কৃষিজমি, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের বৃহত্তম সরকারি যমুনা সারকারখানার দূষণ

জামালপুরের তারাকান্দিস্থ দেশের বৃহত্তম গুটি ইউরিয়া উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান যমুনা সারকারখানা কোম্পানি লিমিটেড (জেএফসিএল) এর বায়বীয় ও তরল বর্জ্যরে দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য, পতিত পড়ে রয়েছে বিশাল আবাদি জমি ও হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সরকার পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে বিভিন্ন  শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জেল জরিমানা করলেও দেশের সর্ববৃহৎ এই সরকারি প্রতিষ্ঠানের অব্যাহত দূষণের স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জনস্বাস্থ্য, কৃষিজমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যমুনা সারকারখানার অ্যামোনিয়া দূষণ অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরী। আজ ১৯ অক্টোবর ২০১২, শুক্রবার, সকাল ১১টায় শাহবাগস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ইউনাইটেড পীস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।

মানববন্ধন থেকে বলা হয় যে, যমুনা সারকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাসের দূষণে তারাকান্দি, রামচন্দ্রখালি, কান্দারপাড়া, পোগলদিঘা, চরপাড়া, চেচিঁয়াবাধাসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে কারখানা থেকে এত বেশি মাত্রায় অ্যামোনিয়া ছাড়া হয় যে মানুষকে দৌড়ে পালাতে হয়। মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া ছড়িয়ে পড়ায় ইতোপূর্বে দুটি মারাত্মক দূর্ঘটনাও ঘটেছিল। দূর্ঘটনার সময় অনেকে পালিয়ে বেঁচেছে, জরুরী এ্যাম্বুলেন্স সেবায় কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, অনেকে এখনও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভূগছে। অ্যামোনিয়ায় গর্ভবতী মহিলারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাছাড়া এই এলাকার শিশুদের সর্দি কাশি সবসময় লেগেই থাকে, লোকের অল্প বয়সে মাথার চুল পেকে যায়। নিকটস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রকট অ্যামোনিয়ার কারণে প্রায়ই ক্লাস বন্ধ করে দিতে হয়। নিয়মিত বিষাক্ত অ্যামোনিয়ার মধ্য দিয়ে কোমলমতি শিশু কিশোররা শারীরিক নানা ব্যাধি নিয়ে বেড়ে উঠছে।

পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্ত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সম্পাদক আসলাম খান, পবার সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কবি নিশাত খান, এ কে এম সেরাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম মুজিবুর রহমান, কো-অর্ডিনেটর আতিক মোর্শেদ, ইউনাইটেড পীস ফাউন্ডেশন জামালপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান রাসেলনেত্রকোনা জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম জনি, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসাইন, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি ছাড়াও কারখানার দূষণে ফল-ফসলের ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। আশেপাশের জমির কোন ফসল ঘরে তোলা যায় না। ধান পাকার আগেই চিটা হয়ে যায়, ধানগাছ মরে যায়। ফলে কৃষকদের বিশাল জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। গাছগুলোতে ফল ধরে না, কিছু কিছু গাছ যতœ সাথে লাগালেও বাঁচে না।

অ্যামোনিয়ায় বিষাক্ত ঘাস খেয়ে গরু মারা যায়, পাখি বাচ্চা ফুটায় না। আগে অনেক পাখি থাকলেও এখন এ এলাকা পাখি শূন্য হয়ে পড়েছে। আবার মাঝে মাঝে তরল বিষাক্ত অ্যামোনিয়া নদীতে ফেলা হয়। এতে প্রচুর মাছসহ জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠে। বিষাক্ত মরা মাছ খেয়ে অনেক পাখিও মারা যায়। এভাবে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ধবংশ হচ্ছে। গাছপালা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় অক্সিজেন ঘাটতির মাধ্যমে এলাকাবাসী দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। দীর্ঘদিন ধরে এ নিরব ধীর বিষ বাতাস ও পানি অব্যাহতভাবে দূষিত করলেও এর সুনির্দিষ্ট ক্ষতি নিরূপনে সরকারের কোন গবেষণা পরিচালিত হয়নি। বিপুল জনগোষ্ঠীর নিত্য দিনকার স্বাস্থ্যঝুঁকি, ফল-ফসল, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বিবেচনায় এর প্রতিকারে সরকার সম্পূর্ন উদাসীন। 


অব্যাহত দূষণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করতে চাইলেও তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না। স্থানীয় মাস্তানদের হাত করে কৃষকদের দমিয়ে রাখা হয়। সরকারি এ বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এভাবে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্যসহ কৃষির অপূরণীয় ক্ষতি করে সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ করছে। অবিলম্বে যমুনা সারকারখানার বর্জ্য দূষণ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।