লালবাগ কেল্লা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াসহ অন্যান্য ঐতিহ্য সংরক্ষণে মহাপরিচালকের আন্তরিক
হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে লালবাগ কেল্লাসহ সকল প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণের সুপারিশমালা সম্বলিত স্মারকলিপি  প্রদানের জন্য আজ ৩০ জুন ২০১৫, সকাল ১১টায় পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে একটি টিম প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আলতাফ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করে। মহাপরিচালক লালবাগ কেল্লার দেয়াল এক সপ্তাহের মধ্যে তুলে দেয়াসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী অবিলম্বে সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দেন। শুধু লালবাগ কেল্লা নয় সারা দেশের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের যথাযথ সংরক্ষণেও তার আন্তরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।


পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদান টিমে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মো: মারুফ হোসেন, পবার ঐতিহ্য সংরক্ষণ টিমের সদস্য সচিব স্থপতি সাজ্জাদুর রশিদ, পবার সহ-সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

স্মারকলিপিটি নিন্মে দেয়া হল :

৩০ জুন ২০১৫
মহাপরিচালক
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর
এফ-৪/এ, আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকা
শের-এ-বাংলানগর, ঢাকা।
স্মারকলিপি

বিষয়: হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে লালবাগ কেল্লা সংরক্ষণ বিষয়ক স্মারকলিপি প্রদান প্রসঙ্গে।

প্রিয় মহোদয়,
শুভেচ্ছা নিন। ঐতিহ্যবাহী মুঘল কীর্তি লালবাগ কেল্লার মহিমা বিনষ্ট করে কেল্লার দেয়াল ভেঙ্গে ভিতরে পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম আরম্ভ করায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। এটি বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪, পুরাকীর্তি আইন, ১৯৬৮, ঢাকা ইমারত নিমার্ণ বিধিমালা, ২০০৮ এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪ এ  বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। লালবাগ কেল্লার এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম সংবিধানের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্ব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষন করা। কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতত্ত্ব অর্থের অভাবে সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলেও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। 

কতিপয় ব্যক্তির সুবিধার জন্য লালবাগ কেল্লায় প্রাইভেট গাড়ীর পাকিং নির্মাণের প্রেক্ষিতে ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় যানজট, দূষণ এবং দূঘর্টনা আরো বৃদ্ধি পাবে। বিদেশী পর্যটকদের গাড়ি পার্কিংয়ের কথা বলে এই অবকাঠামো নির্মাণের কথা বলা হলেও আমরা মনে করি, লালবাগ কেল্লায় দর্শনার্থীদের আসার সুবিধার্থে গণপরিবহন ব্যবস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করে হাঁটার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। বিশ্বের অন্যান্য প্রতœতাত্ত্বিক নির্দশন দেখতে দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা তারা দূর পথও পায়ে হেঁটে যাওয়ার  মানসিকতা রাখেন। 

লালবাগ কেল্লার মহিমা রক্ষায় আমাদের সুপারিশ হল-
১.    হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে পার্কিং অবকাঠামোর নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে পূর্বে অবস্থায় নিয়ে আনা এবং সেখানে বাগান তৈরি করা;
২.    লালবাগ কেল্লাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুসারে সঠিকভাবে কোর জোন নির্ধারণ, বাফার জোন তৈরি এবং চারদিকে দেয়ালের বাইরে ৫ মিটার প্রশস্ত হাঁটার পথ নির্মাণ করা;
৩.    লালবাগ এলাকায় দর্শণার্থীদের আসার সুবিধার্থে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করে হাঁটার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা;
৪.    গণপরিবহন স্টপেজ থেকে দর্শনার্থীদের আনার জন্য গাইড দ্বারা বিদেশী পর্যটকদের অর্ভ্যথনা জানানো; উক্ত এলাকায় ছুটির দিনের প্রাইভেট গাড়ীসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ; মালবাহী পরিবহন ভোর হবার আগে এবং সন্ধ্যার পরে প্রবেশের বিধান চালু; লালবাগ কেল্লাসহ অন্যান্য পুরাকীর্তি ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। 
৫.    যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে লালবাগ কেল্লার মূল নকশা উপেক্ষা করে পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণের মত ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যাতে এধরণের কার্যক্রম পরবর্তীতে আর না ঘটে।