এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে জনদূর্ভোগ ও যানজট বৃদ্ধি করবে

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে জনদূর্ভোগ ও যানজট বৃদ্ধি করবে

ঢাকায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ কিমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মূলত প্রাইভেট গাড়ি ভিত্তিক অবকাঠামো হওয়ায় সাধারণ মানুষের কোন উপকারে আসবে না। ঢাকায় প্রাইভেট গাড়ীর মালিকানা ২ শতাংশের এবং এতে ৫% ট্রিপ চলাচলের ব্যবহার হয়, তাতেই ঢাকা শহরে যাতায়াত সঙ্কট প্রকট আকার ধারন করেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে যাতায়াত ব্যবস্থায় মহাসঙ্কট সৃষ্টি হবে। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিবর্তে জনস্বার্থে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আজ ৬ সেপ্টম্বর ২০১০ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউিট অব প্লানার্স (বিআইপি) এর যৌথ উদ্যোগে “ যাতায়াত ব্যবস্থায় মহাসঙ্কট আসন্ন: সমাধানে বিকল্প রূপরেখা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন, রেল, বাস, হাঁটা, সাইকেল, রিকশাসহ গণপরিবহন ব্যবস্থাকে কার্যকর করা ও প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করা, নগরে মিশ্র এলাকা গড়ে তোলা এবং দেশের অন্যান্য শহরে পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠী ব্যবসায়িক স্বার্থে বিভ্রান্ত তথ্য দিয়ে সরকারকে বিশাল অঙ্কের জনস্বার্থ বিরোধী প্রকল্প গ্রহণে উৎসাহী করছে। এলিভেটেড এক্সপ্্েরসওয়ের জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রায় আড়াই বছরের স্বাস্থ্য বাজেটের সমান অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এই অর্থ ব্যয়ে ঢাকা শহরে ৪০০ কিমি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নেটওয়ার্কসহ হাঁটা, সাইকেল ও রিকশাসহ অন্যান্য গণপরিবহনের সমন্বয়ে কার্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। যা যানজট নিরসনে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে ভূমিকা রাখবে।

বক্তারা আরো বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রেলের জায়গার উপর দিয়ে হবে বলে রেলের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প দিয়ে গাড়ি ওঠা-নামা এবং টোল আদায়ের স্থানে ভীষণ যানজট তৈরি করবে। এই অবকাঠামো নিচের সড়কের ৫০ শতাংশ জায়গা নষ্ট এবং গণপরিবহনে চলাচলকারী এবং পথচারীদের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রাইভেট গাড়ি বৃদ্ধির সাথে সাথে দূষণ, জ্বালানী নির্ভরতা, দূর্ঘটনা, যাতায়াত খরচ এবং শহরের তাপামাত্রা বৃদ্ধি করবে। যানজট সমস্যা সমাধানে ইতিপূর্বে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু যানজট কমেনি, বরং যানজট ও জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও, প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি, বরং প্রতিটি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ীর সুবিধা বৃদ্ধি এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। নতুন যে কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করার পূর্বে পূর্ববর্তী পরিকল্পনাগুলো কেন ব্যর্থ হয়েছে তা যথার্থ ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

ঢাকার যানজট একটি লাভজনক ব্যবসা। যানজট নিরসনের নামে বিভিন্ন প্রকল্প আর কাজ বৃদ্ধি করেছে সমস্যা। সমস্যা সৃষ্টি করছে নতুন নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র। উন্নয়নের নামে দেশের মানুষের অর্থ শোষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ঢাকা। বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ ন্যূনতম নৌ, রেল বা সড়ক যোগাযোগের জন্য যখন জীবিকা নির্বাহী বা মৌলিক প্রয়োজন নিশ্চিত করতে পারে না। ঢাকায় শত শত কোটি টাকা সিগন্যাল, কাপের্টিং, গবেষণাসহ নানাখাতে ব্যয় হয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও তার সুফল সর্বত্র সুষম বন্টনের লক্ষ্যে অন্যান্য শহরগুলির উন্নয়ন জরুরী। কিন্তু দেশে সব কিছুই ঢাকার মধ্যে পুঞ্জীভূত করা হচ্ছে। দেশে যে কোন দূর্যোগে সর্বহারা মানুষ দু-মুঠো ভাত পাবার আশায় কাজের জন্য ছুটে আসছে ঢাকা শহরে । এই অতিরিক্ত মানুষের চাপে ঢাকার জনজীবনে নানা সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বক্তারা নগর উন্নয়নে সকল আইন ও নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় করা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় করা, ঢাকা শহরে জনচাপ কমাতে দেশের অন্যান্য শহরে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা, সারাদেশে রেলকে কেন্দ্র করে সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ঢাকায় বাসের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ সাপেক্ষে দক্ষ বাস সার্ভিস গড়ে তোলা, হাঁটা-সাইকেল-রিকশায় চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার সুপারিশ করেন। গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান অবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিিিটউট অব প্লানার্স (বিআইপি) এর সভাপতি অধ্যাপক সারোয়ার জাহান, সহ-সভাপতি মোঃ শওকত আলী খান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, তেল-গ্যাস-বন্দর-বিদ্যূৎ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদ্ল্লুাহ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মহিদুল হক খান এবং সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ এর  পরিচালক নূরুল ইসলাম নাজেম।