জারীবাগ থেকে অবিলম্বে ট্যানারী স্থানান্তর করার দাবীতে মানববন্ধন

হাজারীবাগ ট্যানারীর ক্ষতিকর বর্জ্যে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীসহ হাজারীবাগের আশেপাশের বিস্তৃর্ণ এলাকার মাটি, পানি ও বাতাস। সরকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারীসমূহ সাভারের হরিণধরায় চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। হাইকোর্টও এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট রায় দেয় এবং একাধিকবার সময় বৃদ্ধি করলে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী স্থানান্তরের কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় অবিলম্বে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারীসমূহ সাভারের শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করা হোক। ০৫ জানুয়ারী ২০১৩, শনিবার, সকাল ১১:০০ টায়, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র উদ্যোগে হাজারীবাগ থেকে অবিলম্বে ট্যানারী স্থানান্তর করার দাবীতে এক মানববন্ধনে উক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন, আসলাম খান, কো-অর্ডিনেটর আতিক মোরশেদ, নির্বাহী সদস্য প্রণব কুমার সরকার, নুর মোহাম্মদ তারাকী, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসেন, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, ইউনাইটেড পীস ফাউন্ডেশন নেত্রকোনা জেলার সভাপতি জহিরুল ইসলাম জনি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের হাজারীবাগের সভাপতি জি এম রুস্তম খান, সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ আফজাল হোসেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল হক সুজন, সিপিবির ধানমন্ডির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক হাওলাদার, সদস্য দিলীপ বেপারী, হাজারীবাগবাসী আলী মনসুর প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারীসমূহের বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ।  মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ বুড়িগঙ্গা আজ একটি মৃত নদী। হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ হতে দৈনিক ২১,০০০ কিউবিক মিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড, পশুর মাংস ইত্যাদি। এসব বিষাক্ত এবং বিপদজনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানি, বায়ু, মাটি দূষণসহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্বক ক্ষতিসাধন করে চলেছে।

২০০১ সালে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনের রুল জারী করেন। পরবর্তীতে জুন ২০০৯-এ মহামান্য হাইকোর্ট সরকারকে ট্যানারীসমূহ ঢাকার বাহিরে সাভারে স্থানান্তরের বা ২৮ ফেব্র“য়ারী ২০১০-এর মধ্যে বন্ধের আদেশ প্রদান করেন। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালনের জন্য সরকার ২০১১ সালে  আরো ২ বছর সময় প্রার্থনা করে। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ এবং পরিবেশবাদী সংগঠন ও জনগণের অব্যাহত আন্দোলনের ফলশ্র“তিতে সরকার হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ট্যানারি শিল্পসমূহকে সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলায় স্থানান্তরের কার্যক্্রম গ্রহণ করে। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০৫ একর ভূমিতে ১৯৫ টি প্লট তৈরিসহ দৈনিক ২ কোটি লিটার বর্জ্য পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ¯হাপনের মাধ্যমে একটি পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তোলা হবে। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ৮৩৯ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময়কাল ছিল জানুয়ারী ২০০৩ হতে ডিসেম্বর ২০০৫। পরবর্তীতে তা জুন ২০১২ পর্যন্ত বৃদ্দি করা হলেও অদ্যাবধি কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ¯হাপন করা হয়নি এবং ট্যানারীসমূহ স্থানান্তরের দৃশ্যমান/কার্যকর কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহের স্থানান্তর বিলম্বিত হওয়ায় দূষণ অব্যাহত রয়েছে এবং মহানগরীর জনগণও গুরুতর শারিরীক ঝুকিতে রয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ¯হাপনসহ হাজারীবাগ¯হ ট্যানারীসমূহ স্থানান্তরের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ হ্রাস পাবে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ¯হাপন এবং ট্যানারীসমূহ স্থানান্তর কার্যক্রম যুগপৎভাবে চালাতে হবে। ট্যানারীসমূহ উৎপাদনে না যাওয়া পর্যন্ত বর্জ্য শোধনাগারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না এবং তা চালু করাও সম্ভব হবে না । ফলে  ৮৩৯ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করেও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কোন সুফল পাওয়া যাবে না। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি রপ্তানীর স্বার্থে হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ জরুরী ভিত্তিতে সাভারে স্থানান্তর করা অত্যাবশ্যক।