ধূলাশা ও ধোয়াশা নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী

নানা ধরণের দূষণে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশের পরিবেশ সংকটাপন্ন। বিভিন্ন ধরণের দূষণের মধ্যে অন্যতম অন্যতম হচ্ছে - বায়ু দূষণ। ধোয়াশা ও ধূলাশা (ধূলা+কুয়াশা)-র প্রভাবে এ বায়ু দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।  ধোয়াশা ও ধূলাশার প্রভাবে দিনের তাপমাত্রা কমতে থাকে, বাতাসের বেগ হ্রাস পায়, দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়, নিয়মিত বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রেও  বিঘœ ঘটায়। ধোয়াশা দেহের অ্যামাইনো এসিডসমূহের উপর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ধোয়াশা ও ধূলাশার ফলে ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, শ্বাসজনিত কষ্ট, চোখ জ্বালা, ঝাপসা দৃষ্টি, হাঁপানি, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য একটি মারাত্বক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ধোয়া ও ধূলা দূষণে দেশবাসী বিশেষ করে নগরবাসী অতিষ্ঠ। অবিলম্বে ধোয়া ও ধূলা দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। আজ ১৯ জানুয়ারী ২০১৩, শনিবার, সকাল ১১:০০ টায়, শাহবাগের চারুকলা অনুষদের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।
 
পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, পবার সম্পাদক আসলাম খান, কো-অর্ডিনেটর আতিক মোর্শেদ, নির্বাহী সদস্য ও পীসের মহাসচিব ইফমা হোসাইন, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক, নাসফের হাজারীবাগ জোনের সভাপতি জি এম রুস্তম খান, সিক্কাটুলী মুসলিম যুবসংঘের সাধারণ সম্পাদক মো: আকবর আলী প্রমুখ।

ধুলা কুয়াশা ও জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে ধুলাশার সৃষ্টি করে বিশেষ করে শীতকালে। এছাড়া বায়ুমন্ডলে সূর্যের  অতিবেগুনী  রশ্মির উপস্থিতিতে, হাইড্রোকার্বন ও  নাইট্রোজেন অক্সাইডের মাঝে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্ট  তৈরী হয়। এরা ধোয়াশার (যে কুয়াশার মাঝে ধোয়া আছে তা-ই ধোয়াশা) প্রধান উপাদান। ধোয়াশা মাটি থেকে অল্প উচ্চতায় আর্দ্র বাতাসের সংস্পর্শে এমন একটি স্তর তৈরী করে যার ফলে নীচের দূষিত বাতাস তা ভেদ করে উপরে উঠতে পারে না। আর ধোয়াশাও ক্রমশঃ গাঢ় হতে থাকে। মোটরযান, কলকারখানা ও নানা রকমের চুল্লী থেকে নির্গত কার্বন ডাইক্সাইড, হাইড্রোকার্বন ও নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ; মোটরযান, ধাতু গলানো কারখানা, সালফিউরিক এসিড কারখানা ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফারের অক্সাইডসমূহ, ইটভাটার নিঃসরণ এবং মোটরযান থেকে নির্গত অত্যন্ত সামান্য পরিমাণ ওজোন ধোঁয়া দূষণের অন্যতম কারণ। ধোয়াশার (ধোয়াটে কুয়াশার) বিশেষ উপাদান হচ্ছে ওজোন। বাতাসে এর পরিমাণ বেড়ে গেলে নাক জ্বালা করে। ওজোন জীবদেহে জীবাণুর আক্রমন ক্ষমতা ত্বরান্বিত করে, আয়ুকাল কমিয়ে দিতে পারে। সালফারের ডায়ক্সাইডের উপস্থিতিতে ওজোনের ক্ষতিকর  ক্ষমতা আরো বেড়ে যায়। ধূলার কারণে দোকানের জিনিসপত্র, কম্পিউটারসহ নানা ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাসাবাড়ির আসবাবপত্র জামা-কাপড়, ঘর-দোর দ্রুত নোংরা হয়ে যায় যা পরিষ্কার করতে প্রতিদিনকার মূল্যবান সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য  অংশ অপচয় হচ্ছে, এতে পানির ব্যবহারও বেড়ে গেছে। ধূলা দূষণে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ধূলাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগ জীবানু মিশ্রিত ধূলা ফুসফুসে প্রবেশ করে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী ও যক্ষ্মা সহ নানা  জটিল রোগের সৃষ্টি করছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।

ধোয়া ও ধূলা দুষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যে বিষয়গ্রুলো আবশ্যক সেগুলো হলো:
ক্স    কলকারখানায় বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
ক্স    মোটরযান নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা;
ক্স    ইট প্রস্তুতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা;
ক্স    ইটভাটায় লো সালফার কয়লা ব্যবহার করা;
ক্স    পরিসেবার সংযোগ, মেরামত, বৃদ্ধি ও নতুন সংযোগ স্থাপনের সময় রাস্তা খননে সৃষ্ট মাটি সম্পুর্ণরুপে সরিয়ে ফেলা এবং দ্রুত রাস্তা মেরামত করা;
ক্স    পরিসেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সকল পরিসেবা কাজের জন্য রাস্তা একবার খনন করা;
ক্স    নিয়মমত রাস্তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা;
ক্স    দালান-কোঠা বা অন্য কোন অবকাঠামো তৈরীর সময় নির্মান সামগ্রী রাস্তার উপর বা রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় না রাখা;
ক্স    ধূলা সৃষ্টি করে এমন কোন সামগ্রী বহনের সময় সঠিক আচ্ছাদন ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া;
ক্স    রাস্তার পাশের ড্রেন পরিস্কার করার সময় ড্রেন থেকে তোলা আবর্জনা রাস্তার পাশে জমিয়ে না রাখা;
ক্স    সকল আবর্জনা যথাযত স্থানে ফেলা,  সিটি করপোরেশন কর্তৃক আবর্জনা সংগ্রহ ও পরিবহনের সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা যাতে যানবাহন থেকে আর্বজনা রাস্তায় ছড়িয়ে না পড়ে; এবং
ক্স    ফুটপাতসমূহ নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও মেরামত করা