চরম অব্যবস্থাপনা নৌ-দূর্ঘটনার মূল কারণ

জাহাজের নকশা অনুমোদন, সার্ভে ও রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদান, লঞ্চে যাত্রীবোঝাইকরণ, যাত্রীবাহী নৌ যানের চলাচলের অনুমতি প্রদান ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের দুর্বলতাসহ নানা অব্যবস্থাপনায় নৌ দুর্ঘটনা অব্যাহতভাবে ঘটছে। সেই সাথে সকল সরকারের সময়েই সড়কমুখী উন্নয়ন কর্মকৌশল এবং নদীবিমুখ নীতির ফলে নৌপথে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। আইন প্রয়োগে অবহেলা ও নৌপথে সমন্বিত কার্যক্রমের অভাব, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনের অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা, দুর্ঘটনা-দুর্যোগ এবং অক্ষমতা দূর্ঘটনার মূল কারণ। আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শনিবার, সকাল ১১ টায় পবা কার্যালয়ে পবা’র উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে উক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

পবার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ক্যাপ্টেন শফিক উল্লাহ। মূল ধারণাপত্রের আলোকে বক্তব্য রাখেন, পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পবার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, মনজুর হাসান দিলু, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, শিখা ভ’ইয়া প্রমুখ।

আলোচনা সভায় নৌ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়- 
ক্স    প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ অভিজ্ঞ চালক ও মাষ্টারের পরিবর্তে অদক্ষ চালক ও মাষ্টার দিয়ে নৌযান চালানো। ফিটনেস নেয়ার সময় অভিজ্ঞ চালক ও মাষ্টারদের সনদ দেখিয়ে মালিকরা রুট পারমিট নিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে হেলপার ও খালাসী দিয়ে চালানো;
ক্স    ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করা;
ক্স    মুনাফাভোগীদের ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চকে জানমালের তোয়াক্কা না করে চলাচলের অনুমতি প্রদান;
ক্স    ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে;
ক্স    আবহাওয়া সংকেত না মানা;
ক্স    সংকেতবিহীন নৌপথ বা সংকেত না মানা;
ক্স    লঞ্চের ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইন;
ক্স    অসাধু নৌযান মালিক বা ব্যবসায়ীদের নিয়ম না মেনে, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা না করে সস্তায় নৌযান তৈরী করা;
ক্স    অপর্যাপ্ত বা কোনো জীবন রক্ষকারী সরঞ্জাম ( লাইফ জ্যাকেট, বয়া) না থাকার কারণে দুর্ঘটনার পর মৃতের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে চালকের ঘুমিয়ে থাকা এবং সহকারীর নৌযান চালানো;
ক্স    দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার না করা;
ক্স    নৌ মন্ত্রণালয়, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-এর নজরদারির অভাব।

সভা থেকে নিন্মোক্ত সুপারিশ করা হয়-
ক্স    নৌ মন্ত্রণালয়, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-এর উপর ন্যস্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা;
ক্স    সব নৌযানের ফিটনেস নিশ্চিত করা;
ক্স    নৌপথে নিয়ম মেনে সব নৌযান চলাচল করছে, তা নিশ্চিত করা;
ক্স    দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা;
ক্স    জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সার্ভেয়ার নিয়োগ করা;
ক্স    চালক ও মাষ্টারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
ক্স    তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে যে সুপারিশ প্রদান করে তা বাস্তবায়ন করা;
ক্স    তদন্ত কমিটির দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেয়া;
ক্স    নৌকোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা;
ক্স    নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনা করা;
ক্স    বিদ্যমান আইনে লঞ্চের মালিক, চালক ও অন্যান্যদের শাস্তির বিধান থাকলেও ডিজাইনারের শাস্তির কোন বিধান নেই। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা।