ঢাকার ৯৪ শতাংশ আম ফরমালিনযুক্ত
বাজারে মৌসুমীসব সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক ফলের সমাহার থাকলেও এগুলো বিষাক্ত কেমিক্যাল তথা ফরমালিনমুক্ত কিনা এ ব্যাপারে ক্রেতা নিশ্চিত হতে পারছেন না। ফল পাঁকানো এবং সংরক্ষণ করতে ব্যবসায়ীরা ফলে অহরহ ব্যবহার করছে বিষাক্ত ক্যামিকেল। এই বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, গ্যাস্টিক লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ ক্যান্সারের মতো মারণঘাতী রোগব্যাধি বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। ফলের বাজারে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল জরিমানা করলেও জনমনে আতংক কাটছে না। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) মহানগরী ঢাকার বিভিন্ন স্থানের আম ও মৌসুমী  ফলের ০১ থেকে ১০ জুন ২০১৩ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী ফরমালিন পরীক্ষা করে। মাঠ পর্যায়ে ফরমালিন পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন আজ ১১ জুন ২০১২, মঙ্গলবার, সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলন শেষে ত-৩০০ ঋড়ৎসধষফবযুফব গবঃবৎ  দ্বারা ফরমালিন পরীক্ষা করে দেখানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের আলোকে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন-পবা’র সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না, পীসের মহাসচিব ইফমা হোসাইন, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়- প্রতিটি ভোক্তার নিরাপদ ও ভোজালমুক্ত খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে । কিন্তু আমরা এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছসহ প্রায় সব ধরনের খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো  হয়। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও ভোক্তা অধিকার কর্মীদের বক্তব্যে বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতার যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা রীতিমত আতঙ্কজনক। 

পবার ফরমালিন পরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ ঃ

পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন(পবা) বিশ্ব পরিবেশ দিবস ৫ জুন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ কর্মসূচীর অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগরে মৌসুমী ফলে ফরমালিনের বর্তমান অবস্থা নিরুপণের লক্ষ্যে ০১ থেকে ১০ জুন ২০১৩ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী আম, লিচু ও জামে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা মহানগরীর ২৬টি এলাকা থেকে আমের ৯৬টি, লিচুর ৬টি এবং জামের ৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব ফল বিভিন্ন বাজার ও এলাকা হতে ক্রয় করে পবা কার্যালয়ে এবং কিছু কিছু দোকানে তাৎক্ষণিকভাবে ত-৩০০ ঋড়ৎসধষফবযুফব গবঃবৎ  দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। 

পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা ঃ 
আম ঃ হিম সাগর, ল্যাংড়া, আম্রপলী, চোষা, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, রানীভোগ
আমের-
৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯০টি নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে, যা মোট নমুনার ৯৩.৭৫ শতাংশ
৬টি নমুনায় ফরমালিন অনপুস্থিত, যা মোট নমুনার ৬.২৫ শতাংশ
৯টি নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি ১ পিপিএম-এর নীচে, যা মোট নমুনার ৯.৩৮ শতাংশ
১০টি নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি ২ পিপিএম-এর নীচে, যা মোট নমুনার ১০.৪২ শতাংশ
১৮টি নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি ২ থেকে ৫ পিপিএম-এর নীচে, যা মোট নমুনার ১৮.৭৫ শতাংশ
১৫টি নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি ৫ থেকে ১০ পিপিএম-এর নীচে, যা মোট নমুনার ১৫.৬২ শতাংশ
৪৪টি নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি ১০ থেকে ২৮.৯১ পিপিএম, যা মোট নমুনার ৪৫.৮৩ শতাংশ

লিচুর ৬টি নমুনায় ফরমালিনের  উপস্থিতি ৫.৯২ থেকে ১৭.০৪ পিপিএম, যা মোট নমুনার এক শত ভাগ।

জামের ২টি নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতি ১৮.০৪ থেকে ২৮.৫০ পিপিএম, যা মোট নমুনার এক শত ভাগ।

এছাড়াও মালটা, আপেল, আঙ্গুর, কমলায় ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয় এবং এসব ফলে ফরমালিন পাওয়া যায়। মালটায় ফরমালিনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশী। এমনকি সবজিতেও ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে। সবজির মধ্যে টমেটোতে ফরমালিনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশী। তরল দুধেও ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে। 
অতি স্বল্প পরিমাণ ফর্মালডিহাইড গ্যাস ব্যবহারেও ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়া হয়। শ্বাসের সাথে এই গ্যাস গ্রহণ নিউমোনিয়ার সংক্রমণের কারণ। ফরমালিন সেই বিরল বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা গ্রহণের ফলে মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। ফরমালিনের ব্যবহার পাক¯হলিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে যা গ্যাস্ট্রিক ও পরবতীতে ক্যান্সার এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
    
করণীয়

*   খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মিশানোর সাথে জড়িত ও ফরমালিনযুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদানই যথেষ্ট নয়। এদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ২৫-গ ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই আইনের ২৫-গ ধারায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
*    কোন রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
*   খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
*    পরিদর্শন ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনায় সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের সাধন।
*  পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক ফরমালিন পরীক্ষা করা।
*    ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করার জন্য আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন ।
*    গণমাধ্যমে প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ফরমালিনের বিষয়ে সচেতন করা।
*    খাদ্যের বিষমুক্ততা নিশ্চিত হয়ে গণমাধ্যমের যে কোন খাদ্য সামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচার করা। 
*    প্রস্তাবিত ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইন - এ যাবজ্জীবন কারাদন্ড, বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা।