আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হলমার্কের পরিবেশ বৈরী দখল-ভরাট কার্যক্রমের

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১২, সোমবার, সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়।  
পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন এ উপস্থিত ছিলেন পবার সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, নাসফের সভাপতি ও পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না, পবা’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেরাজুল ইসলাম, বাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিদুল হক খান। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন অলিজা হাসান।

সংবাদ সম্মেলন থেকে নিন্মোক্ত প্রতিবাদপত্রটি প্রকাশ করা হয়-
হলমার্ক  এখন সবচাইতে বহুল আলোচিত  সমালোচিত প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক প্রভাবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ও অর্থ-ব্যবস্থাপনার চরম নৈরাজ্য, অনিয়ম ও দুুনীতির  প্রতীক হিসাবে পরিগনিত হয়েছে হলমার্ক। সাম্প্রতিক কালে হলমার্ক নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে তা প্রধানত: হলমার্কের অর্থ লুন্ঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। 
অর্থ কেলেংকারীর ব্যাপকতায় হলমার্কের পরিবেশ বিনাশী অবৈধ তৎপরতা ও ভূমি দস্যুতার চিএ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। হলমার্কের  অর্থ কেলেংকারী নিয়ে সারা দেশে হৈচৈ সৃষ্টি হওয়ার পূর্ব থেকেই পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) হলমার্কের পরিবেশ বিধবংশী  তৎপরতা ও ভূমি দস্যৃতার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করছে, মানববন্ধন করছে এবং এই তৎপরতা রোধে শেষ পর্যন্ত আদালতের  আশ্রায় নিতে বাধ্য হয়েছে। 
ঢাকা জেলার সাভার থানার অন্তর্গত  হেমায়েতপুর সিংগাইর –মানিকগঞ্জ সড়কের নিকর্টবতী স্থানে হলমার্ক গ্র“প দেশের প্রচলিত আইন ও ঢাকা মেট্রেপলিটন ডেভলপমেন্ট প্ল্যান লংঘন করে গরীব মানুষের জমি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডর বাঁধ কাম-রাস্তার জমি দখল করে একটি তথাকথিত ইন্ডান্ট্রিয়াল  পার্ক নির্মানের  অশুভ ও পরিবেশ বিনাসী অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন  এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। গত ৯ মে ২০১২ তারিখে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পবা এই বেআইনী ও নদীখেকো তৎপরতা বন্ধের দাবী জানান এবং গত ৬ আগষ্ট ২০১২ তারিখে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করে। উল্লেখ্য যে হলমার্ক কয়েকজন মানুষকে প্রলোভনের মাধ্যমে বশ করে জমি ক্রয় করে এবং যারা বিক্রয়ে আগ্রহী নয় তাদের জমি দখল করে তাদের উপর  চাপ সৃষ্টি করে। হলমার্ক তাদের  ইন্ডান্ট্রিয়াল পার্কের জন্য  বাঁধ কাম রাস্তার জমি ও এভাবে দখল  করে যে বাঁধটির  অস্তিত্ত্বই  বিপন্ন হয়ে পড়ে। মাষ্টারপ্ল্যানে কৃষি জমি হিসাবে চিহ্নিত ভূমি দখল  করে হলমার্ক তা ভরাট করতে শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট  নিবার্হী  প্রকৌশলী  ও এই তৎপরতার প্রতিবাদ করেন। 

