অতি বিলাসী প্রকল্প যানজট ও জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করছে
বলিক বাস, রিকশা, হাঁটা, সাইকেল ও অন্যান্য গণমাধ্যমে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বেড়ে যাওয়ায় যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। সমস্যাকে পুঁজি করে নেওয়া হচ্ছে বড় বড় বিলাসী প্রকল্প, যা সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করছে। মহানগরীর যানজট ও জনদুর্ভোগ নিরসনে পথচারী ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। ১৯ অক্টোবর ২০১১, সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।


গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ঠ কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ ইহ্নটিটিউট অব প্লানার্স এর সভাপতি অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান, বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. রুখসানা হাফিজ, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন, বিআইডব্লিওটিএর সাবেক চেয়ারম্যান মো: আবদুল মালেক মিয়া, ঢাবির  রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভীন, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ। লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার সহ সম্পাদক মাহবুবুল আলম তাহিন।
ড. সারোয়ার জাহান বলেন যানজটের দোহাই দিয়ে উচ্চাভিলাসী প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। অথচ যানজট সমস্যার  ফলপ্রসু সমাধানে ছোট ছোট প্রকল্প  যেমন হাঁটা, সাইকেল, রিক্সা, বাস, আন্ডারপাস এসবের দিকে সরকারের নজর নেই।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন ঢাকার যানজটের প্রধান কারণ আমাদের নষ্ট রাজনীতি। সরকার জনদুর্ভোগ লাঘবে যাতায়াত ব্যবস্থাকে না সাজিয়ে ধনিক বান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যস্ত।
ড. রুখসানা হাফিজ বলেন সঠিক পরিকল্পনার প্রতি সরকারের কোন শ্রদ্ধা নেই। যাতায়াতে দুর্ভোগ কমাতে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল কোন সমাধান নয়।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির বড় বড় প্রকল্পায়ন ঢাকার বর্তমান যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। দীর্ঘস্থায়ী নগর পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রাইভেটকার কেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে এসে পথচারী, সাইকেল, রিকশা ও উপযোগী পাবলিক পরিবহণের সমন্বয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় বড় প্রকল্প যানজট সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে না।
বক্তারা বলেন যেখানে সারাদেশের মানুষের যাতায়াত সঙ্কট, ষ¦াস্থ্য সেবা কিংবা শিক্ষার মত অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষিত। সেখানে যানজট নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারসহ নানা বিলাসী পরিকল্পনার মাধ্যমে কতিপয় নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, আমলা ঢাকা শহরকে ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন। এসব বিলাসী প্রকল্পের মাধ্যমে যানজটতো কমবে না বরং এসব প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাইভেট কার বৃদ্ধি পাবে। সারাদেশের মানুষকে আরও বেশি ঢাকামুখী করে তুলবে। দুষণ, জ্বালানি ব্যয়, যাতায়াত সঙ্কট আরও বাড়বে। তাই শুধু ঢাকাকেন্দ্রীক বিলাসী প্রকল্পগুলো বাতিল করে সারাদেশের যাতায়াত সঙ্কট দূর করার জন্য দেশব্যাপী গণমুখী ও সহজলভ্য যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সভায় বক্তারা সারাদেশের যাতায়াত সঙ্কট দূর করার জন্য গণমূখী যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। পাশাপাশি দূরবর্তী যাতায়াতে রেল ও নৌপথকে অগ্রাধিকার প্রদান করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ সব বিভাগীয় শহরের সঙ্গে ডাবল রেল লাইন চালু, রেল পথের উন্নয়ন ও দক্ষ জনবল নিয়োগ, নদীর নাব্যতা কমানো ও নদীর গতিপথ ঠিক রাখা এবং নৌপথের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ঢাকায় স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতে হাঁটার সুযোগ বৃদ্ধি, ফুটপাতের উন্নয়ন, সড়কসহ যত্রতত্র পার্কিং নিষিদ্ধ করা ও বিনামূল্যে পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, ব্যস্ত সড়ক প্রাইভেট কারমুক্ত করা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রাইভেট কার নিষিদ্ধ করা ও বাস বাধ্যতামূলক করা, ঢাকার এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াতের জন্য সব রুটে আরামদায়ক ও সুলভ বাস চালু, সাইকেল এর জন্য স্বতন্ত্র লেন এর ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।