াসহ সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রের বিপুল ক্ষতি হতে যাচ্ছে। ট্যাংকার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের স্বার্থেই প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে

দেশের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাণবৈচিত্র্যের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ পাই এবং বিভিন্ন ধরণের বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ পদ্ধতির সাথে প্রাণী, উদ্ভিদ ও অণুজীব নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। আর্শিবাদস্বরূপ প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আমরা এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছি যা কোন ভাবেই দেশের প্রাণ ও প্রকৃতির ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি। আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে। যুগোপযোগী প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ণ করতে হবে। বিশ্ব প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষ্যে আজ ২১ মে ২০১৫, সকাল ১১টায় পবা ও বারসিকের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত নাগরিক সংলাপে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
বৈচিত্র্য সুরক্ষা করি, সকলে মিলে স্বদেশ গড়ি শ্লোগানে সকল প্রাণ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রত�

 
আয়তনে ছোট হলেও  বাংলাদেশ  বৈচিত্র্য বৈভবে দুনিয়ায় অনন্য। ৩০টি কৃষি প্রতিবেশ, ১৭টি হাইড্রলজিক্যাল অঞ্চল, ২৩০টি নদ-নদী, দুনিয়ার বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য, দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, হাজারো ধানের জাত, ৪৫ জাতিসত্তা নিয়ে পৃথিবীর বুকে এক আশা জাগানিয়া স্বপ্ন ভূমির নাম বাংলাদেশ। এখানে মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি, স্তন্যপায়ী  প্রাণীর প্রজাতি ১১৩, পাখি প্রজাতি ৬৩০, সরীসৃপ ১২৫, ২২ প্রজাতির উভচর, ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ প্রজাতি ৪৭৫, ৩২৭ জাতের খোলসযুক্ত প্রাণী। বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১০ সনে ৪র্থ প্রাণ বৈচিত্র্য অবস্থানপত্র তৈরি করে। এতে দেশে ১৬ প্রজাতির এনডেমিক উদ্ভিদ সহ প্রায় ৩,৬১১ প্রজাতির সপুষ্পরক উদ্ভিদের সংখ্যা নথিভূক্ত করা হয়েছে। অবস্থানপত্রে এক হাজার প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদের কথা বলা হয়েছে। বাঘের অঞ্চল হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ ক্রমেই বাঘ শূণ্য হয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র সুন্দর বনই এখন বাংলা বাঘের শেষ আবাস। ২০০৪ সনের এক জরিপে দেখা যায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০, ২০০৬ সনে দেখা যায় ২০০ এবং সর্বশেষ ২০১৫ সনের জরিপে বাঘের সংখ্যা জানা যায় ১০৬টি। বাঘের মতই কমছে ধানের দেশে ধান জাতের বৈচিত্র্য। বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ১৯৮২ সনের জরিপে দেখায় দেশি ধানের জাত সংখ্যা ১২,৪৮৭। ২০১৪ সনে তারা জানায় জাত সংখ্যা  সাতহাজার। বৈচিত্র্য সুরক্ষা ও সকল প্রাণ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞানের লক্ষ্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং বারসিকের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।



সকল প্রাণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

পৃথিবীতে প্রাণ ও প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সম্পর্ক বিদ্যমান এবং একে অপরের উপর পুরোপুরিই নির্ভরশীল। প্রকৃতির ভেতর মানুষই খাদ্যের উপর শতভাগ অন্যের (প্রাণীসম্পদ, বৃক্ষ-লতা, শস্য, মৃত্তিকা) উপর নির্ভরশীল। সুতরাং মানুষের প্রয়োজনেই পৃথিবীর সকল প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি। খাদ্য শুধু মানুষের জন্য নয়। যে বৃক্ষ মানুষকে অক্্িরজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে সেই বৃক্ষের খাদ্যের নিশ্চয়তাও সম গুরুত্বপূর্ণ। তাই “সকল প্রাণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ১১ জুন, শনিবার, সকাল ১১ টায় পবা কার্যালয়ে একটি গোলটেবিল সংলাপের আয়োজন করা হয়।

পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বারসিকের প্রোগ্রাম অফিসার ও পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় গোলটেবিল সংলাপে বক্তব্য রাখেন নিসর্গী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক পাভেল পার্থ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত,উন্নয়ন কর্মি এম এ রাকিব,প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের দেলোয়ার জাহান,মাশরুম চাষী কিশোর বিশ্বাস কাজল, ইঞ্জিনিয়ার মো: সাত্তার, বাপার যুগ্ম-সম্পাদক মিহির বিশ্বাস,স্থপতি শাহিন আজিজ, মানবাধিকার  কর্মি রাকিবুল হক, শিক্ষক আব্দুল মান্নান পবার সহ-সম্পাদক মো: সেলিম, আমিনুর রসুল প্রমুখ।

প্রখ্যাত নিসর্গী ও লেখক অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা সকল প্রাণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে তার আলোচনায় বলেন, আমরা সভ্যতার এক সংকটময় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি। সকল ধর্মেই সকল প্রাণের নিরাপত্তা ও ভালবাসার কথা আছে। কিন্তু আমরা মানুষ হিসেবে প্রকৃতির অন্য প্রাণসত্তাকে গণ করছি না। প্রকৃতির জীব ও জড় সকল সত্তার প্রতিই আজ আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। মানব প্রজাতি ও সভ্যতা টিকে থাকার স্বার্থেই আজ সকলের খাদ্য নিরাপত্তার দাবি তুলতে হবে। এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে সকলেই সকলকে নিয়ে সমানভাবে টিকে থাকতে পারে।