সবচাইতে  উল্লেখ্যযোগ্য  বিষয়  এই ইন্ডন্ট্রিয়াল পার্ক নির্মানের পূর্বে হলমার্ক প্রচলিত আইন অনুসারে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পএ গ্রহণ করেনি। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরে আনা হলে অধিদপ্তরের এনর্ফোসমেন্ট এন্ড মনিটরিং টিম দুই দফা পরিদর্শনের মাধ্যমে হলমার্কের অবৈধ ও পরিবেশ বিধবংসী তৎপরতার প্রমাণ হাতেনাতে খেয়ে যায়। 
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মুনীর চৌধুরী  গত ১১ অক্টোবর ২০১১ ও ৩ মে ২০১২ দুই দফায় হলমার্ককে যথাক্রমে  ৫ লক্ষ টাকা ও ৪০ লক্ষ টাক জরিমানা করেন এবং হলমার্ক কর্তৃক মাটি ভরাট কাজে নিয়োজিত  ড্রেজার পাইপ লাইন প্রভৃতি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়। এই আদেশকে অকার্যকর ও প্রত্যাহার করার জন্য হলমার্কের  নিকট হতে সুবিধাভোগী প্রভাবশালী মহল তৎপর হয়। হলমার্ক পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের 
পৃষ্টা-২
আইন সম্মত ও ন্যায় সংগত আদের্শের বিরুদ্ধে আপীল করে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রলনায়কে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে  অ্যাপিলেট কর্তৃপক্ষ যুক্তিসংগত আইনী কারণ ব্যতিরেকে হলমার্কের বিরুদ্ধে  জরিমানার পরিমান হ্রাস করে ৪ লক্ষ টাকা ধার্য করে  এবং ছাড়পএ  গ্রহণ সাপেক্ষে ইন্ডান্ট্রিয়াল পাকর্  নির্মাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। বিষয়টি  পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি তদন্ত  করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।  তবু হলমার্কের অশুভ  তৎপরতা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ বাঁচাও অন্দোলন আদালতের শরনাপন্ন হতে বাধ্য হয় এবং মহামান্য হাইকোর্টে ডৎরঃ ঢ়বষরঃরড়হ হড়.১০১৮০ ড়ভ ২০১২ দাখিল করে।  মহামন্য হাইকোর্ট গত ৩০ জুলাই ২০১২ তারিখে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আর্জিতে সন্তুষ্ট হয়ে রুল নিশি জারি করেন  এবং গত ১০ মে ২০১২ তারিখে পরিবেশ ও বন মন্ত্রালয়ের অ্যাপিলেট কর্তৃপক্ষের আদেশ ৪ (চার)মাসের জন্য স্থাগিত ঘোষণা করেন। মাটি ভরাটসহ হলমার্কের সকল তৎপরতা বন্ধ করে দেয়ার জন্যও  মহামান্য হাইকোর্ট নিদের্শ প্রদান করে। 

আদালতের নির্দেশ  অমান্য করে হলমার্ক গ্র“প পুকুর ও জলাশয় ভরাট ও বাঁধ সংলগ্ন স্থান ভারাটের কাজ অব্যাহত রাখে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হলেও  তাদের নিবৃক্ত করা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক কালে ভূমি মন্ত্রণালয়  এই নিয়ে খানিকটা  তৎপর হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। হলমার্ক কী পরিমান ভূমি দখল করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়  সে সম্পর্কে ঢাকার জেলা প্রশাসককে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে। কিন্তু হলমার্কের অশুভ তৎপরতা বন্ধ হয়নি। এক শ্রেণীর ভাড়াটে  লোককে শ্রমিক সাজিয়ে তা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে বাঁচাতে তারা রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছিল। 

উপর্যুক্ত  পরিস্থিতিতে হলমার্কের পরিবেশ বিধবংসী তৎপরতা রুখবার জন্য পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পক্ষ হতে আমরা নিম্মোক্ত দাবী পেশ করছি। 
ক্স    মহামান্য হাইকোর্ট গত ৩০ জুলাই ২০১২ তারিখের নিদের্শ যথাযথভাবে প্রতিফলন 
ক্স    ভূমি জবর দখল করে আবাসিক শিল্প স্থাপনের নামে পরিবেশ বিধবংসী তৎপরতা রুখতে হবে। 
ক্স    প্রচলিত আইন লংঘনের দায়ে হলমার্ক গ্র“পকে দণ্ড প্রদান করতে হবে। 
ক্স    দণ্ড হ্রাসকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 
ক্স    হেমায়েতপুর সিংগাইন মানিকগঞ্জ সড়কের নিকটবর্তী  স্থানে হলমার্কের নির্মিত সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। 
ক্স    পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ কাম- সড়ক রক্ষা করে মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত হতে মুক্ত করতে হবে।