যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি হবে আত্মঘাতী রেলের অবৈধ সম্পদ উদ্ধার করে আয় বাড়ানোর দাবি

সম্প্রতি রেলওয়ের যাত্রী ভাড়া রেল মন্ত্রণালয় ১০০% এবং সংসদীয় কমিটি ৫০%পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বিশ বছর ধরে রেলের ভাড়া বাড়েনিÑএ অজুহাতে এক দফায় এর পরিমাণ ৫০ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি পেলে দরিদ্র মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে, রেলওয়ের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে এবং এই সেবাখাতের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। ভাড়া বৃদ্ধিজনিত কারণে রেলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলে রেল ধবংস করা সহজ হবে। কারণ রেল যোগাযোগ ব্যহত করার জন্য দীর্ঘদিন থেকেই চক্রান্ত চলে আসছে। রেল এর ভাড়া বৃদ্ধি এ চক্রান্তের অংশ কিনাÑতা খতিয়ে দেখা দরকার।

আজ সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এর সামনে এক অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট যৌথভাবে এ অবস্থান কর্মসূচী আয়োজন করে। পরিবেশ বাচাও আন্দোলন(পবা)-এর রেল কমিটির আহব্বায়ক একেএম বদিউর রহমান এর সভাপতিত্বে এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি কর্মকর্তা মারুফ রহমান এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন এ কে এম সিরাজুল ইসলাম, সোসিও ইকোনোমিক রিসোর্স সেন্টার এর নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ্ আলম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) কর্মসূচী কর্মকর্তা আতিক মোর্শেদ, ইউনাইটেড পীস ফাউন্ডেশন এর উপদেষ্টা সুমন মাহমুদ, বিসিএইচআর এর নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিভিন্ন সময়ে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। যে কারণে স্বাধীনতার ৪০ বছরে রেল লাইন না বাড়লেও সড়ক পথ বেড়েছে কয়েকহাজার গুণ। রেল ধ্বংস করার প্রক্রিয়া হিসাবে দক্ষ জনবল ছাটাই হয়েছে, চলন্ত রুটে লাইন বন্ধ করা হয়েছে, রেল বরাদ্দ পর্যায়ক্রমে কমানো হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে সেই কম বরাদ্দও সড়ক খাতে ব্যয় করা হয়েছে। এখন রেল মন্ত্রণালয় যখন আশার আলো হিসাবে দেখা দিয়েছে, রেল যখন ভাল চলছে, মানুষের যখন রেলে পূণরায় আস্থা ফিরতে শুরু করেছে সে সময়ে হঠাৎ করে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অন্যায়। ভাড়া বৃদ্ধির এ প্রস্তাব আত্মঘাতী। ষড়যন্ত্রকারীরা রেলকে অজনপ্রিয় করার জন্যই রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ সুপারিশ করে থাকতে পারে।

পবা’র রেল উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক বদিউর রহমান বলেন, রেলকে লোকসানী খাত হিসাবে প্রচার করাও ষড়যন্ত্র। রেল মোটেই লোকসানী খাত নয়। বরং জ্বালানি সাশ্রয় করে, পরিবেশ দূষণ কম করে রেল অবদান রাখছে। রেলের এসব অবদানের আর্থিক মূল্য বিচার করা উচিত। তাছাড়া রেল-এ বিনিয়োগের ৬৫ভাগ অর্থের বেশি উঠলেও সড়ক খাত থেকে মাত্র ৩৫ভাগ। রেলের চাইতে সড়ক খাত লোকসানী হলেও সেখানে কন্ডাক্টর, ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি কোম্পানি, তেল ব্যবসায়ী সরাসরি লাভবান হয়। এছাড়া সড়ক ও সেতু নির্মাণের সময় নানারকম কমিশনের মাধ্যমে নীতি নির্ধারক, আমলাদের লাভবান হবার খবর পাওয়া যায়। যে কারণে সড়ক উন্নয়নে আগ্রহ বেশি দেখা যায়।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা, যাত্রী ভাড়া কম থাকা, আরামদায়ক পরিবেশ বান্ধব পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। রেলের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এর ভাড়া কম। এছাড়া নিরাপদ ও আরাদায়ক। এটি পরিবেশবান্ধব ও জালানী সাশ্রয়ী বাহন। ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রসার ও যাতায়াতের জন্য স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা রেল দরিদ্র মানুষের দূরবর্তী যাতায়াত মাধ্যম বিবেচনায় রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করা থেকে বিরত থাকা উচিত। 

আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন,  রেলের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে সাধারন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে, মানুষের যাতায়াত ব্যায় বেড়ে যাবে। রেলের যে সম্পদ রয়েছে তার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রেলের আয় বৃদ্ধি করা যায়। তাছাড়া চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর থেকে ৭০% মালামাল ট্রেনে করে বহন করা হলে প্রতিবছর যে ভর্তুকি দেয়া হয় তার আর প্রয়োজন হবে না।  আতিক মোর্শেদ বলেন, সময় ঠিক রেখে আরও বেশি যাত্রীর যাতায়াত চাহিদা পূরণ এবং মালামাল বহনের জন্য ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করা ও মালবাহী রেলগাড়ি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। রেলের সম্পদ কাজে লাগিয়ে এবং বকেয়া পাওনা আদায় করা হলে রেলের উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্বাভাবিক গতি দেওয়া সম্ভব।

মো. শাহ্ আলম বলেন, রেলওয়ে সেবাখাত, এটি কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। রাষ্ট্র যেখানে কর্মসংস্থান ও মানুষের আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে পারেনি, সেখানে রেলের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসার পথ সৃষ্টি ও যাতায়াত ব্যয় কমানোর মাধ্যমে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সরকার। সুমন মাহমুদ বলেন, রেল দূষণ হ্রাসে ভূমিকা রাখছে। দূর্ঘটনাজনিত ক্ষতির পরিমাণ কম। সড়কপথের ন্যয় প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ সংস্কার লাগে না। অথচ রেলকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অলাভজনক বলা হচ্ছে। মাহবুব হক বলেন, রেল জাতীয় সম্পদ। লোকসানের অজুহাতে কেউ যেন রেলকে জনবিমুখ করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কর্মসূচীতে আরও বক্তব্য রাখেন বি.ই.এইচ.ই.ডি এর-ওয়ালিদুল রহমান, নাগরিক অধিকার সংরক্ষন ফোরাম-এর সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, পবা-র নির্বাহী সদস্য এ.কে.এম. মুজিবুর রহমান প্রমুখ।