রেলের দূর্ঘটনা প্রতিরোধ ও স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে রেললাইন সংস্কার করা হোক

অর্থ ও জ্বালানী সাশ্রয়ী, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী যাতায়াত মাধ্যম বাংলাদেশ রেলওয়ের লাইন সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বছরের পর বছর এই লাইনগুলো সংস্কার না হওয়ায় গত এক বছরে ১৬২টি রেলগাড়ি লাইনচ্যূত হয়েছে। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ লাইনে ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে লাগে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময়। ফলে ব্যহত হচ্ছে রেলের স্বাভাবিক গতি। তাই অবিলম্বে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের অওতায় রেললাইন সংস্কার করা প্রয়োজন। এজন্য রেললাইনে পাথর দেওয়া, স্লিপার পরিবর্তন, নাট বল্টু ঠিক আছে কি না তা নিয়মিত তদারকি করা প্রয়োজন। ৬ ডিসেম্বর ২০১২, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঢাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট এর সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ   উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর কো-অর্ডিনেটর আতিক মোর্শেদ এর সঞ্চালনে কর্মসূচিতে পবা এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নাসফ এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে রেলওয়ে সবচেয়ে সম্ভাবনার এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও বিগত সময়ে বছরের পর বছর ধরে রেলকে অবহেলিত রাখা হয়েছে। বিগত দিনে রেলওয়ের লাইনের সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রেলের উন্নয়নে রেললাইনের সংস্কার জরুরী।

বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) এর আহবায়ক কামরুল আহসান খান বলেন, সারা বিশ্ব যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আর আমাদের দেশে রেলকে অবহেলা করা হচ্ছে। সুশাসনের অভাব প্রকট এ খাতে। কয়েক দশকের বৈরী পরিকল্পনা এ খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে রেললাইন বাড়ার বদলে কমেছে। লাইনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও হয় না। সংস্কারহীন রেললাইনে দ্রুতগতিতে ট্রেন চালানো যায় না। এ লক্ষ্যে প্রয়োজন ব্যাপকভিত্তিক পদক্ষেপ। নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, অতীতে রেলের জনপ্রিয়তা হ্রাসে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের পর্যাপ্ত সুবিধা না দিয়ে রেলে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো এই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এতে গত মাসে রেলের সাত লক্ষ যাত্রী কমেছে। 

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান রেলওয়ের উন্নয়নে রেল মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে রেললাইন সংস্কার না করায় গত এক বছরেই ১৬২টি রেলগাড়ি লাইনচ্যূতির ঘটনা ঘটেছে। বিগত দিনে স্টেশন রি-মডেলিংয়ের নামে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও রেলওয়ের কার্যত কোন উন্নয়ন হয় নি। সম্প্রতিও শতকোটি টাকা ব্যয়ে রেলস্টেশন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বলেন, স্টেশন সংস্কারের চেয়ে ক্র্যাশ প্রেগ্রামের আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেলের সময়সূচি ঠিক রাখার জন্য রেললাইন সংস্কার, বগি কোচ, ইঞ্জিন ও লোকবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।


এছাড়া অন্যান্য বক্তারা বলেন, রেললাইনে পাথর না থাকায় রেললাইন মাটিতে দেবে যায়। অনেক জায়গায় লাইনের নিচের মাটিও সরে গেছে। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুতি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ট্রেনের গতিসীমা কোনো অবস্থাতেই ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের বেশি তোলা সম্ভব হয় না। অনেক জায়গায় ৮০ শতাংশ স্লিপার অকেজো থাকা অবস্থাতেই ট্রেন চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ লাইন এবং ইঞ্জিনের কারণে যে কোনো সময় রেলপথে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কাজেই দ্রুত রেললাইন সংস্কার করা প্রয়োজন। 

কর্মসূচিতে আরো বক্তব্যে রাখেন, পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, গ্রীণ মাইন্ড স্যোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আমির হাসান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর ইঞ্জিঃ এ কে এম মুজিবুর রহমান, মর্ডাণ ক্লাবের আবুল হাসনাত, বিআরসিটি এর মাহবুবুর রহমান প্রমূখ।