নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার পরিবেশ সৃষ্টিতে জেব্রাক্রসিং অঙ্কনের মাধ্যমে প্রতিবাদ

যাতায়াত ব্যবস্থায় পথচারীদের অগ্রাধিকার প্রদান সাপেক্ষে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে রাস্তা পারাপারের জন্য ঢাকা শহরের সর্বত্র জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করার মাধ্যমে নতুন বছরে হাঁটার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। একই সাথে জনবান্ধবহীন ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ বন্ধ করে সকল রাস্তায় সমতলে অধিকাংশ জনগনের চলাচলের মাধ্যম হাঁটার সুযোগ দিতে হবে।  আজ ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ সকাল ১০টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) এর যৌথ উদ্যোগে “স্বচ্ছন্দে রাস্তা পারাপারের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জেব্রা ক্রসিং ফিরিয়ে দাও” এই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করে প্রতিবাদের মাধ্যমে এই দাবি জানানো হয়। 

বক্তারা বলেন, ঢাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকল্প হয়। কিন্তু মানুষের সহজে ও স্বচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য কোন পরিকল্পনা হয় না। গণপরিবহন ও হাঁটার মতো যাতায়াতের উপযোগী মাধ্যমগুলো উপেক্ষিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মানুষ বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত গাড়ীর উপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। আর এখন এই ব্যক্তিগত গাড়ীর জটে নগর জীবন স্থবির। তথাপিও প্রাইভেট গাড়ীর জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু ঢাকায় অধিকাংশ হেঁটে চলাচল হওয়া সত্ত্বেও পদক্ষেপের অভাবে মানুষের হাঁটার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে যেতে বাধ্য করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অথচ চিন্তা করা হয় না একজন প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, অসুস্থ অথবা মালামাল বহনকারী ব্যক্তি কিভাবে এই পর্বত সমান ফুটওভার ব্রিজ অতিক্রম করবে। 

বক্তারা আরো বলেন, হাঁটা মানুষের সার্বজনীন অধিকার। ঢাকা শহরে প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ চলাচল করে হেঁটে। নগর পরিকল্পনায় হাঁটাকে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হিসাবে গণ্য করা প্রয়োজন। ঢাকা শহরে শব্দ ও বায়ু দূষণ, ভাঙা ও অসমান ফুটপাথ, জেব্রাক্রসিং না থাকা, ফুটওভারব্রীজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ, বেপড়োয়া গাড়ী চালানোর কারণে হেঁটে চলাচল ভীষণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহিত কার্যক্রমে হেঁটে চলাচলকারীদের উপেক্ষা করায় দূর্ঘটনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হচ্ছে। হেঁটে চলাচলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দে রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং থাকা আবশ্যক। ঢাকার প্রায় সকল রাস্তায় জেব্রাক্রসিং যেগুলো ছিল তা ইতিমধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মুছে গেছে। জেব্রাক্রসিং না থাকায় মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে  হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, বিশ্বে বর্তমান শহরে পথচারী প্রধান নীতি প্রণয়ন ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পথচারীদের নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তা পারাপারের জন্য রাস্তায় জেব্রাক্রসিংয়ের সুবিধা রয়েছে। তারা কর্মসূচি থেকে ঢাকার সকল রাস্তায় নির্দিষ্ট বিরতিতে পথচারী পারাপারের চাহিদা নিরূপন সাপেক্ষে জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করা; ফুটওভার ব্রীজের পরিবর্তে জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করা; জেব্রাক্রসিংএর পূর্বে সতর্কতামূলক সাইনস্থাপন করা; জেব্রাক্রসিংগুলোতে গাড়ীর গতি ধীর করতে এবং পথচারীদের অগ্রাধিকার দিতে চালকদের সচেতন করা; জেব্রাক্রসিং-এর পূর্বে গাড়ী থামার ব্যবস্থা করা; নিয়মলঙ্ঘনকারী চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা এবং শহরে গাড়ীর গতি নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে কর্মসূচি পরিচালনা করেন ইবনুল সাঈদ রানা। উপস্থিত ছিলেন নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, পবার প্রোগ্রাম অফিসার আতিক মোর্শেদ, সিটিজেন রাইটস্ মূভমেন্ট এর মহাসচিব তুষার রেহমান, সম্মিলিত জলাধার আন্দোলনের সদস্য উৎপল দাস, গ্রীণ বেল্ট টাস্ট এর মহাসচিব জসিম কাতাবী, সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী মশিউর রহমান রুবেল, সাংবাদিক ছদরুল আনাম, ঢাকাবাসী সংগঠনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক হাজী আনসার আলী প্রমূখ।