হাজারীবাগ ট্যানারীর পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৪০৯ কোটি টাকা আদায় করা হোক

হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারীসমূহের বর্জ্য বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ।  মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ বুড়িগঙ্গা আজ একটি মৃত নদী। ট্যানারীসমূহ দৈনিক ২২ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য বিপদ ডেকে আনছে । এছাড়াও  প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য তৈরী হচ্ছে। সর্বোচ্চ উৎপাদনকালে এর পরিমাণ প্রায় ২০০ মেট্রিক টন। এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোজেন সালফাইড, ফরমিক এসিড, ব্লিচ, ডাই, তেল,  চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত অনেক ভারী ধাতু, চুন, পশুর মাংস, দ্রবীভূত চুল, চর্বি ইত্যাদি। এসব বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানি, বায়ু, মাটি দূষণসহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে চলেছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)  ২৯ জুন ২০১৩, শনিবার, সকাল ১১টায় পবা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হাজারীবাগের ট্যানারীগুলোর অপরিশোধিত তরল বর্জ্য পরিবেশে নিক্ষেপ করায় ট্যানারী মালিকদের নিকট থেকে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবী জানায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেশ ব্যবস্থার ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার তরল বর্জ্যরে পরিশোধন ব্যয় ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হিসেবে ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ বাবদ ট্যানারী মালিকদের নিকট হতে ২৪০৯ (দুই হাজার চার শত নয়) কোটি  টাকা আদায়যোগ্য।

প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পবার সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। উপস্থিত ছিলেন পবার নির্বাহী কমিটির সদস্য এ কে এম সেরাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার দিনা খাদিজা, প্রণব কুমার সরকার, গ্রীণমাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, নাসফের হাজারীবাগের সাধারণ সম্পাদক জি এম রুস্তম খান প্রমুখ।  
     
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী ট্যানারীর মালিকদেরই বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন ও পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু ট্যানারীর মালিকগণ তা না করে যুগ যুগ ধরে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্বক ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মতে হাজারীবাগ ট্যানারীগুলোর বর্জ্যরে দূষণ মাত্রা বাংলাদেশে ট্যানারী বর্জ্যরে অনুমোদিত সীমা অতিক্রম করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তা অনুমোদিত মাত্রার কয়েক গুণ। বর্তমানে নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) পরিমাণ শূণ্য। অথচ জলজ প্রাণীর জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৬ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০০৮ সালের জরীপে দেখা যায়, ঢাকার আশে পাশের ৭টি শিল্প এলাকার চেয়ে হাজারীবাগ শিল্প এলাকায় বিওডি ও সিওডির পরিমাণ অনেক বেশী।  

পরিবেশগত ক্ষতি নিরূপণ : পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী পরিবেশগত ক্ষতি নিরূপণ ও তা আদায়ের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী হাজারীবাগ ট্যানারীর পরিবেশগত ক্ষতির দায় নিরূপণ এবং তা আদায়ের উদ্যোগ নেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এর আওতায় ৩টি ট্যানারীকে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৮ লাখ টাকা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। 

হাজারীবাগের ট্যানারীগুলোর মালিকগণ তাদের কারখানা হতে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য পরিবেশে নিক্ষেপের মাধ্যমে ১ বছরে ৪০,১৫,০০,০০০(চল্লিশ কোটি পনর লক্ষ) টাকা সমপরিমাণ পরিবেশগত ক্ষতিসাধন করছেন। ১৯৫০ সাল থেকে হাজারীবাগের ট্যানারীগুলো অপরিশোধিত তরল বর্জ্য পরিবেশে নিক্ষেপ করে পরিবেশ দূষণ  করে যাচ্ছে। পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায়যোগ্য মোট টাকার পরিমাণ ২৪০৯ (দুই হাজার চার শত নয়) কোটি। উক্ত পরিমান অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ ট্যানারী মালিকদের নিকট হতে আদায়যোগ্য।

সুপারিশ : ১. হাজারীবাগের ট্যানারীগুলোর মালিকদের কাছ থেকে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৪০৯ (দুই হাজার চার শত নয়) কোটি  টাকা আদায় করা।
২.    সিইটিপি নির্মাণ ব্যয় ট্যানারী মালিকগণ ১৫ বছর মেয়াদী কিস্তির মাধ্যমে সরকারকে পরিশোধ করবেন। সিইটিপি নির্মাণ মালিকদের দায়িত্ব । সরকার জনগণের টাকায় চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তুলেছে এবং সিইটপির জায়গাও  দিচ্ছে।
৩.    বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবী অনুযাযী ১০৯০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা থেকে বিরত থাকা। জনগণের এ টাকা কোন ভাবেই ট্যানারী মালিকদের প্রদান করা সমীচীন হবে না।