মানব দেহ, ফল-ফসল ও জীবজগতের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর তড়িৎ দূষণ রোধে বিধিমালা প্রণয়ন জরুরী

বিভিন্ন প্রকার দূষণের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে গন্ধহীন, বর্ণহীন, শব্দহীন ও অদৃশ্য দূষণ যা তড়িৎ চৌম্বকীয় দূষণ বা ইলেক্ট্রো দূষণ নামে অভিহিত। তারহীন মোবাইল ফোন প্রযুক্তির যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের মারাত্মক ক্ষতিকর তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ ফিরিয়ে দিচ্ছে। বিল্ডিং ও লোকালয়ে বেইজ এন্টিনা স্থাপনে তা থেকে নির্গত বিকিরণ বিকিরণ লিউকেনিয়া, ব্রেইন ক্যান্সার, স্মৃতি শক্তির  হ্রাস ও অন্যান্য মারাত্বক রোগের সৃষ্টি করছে। মানব দেহের নানা ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি নষ্ট করে অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। বর্তমান বিশ্বে ইলেক্ট্রনিক্্র যোগাযোগ মাধ্যমকে অগ্রাহ্য করা কঠিন কিন্তু তা ব্যবহার করতে হবে মাত্রারেখে ও অতি সতর্কতার সাথে। একটি সঠিক গবেষণার মাধ্যমে এ নিরব দূষণ রোধকল্পে তা জনসম্মুখে তুলে ধরা ও সরকারীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। আজ ২৪ জুলাই ২০১২, মঙ্গলবার, সকাল ১১:০০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবনের সেমিনার হলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ এর যৌথ উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকগন এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 
¬¬
গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা। আলোচনায় অংশ নেন ঢাবির পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনন্সিটিউটের পরিচালক ড. মো: আমিনুল হক ভূইয়া, প্রাণী বিজ্ঞার বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরজাহান সরকার, পবার সম্পাদক আসলাম খান, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার দিনা খাদিজা, উইমেন এনভয় এর সভাপতি শিখা ভূইয়া প্রমুখ।  

বৈঠক থেকে জানানো হয়, তড়িৎ চৌম্বকীয় আয়নাইজিং বিকিরণ মানব দেহের ভিতর দিয়ে গমন করলে রক্ত কণাসহ দেহ কোষের অনুসমূহকে আয়োনিত করে। কোষের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয় ও কর্মকান্ড ব্যাহত হয় এবং তাৎক্ষনিক মৃত্য বা পরবর্তীতে লিউকোমিয়া ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির সৃষ্টি হয়। অপেক্ষাকৃত কম শক্তি সম্পন্ন তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ যাহা রক্ত কনা বা দেহ কোষের অনুকে ভাঙ্গতে পারেনা তাদেরকে নন-আয়নাইজিং বিকিরণ বলে। তাপ অনুৎপাদকারী নন-আয়নাইজিং তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ লিউকেনিয়া, ব্রেইন ক্যান্সার, স্মৃতি শক্তির  হ্রাস ও অন্যান্য মারাত্বক রোগের জন্য বহুলাংশে দায়ী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করার জন্য যারা শক্তিশালী তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণে বেশিক্ষণ অবস্থান করছেন (যেমন পাওয়ার লাইনম্যান, ইলেকট্রিক রেলওয়ে অপারেটর, ইলেকট্রিসিয়ান, ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার) তারা অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অন্য পেশাজীবির তুলনায় এরা ব্রেইন ক্যান্সার, লিউকেমিয়া এবং লিমফোবিয়ায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে বেশি সময় অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে ব্রেইন ক্যান্সারে মারা যাওয়ার সংখ্যা, কম তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে অবস্থানকারীর তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। 

মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু কিশোর ও তরুণদের স্বাস্থ্য তড়িৎ দূষণে বেশি ঝুঁকিপুর্ণ। তাদের দেহসমূহ এখনও বর্ধনশীল এবং তরলে পূর্ণ। ফলে তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ খুব দ্রুত কোষের ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং কোষের মারাত্বক ক্ষতি করে। বেইজ এন্টিনা থেকে নির্গত বিকিরণ মানব দেহের ক্ষতি সাধন ছাড়াও জমির ফসল ও ফল-ফলাদি মোবাইলের জন্য ব্যবহৃত টাওয়ারের কারণে ফলন কম এবং নষ্ট হচ্ছে। যা  অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের ক্ষতি করছে। যেমন যে বিল্ডিং এর উপর এন্টিনা স্থাপন করা হয়েছে এর আশে পাশের আম ও নারিকেল গাছে ফল ধরার পরিমাণ কমে গেছে অথবা একবারেই ধরছে না। ফুল অবস্থায়ই ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু এন্টিনা স্থাপনের পূর্বে নিয়মিতভাবে আম গাছে আম ও নারিকেল গাছে নারিকেল ধরত। তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরনের ফলে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিকর দিকগুলি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে একসময় তা আমাদের জন্য মহামারি আকারে ক্ষতি হিসেবে দেখা দিবে। 

সর্বোপরি বৈঠক থেকে জানানো হয়, যোগাযোগের আধুনিক প্রযুক্তি আমরা অবশ্যই ব্যবহার করব কিন্তু তা কোটি জীবনের বিনিময়ে নয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের ও প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। মোবাইল ফোন ব্যবহার ও বেইজ এন্টেনা ব্যবহারের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। পরিবেশ আইনের আওতায় একটি বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি এবং সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।