যাতায়াত সংকট সমাধানে ফ্লাইওভার নয় সমন্বিত গণ-পরিবহন ব্যবস্থা চাই

পর্যাপ্ত পরিমাণ বাস, ট্যাক্সি, স্কুটার না থাকা, অধিকাংশ রাস্তায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকা, হাঁটার পরিবেশসহ নৈরাজ্যকর গণ পরিবহন ব্যবস্থাপনার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেটকার ক্রয় করছে এবং ক্রমান্বয়ে ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাইভেকার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গণ-পরিবহন ব্যবস্থার নাজুক অবস্থার কারণে যানজটও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। প্রাইভেটকার কেন্দ্রিকতা পরিহার এবং গণ-পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না ঘটিয়ে অপরিকল্পিত ও ব্যয়বহুল ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগসহ যানজট আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাতায়াতের বর্তমান দুর্ভোগ এবং আসন্ন বিপর্যয় নিরসনে অনতিবিলম্বে গণ-পরিবহন কেন্দ্রিক সমন্বিত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩, সোমবার, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রাইভেটকার কেন্দ্রিকতা : যাতায়াতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা থেকে বক্তারা উক্ত অভিমত জানান।

পরিবশে বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, হাঁটা, সাইকেল, রিকশা, বাস, স্কুটারসহ পাবলিক পরিবহন উপেক্ষা করার কারণেও মানুষ প্রাইভেটকার ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। গণ-পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন না করে প্রাইভেট কারকেন্দ্রিক নীতি, পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করায় যানজট সমস্যা ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করছে। এজন্য ভালো মানের বাস সার্ভিস চালু করা ও বাসের জন্য পৃথক লেন রাখা, যাত্রী ছাউনী, ফুটপাত ও জেব্রা ক্রসিং এর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। 

বুয়েট এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড.সারোয়ার জাহান বলেন, ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এই শহরের যাতায়াত ব্যবস্থায় সঙ্কট আরো বৃদ্ধি করবে। শহরের অভিভাবত্বহীনতাও যানজট সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ছোট ও মাঝারি শহরের উন্নয়ন করা প্রয়োজন। সেখানে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে ঢাকার উপর চাপ কমবে।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সারা বিশ্বে যখন প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে আমরা চলছি উল্টো পথে। নগর পরিকল্পনা মানুষের জন্য হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সকলেই বুঝতে পারছি প্রাইভেট কার আমাদের যানজট সৃষ্টিতে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও আমরা এ বিষয়ে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছি না।

পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তর এর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক  প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান- যানজটে বৎসরে আমাদের ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয় এবং দৈনিক ৮০ লক্ষ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। তিনি আরও বলেন- একই পরিবারের একাধিক প্রাইভেটকারের ক্ষেত্রে উচ্চ হারে কর আরোপ করা, প্রাইভেট গাড়ির জন্য সিএনজি সুবিধা প্রত্যাহার করা ফলে অনাবশ্যক প্রাইভেটকারের ব্যবহার হ্রাস পাবে। এবং সময়োপযোগী মোটরযান আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

প্রাইভেটকারের কারণে আমরা একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছি তা হলো যানজট। আমাদের শহরে ২ লক্ষ নিবন্ধিত গাড়ি চলাচল করে। আমাদের চলাচলকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে হলে অবশ্যই প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি যানজট নিরসনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান করেন।

আরো বক্তব্য রাখেন, পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাটেজি এর চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সমাজকর্মী একেএম সিরাজুল ইসলাম, কবি লিলি হক, পরিবেশকর্মী ড. আব্দুল হাই মজুমদার প্রমূখ। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান।