ব্যক্তিকেন্দ্রীক ভোগবাদিতা পরিহার করে বিকশিত সমাজ নির্মাণেই বাজেট হওয়া উচিত

যানজট, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট, পয়:বর্জ্য সমস্যা, জলাবদ্ধতা  সমস্যায় জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। নদী খাল বিল জলাশয়ের পানি দূষণ, বাতাস দূষণ, মাটি দূষণ ইত্যাদির ফলে ক্রমবর্ধমান হারে মানুষ ক্যান্সারসহ নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের পাশাপাশি লাখ লাখ এমনকি  কোটি মানুষ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হবে এবং অনেকে ধুকে ধুকে মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। ক্রমশ আমরা অসুস্থ ও পঙ্গু জাতিতে পরিণত হব। আমরা যদি এখনই এ বিষয়গুলি চিন্তা না করি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ? আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন চিন্তায় ও আগামী জাতীয় বাজেটে এই সমস্যাগুলো প্রতিকারে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।  পরিবেশ বিপর্যয় রোধে এবং সমতা ভিত্তিক উন্নয়নে আমাদের এবারের জাতীয় বাজেট একটি বড় ভুমিকা পালন করতে পারে। ০৮ মে ২০১০ শনিবার সকাল ১১:০০ পবা মিলনায়তনে ‘পরিবেশ বিপর্যয় রোধে জাতীয় বাজেট” শীর্ষক সেমিনারে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান একথাগুলো বলেন। প্রফে.মনোয়ার উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে অংশ নেন,পবার সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী; উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল; বিশিষ্ট পরিবেশ অর্থনীতিবিদ, প্রফে. এনামুল হক, বিএমএ এর সাবেক সভাপতি প্রফে. রশিদ-ই-মাহবুব; এআইইউবির প্রফে. প্রিয় ব্রত পাল; কানাডা প্রবাসী বিশিষ্ঠ সাংবাদিক মাহাবুবুল হাসান নিরু, ডা: কাজী মুস্তফা আনওয়ার প্রিন্স, ডব্লিউবিবির মাহবুবুল আলম তাহিন, পরিবেশ কর্মী সৈয়দ সাগিরুজ্জামান শাকীক প্রমুখ।

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, আমাদের জাতীয় বাজেট উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, ব্যক্তি কেন্দ্রীক ভোগবাদিতা পরিহার করে বিকশিত সমাজ গঠনের উদ্দ্যোগ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ- মহিলাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং বৈষম্যবিহীন স্থানীয় উন্নয়ন, প্রত্যেক পরিবারের জন্য গ্রহণযোগ্য আকারের বাড়ী/ফ্ল্যাট তবে একাধিক নয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট- নৌ-রেল অগ্রাধিকার দেয়া, পর্যাপ্ত কমন ফ্যাসিলিটিজ মাঠ, পার্ক, পাসপাতাল নির্মাণ, পরিবেশ/প্রতিবেশ/স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন, বিষয়গুলি শিক্ষা ব্যবস্থায় এবং ট্রেনিং ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করা। সকল কর্মকান্ডে পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিষয়গুলি বিবেচনায় করা, প্রকৃতি বান্ধব কৃষি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা।

আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিন্মোক্ত সুপারিশগুলি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়-
 সুপারিশসমুহ: ১.গাড়ির সিসি অনুসারে আনুপাতিক হারে আমদানী কর ভ্যাট ইত্যাদি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা। পরিবারে একাধিক গাড়ি থাকলে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা। একইভাবে রোড় ট্যাক্স বিশগুণ বৃদ্ধি কর্ াপ্রাইভেটকারের মালিকের আয়কর নূন্যতম নির্ধারণে করতে হবে। ২.প্রাইভেটকারের জন্য ব্যবহৃত গ্যাসের দাম দশগুণ বৃদ্ধি করা, প্রয়োজনে পৃথক গ্যাস স্টেশন রাখার ব্যবস্থা করা। ৩.বড় বাসের ক্রয় আমদানি কর ও অন্যান্য ট্যাক্স কমানো। ৪.বড় ও একাধিক গাড়ি/ফ্ল্যাট/প্লট ক্রয় ও রাখা নিরুঃসাহিত করার জন্য এলাকা ভিত্তিক ক্রমবর্ধমান হারে কর আরোপ করা । একইসাথে আয়কর বৃদ্ধি করতে হবে। ৫.নবায়নযোগ্য বিদ্যুেেতর প্রধান খরচ সংরক্ষণ বা ব্যাটারীতে সোলার বিদ্রুতের খরচ কমাতে সরাসরি জাতীয় গ্রীড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহারের জন্য ব্যাটরিী উৎপাদন ও বিপননে প্রণোদনা দেওয়া। ৬.জৈব গ্যাস উৎপাদন বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দেওয়া। ৭.তামাক উৎপাদন ও বিপননে নিরুৎসাহিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা ৮.পরিবেশ দূষণকারী শিল্প স্থাপন করতে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতা যেমন ট্রিটপ্ল¬ান্ট তৈরি ও চালু রাখার পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির জন্য পৃথক দাম নির্ধারণ ৯.পরিবেশ বান্ধব শিল্প কে বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দেওয়া। ১০.ইলেক্ট্রিনিক বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা বন্ধ করা ও মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার স্থাপনে আইন করে উচ্চহারে কর আরোপ করা। ১১.প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার, দোকানপাট, হাসপাতাল রেলস্টেশন জনসমাগম স্থানে পাবলিক পয়:প্রণালীর জন্য পৃথক বরাদ্দ করতে হবে। ১২.যানজট নিরসনে ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রাইভেটকার কেন্দ্রীক যাতায়াত প্রত্যাহার করে গণযোগাযোগ ব্যবস্থায় আসতে হবে। ১৩.কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় রাসায়নিক ব্যবস্থার পরিবর্তে অর্গানিক কৃষি ব্যবস্থায় উৎসাহিত করে আমাদের প্রাণ বৈচিত্র্যকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।