বিষমুক্ত নিরাপদ মৌসুমী ফল চাই

বিষমুক্ত নিরাপদ মৌসুমী ফল চাই

আসছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে মধুমাসের আম, লিচু, জাম, আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক সব ফল। মৌসুমী ফল মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু মধুমাসের নিরাপদ মৌসুমী ফলের প্রাপ্তি নিয়ে জনমনে শংকা কাটছে না। কারণ বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি মৌসুমী ফলের উৎপাদন, বিপনন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে বিষ ও ভেজালের মিশ্রণ করা হয়। রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অত্যধিক ও নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষক ও জনগণ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় বিষ ও ভেজালমুক্ত স্বাস্থ্যপ্রদ মৌসুমী ফল নিশ্চিত করতে সকল কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আজ ৩০ এপ্রিল ২০১৬, শনিবার, সকাল ১১টায় শাহবাগস্থ চারুকলা অনুষদের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), আইনের পাঠশালা, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন, স্বস্তি, ইয়থ সান এবং মডার্ণ ক্লাব আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।

পবা’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, আইনের পাঠশালার সভাপতি সুব্রত দাস খোকন, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন আহমদ, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য তাসনীম নাঈমা, স্বস্তির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক কায়সার, ইয়থ সানের সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পী, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, প্রকৌশলী মো: আবদুস সাত্তার, মো: সেলিম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন-ফলমূল, খাদ্যে বিষ ও ভেজালের মিশ্রণ চরম আকার ধারণ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাবার উৎপাদন, বিপনন ও বিক্রি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর সমন্বিত ও কার্যকরী প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সুপারিশসমূহ-   
১.    খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি উৎপাদন থেকে যোগানের প্রতিটি ধাপে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
২.    খাদ্যে ক্ষতিকর সকল ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩.    নিরাপদ খাবার তৈরী, বিপনন ও বিক্রি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর যথাযথ ও সমন্বিত প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
৪.    প্রতি জেলায় খাদ্য আদালত স্থাপন এবং জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা।
৫.    প্রতিটি জেলায় কৃষি আদালত গঠন করা।
৬.    সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৭.    সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা ।
৮.    দেশের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ফরমালিন আমাদানি করা।
৯.    খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
১০.    দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা।