রেলের উন্নয়নে রেল কারখানাগুলো সচল করতে হবে

ইঞ্জিন, বগির অভাব প্রকট এবং পর্যাপ্ত রেল ইঞ্জিন ও বগির অভাবে অনেক রুটে চাহিদা থাকা সত্বেও রেলগাড়ি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। রেল ইঞ্জিন ও বগির এ অভাব দূর করতে বাংলাদেশের রেলকারখানাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে রেল কারখানায় রেলের বগি ও ইঞ্জিন নির্মাণ, মেরামত, রেলইঞ্জিন-বগি ও লাইনের অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরি ও মেরামত করা হয়। তাই অবিলম্বে রেল কারখানাগুলোকে সচল ও সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাবি¬উবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ১৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে “রেলের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নে করণীয়: প্রেক্ষিত রেল কারখানা” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা উপরোক্ত আহবান জানান। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবা সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান-এর সভাপতিত্বে ও ডাবি¬উবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম-এর সঞ্চালনায় সভায় সম্মানিত আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহ আলম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প¬্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এম আনসার হোসেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন ও বর্তমানে বিলস-এর সম্পাদক প্রকৌশলী মো. কবির হোসেন প্রমুখ। সভায় রেল কারখানা পরিদর্শনমূলক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডাব্লি¬উবিবি ট্রাস্ট এর উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান।  

প্রকৌশলী কবির হোসেন বলেন, দুর্নিতীর অভিযোগ তুলে রেলের লোকবল নিয়োগ বন্ধ থাকায় কারখানাগুলোসহ রেলের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে রেল কারখানাসহ রেলে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। বিআইপি সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এম আনসার হোসেন বলেন, রেল একইসঙ্গে প্রধান শিল্প ও সেবাখাত। রেলনির্ভর সরাসরি যেমন কর্মসংস্থান রয়েছে, তেমনি রেলনির্ভর অসংখ্য কর্মসংস্থান গড়ে উঠে। দেশের এ বৃহৎ কর্মসংস্থান ক্ষেত্র রেল উন্নয়নে বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। 

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহ আলম বলেন, রেলের দুর্নিতীর উৎস খুঁজে বের করে দূর করতে হবে। রেলের দিকে সরকারের দৃষ্টি বাড়াতে সামাজিক আন্দোলন আরও জোরালো করতে হবে। রেলের উন্নয়ন মানে গণমানুষের উন্নয়ন। 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, রেল নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাহন হওয়া সত্বেও রেলের উন্নয়ন ঘটছে না, কারণ রেল উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সাম্প্রাতিক সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় রেল আক্রমনের শিকার হচ্ছে। দেশের স্বার্থে এ প্রবণতা বন্ধ করা প্রয়োজন। রেলের স্থাবর সম্পত্তি (প্রধানত জমি) রক্ষণাবেক্ষণে দুর্বলতা রয়েছে। রেলে বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পদ পূণরুদ্ধার করতে হবে। রেলের সম্পদ রক্ষা করে সে সম্পদের ব্যবহার করে রেলের আয়ও বৃদ্ধি করা সম্ভব। রেলকে গণমানুষের বাহন হিসাবে গড়ে তোলাসহ রেলের উন্নয়নে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে পবা সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, রেলের সাম্প্রতিক সময়ে ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে। তবু রেল এখনও সাশ্রয়ী। রেল জ্বালানি সাশ্রয়ী। রেলের মাধ্যমে ভূমির ব্যবহারও নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব। রেলকে আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। সে অর্থ যেন সঠিকভাবে ব্যয় হয়, এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাই রেলকে প্রধান পরিবহন মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে রেল উন্নয়নে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দেওয়ান মোহাম্মদ আলী, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ (নাসফ) সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, অধ্যক্ষ কামাল আতাউর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দ্বিজেন্দ্র নাথ সিংহ, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রিজওয়ানুর রহমান খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সদস্য ড. এম এ হাই, রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. মজিবুর রহমান, পবা সদস্য সিরাজুল ইসলাম, নারী সংগঠক শিখা ভূঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।