সংকটাপন্ন বলধা গার্ডেনের বিপন্ন প্রজাতি বাঁচাতে প্রতিরুপ তৈরি কর

বহুবিধ কারণে বলধা গার্ডেন আজ বিপদাপন্ন। বলধা গার্ডেনের চারপাশে সুউচ্চ বিল্ডিং হওয়ায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাবে উদ্ভিদ গুলোর টিকে থাকার অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। অযতœ অবহেলা ও অদূরদর্শিতা এ বাগানের দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদগুলোকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক দূর্লভ বৃক্ষ হারিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই এই বাগান ধ্বংস হবে বলে আশঙ্কা তাই বিকল্প বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠায় সরকারি এবং বেসরকারি অংশগ্রহণ প্রয়োজন। দেশের প্রকৃতিপ্রেমিক লেখক ও বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে বলধা গার্ডেন সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বাগানের চারপাশে অনেক সুউচ্চ স্থাপনা তৈরি হওয়ায় সেখানকার উদ্ভিদবৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি বর্ষায় সুয়ারেজের উপচেপড়া ময়লা পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণেও প্রতিবছর অনেক গাছপালার মৃত্যু হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এখানকার বিলুপ্ত গাছের তালিকা প্রতিনিয়তই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অচিরেই এই বাগান ধ্বংস হবে বলে আশঙ্কা। এমতাবস্থায় সংকটাপন্ন বলধা গার্ডেনের প্রতিরুপ তৈরির দাবী করে  ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার, সকাল ১১টায় পবা মিলনায়তনে “সংকটাপন্ন বলধা গার্ডেন, বিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণে করণীয়”-শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ-এর সভাপতিত্বে সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন উদ্যান তত্ত্ববিদ ও গবেষক মোকারম হোসেন। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পীস মুভমেন্ট-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর কামাল আতাউর রহমান, স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান সাজ্জাদুর রসিদ, মর্ডান ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানত, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, পবা’র সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, হাজী আসমত কলেজ এর প্রভাষক এবং তরু পল্লবের সদস্য হেনা নূর জাহানসহ আরো অনেকে।
বক্তারা বলেন, বলধা গার্ডেনের বর্তমান হতশ্রী রূপ দেখে খুব সহজেই অনুমান করা যায় বাগানটি লোকবল ও অর্থ সংকটে ভুগছে। বাগানের সর্বত্র অযতেœর ছাপ। সংরক্ষিত সাইকি অংশের পরিস্থিতিও বেশ নাজুক। স্বল্প সংখ্যক মালি নিয়ে শুধুমাত্র গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। চারপাশের উঁচু দালানে প্রায় ঢাকা পড়েছে বাগানটি। দিনের আলোয়ও পেছনের দিকটা বেশ অন্ধকার। সিবিলি অংশে সারাদিনই দর্শনার্থীদের ভিড়। এই দর্শনার্থীরা মূলত অন্য মতলবে এখানে আসেন। অপ্রয়োজনীয় মানুষের বিক্ষিপ্ত পদচারণা বাগানের গাছগুলোকে বিপন্নতর করে তুলছে। প্রশ্ন হলো, বলধা গার্ডেনের মতো এমন স্পর্শকাতর একটি স্থাপনা কেন টিকিটের বিনিময়ে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হলো! তবুও যারা এখানে বেড়াতে আসেন তারা যদি সত্যিকার অর্থে বৃক্ষের সমঝদার হতেন তাহলে কোনো প্রশ্ন ছিল না। উপরন্তু নিত্যদিনের এই অনিয়ন্ত্রিত জনস্রোত উদ্যানের বিপন্ন গাছগুলোর মৃত্যুকেই শুধু তরান্বিত করছে। এই বাগানের অর্জিত অর্থ ছাড়া কি বন বিভাগের চলছিল না? আবার এখানকার অর্জিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বাগান রক্ষণাবেক্ষণে তার সিকিভাগও ব্যয় হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা অচিরেই এসব আত্মঘাতি কাজের সমাপ্তি ঘটবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাগানটি বাঁচিয়ে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ও গবেষক মোকারম হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, ১০০ বছরের ব্যবধানে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে বাগানটির জৌলুস আর কমতে থাকে বাগানের সমৃদ্ধ উদ্ভিদপ্রজাতির সংগ্রহ।একারনে মূল গাছগুলো অক্ষত রেখে এবং বর্তমান বাগানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে চারাকলমের মাধ্যমে বাগানের গাছগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বলধা গার্ডেনের আদলে আরেকটি বাগান তৈরি করা উচিত। তাহলে বাগানটি নিশ্চিত বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। হারিয়ে যাবে না বাগানের দু®প্রাপ্য গাছগুলো। দেশের কোনো সুবিধাজনক স্থানে এবাগানের সকল উদ্ভিদপ্রজাতি নিয়ে হুবহু আরেকটি বাগান তৈরি করে দেশের শত বছরের ঐহিত্য এই বাগানটি রক্ষা করা সম্ভব। এজন্য উপযুক্ত স্থান
হতে পারে ঢাকার অদূরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বা সংলগ্ন এলাকা। সেখানে বলধা বাগানের জন্য পরিমাণ মতো জায়গা নিয়ে বিদ্যমান নকশায় সৃজন করা যায় আরেকটি নতুন বলধা গার্ডেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে একটি বিশেষ নার্সারী এবং
কয়েকজন সুদক্ষ মালি। আর এসব কাজে আমাদের পাশে থাকতে পারে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো। এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে একসময় মিশরের ঐতিহ্য আবু সিম্বেলও রক্ষা পায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন উদ্যানের
পুরনো নকশার বিকৃতি না ঘটে, আদি উদ্যানও অবহেলার শিকার না হয়। কারণ সংরক্ষণের নামে বাগানের নাম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রে কোনো ধরণের পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় নয়।
রাজধানী এক সময়ের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বলধা গার্ডেন-এর সামাজিকতা ও সবুজের ছায়াবিস্তৃত মনোরম পরিবেশ হননের পেছনে প্রশাসনের দুর্নীতি ও অবহেলাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। দিনের পর দিন চোখের সামনে অসামাজিক কর্মকান্ড হচ্ছে অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব থাকাসহ কর্তপক্ষের অবহেলা পার্কটির পরিবেশকে নাজুক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। বলধা গার্ডেন আবারও সামাজিক বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি পাক ও বিপন্ন উদ্ভিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিনত হোক এ দাবী আজ সকলের।