বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সমন্বিত আইনের আলোকে একটি একক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গঠন জরুরী

উৎপাদন এবং বাণিজ্যিকীকরণের প্রসারতার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যে ভেজাল ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও আকর্ষণীয় করতে সার, কীটনাশক এবং কার্বাইডসহ বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়েছে। মাছ, মাংশ, ফলমূল, সবজিসহ প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যে অহরহ বিভিন্ন বিষ বা ভেজাল মিশ্রণের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মক পর্যায়ে পৌছেছে। সরকার মাঝে মাঝে ভেজাল বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে তাতে । এ বিষয়ে বিদ্যমান আইনসমূহ যথাযথভাবে প্রয়োগ না করা এবং সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহের দায় দায়িত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ায় খাদ্য ভেজাল ব্যাপক রূপ ধারণকরেছে। বিশুদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে এবং খাদ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে খাদ্য বিষয়ে একটি পৃথক শক্তিশালী কমিশন গঠন করা জরুরী। ০৯ জুলাই ২০১২, বিকাল ৪ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে পবা কার্যালয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক থেকে উক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়। 
বারডেমের দন্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: অরূপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ম্যাজিষ্ট্রেট রোকনউদ্দৌলা। আলোচনায় অংশ নেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, হেলথ এন্ড হোপের চেয়ারম্যান ডা: লেলিন চৌধুরী, পবার সম্পাদক আসলাম খান প্রমুখ। 

বৈঠক থেকে জাননো হয় মোবাইল কোর্ট কর্তৃক ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অনেক প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু এতে অসৎ ব্যবসায়ীদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। মোবাইল কোর্ট কর্তৃক জরিমানা খুব সামান্য হওয়ায় বড় বড় কোম্পানী, আড়তদার, আমদানিকারক, মালিকরা পরোয়া করছে না। তাই বিষ বা ভেজালকারী মূল হোতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টকে আরও শক্তিশালী এবং কার্যকর করতে হবে। 
    
বাংলাদেশে খাদ্য বিষয়ে যে সব আইন রয়েছে যেমন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, বিশুদ্ধ খাদ্য আইন এই আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে এবং সরকারী কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকার কারনে যতই দিন যাচ্ছে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রকৃতি ও মাত্রাও ততই বাড়ছে। আর তাছাড়া খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত আইন গুলোর সমন্বয় করা প্রয়োজন। এই সমন্বিত আইনের আলোকে বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে পৃথক একক শক্তি সম্পন্ন জবাবদিহীমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। 
আমাদের সুপারিশ-
১.    বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতা কমাতে ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।  বড় বড় কোম্পানী, আড়ৎদার, আমদানিকারকসহ মূলহোতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট জোরদার করতে হবে।  
২.    খাদ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে সক্রিয় করে খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে অর্থাৎ আইন বাস্তবায়নে দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করণ করতে হবে। এবং প্রচলিত আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। 
৩.    খাদ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল আইন সমূহকে একত্র করে একটি সুসমন্বিত আইন প্রণয়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহকে তার দায় দায়িত্ব সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নে নজরদারী ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে। 
৪.    খাদ্যে বিষ মেশানোর সাথে জড়িতদের সর্বনিম্ন সাজা যাবত জীবন কারাদন্ড ও তাদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্মত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৫.    খাদ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও দায়িত্বশীল, জবাবদিহীমূলক এবং শক্তিশালী করতে হবে।
৬.    সকল খাদ্য মজুদকারী গুদাম/কারখানা/মোকাম নিয়মিতভাবে ভেজাল বিরোধী টিম পরিদর্শন বাস্তবায়ন করা।