বাংলাদেশে শিশুর ডায়াবেটিসের হার ৫.২%

বাংলাদেশে শিশুর ডায়াবেটিসের হার ৫.২%

আশংকাজনকভাবে বাড়ছে শিশুদের ডায়াবেটিস। এই অবস্থার পিছনে খাদ্য এবং পরিবেশের দূষণ মূল ভূমিকা পালন করছে। ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য তাই অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে ডায়াবেটিস রোগ। বাংলাদেশে বয়স্কদের মতো শিশুদের ডায়াবেটিসের হারও ক্রমবর্ধমান। ইব্রাহীম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে শিশুদের ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার উপর একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে উক্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় মোট অংশ গ্রহণকারীদের ১.৮% ভাগ ডায়াবেটিস রোগাক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। ৩.৪% অংশ গ্রহণকারীর  রক্তে ডায়াবেটিস মুখি প্রবনতা (ওঋএ) পাওয়া যায়। অর্থাৎ গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৫.২% ডায়াবেটিস রোগী ও রোগাক্রান্ত হওয়ার পথে। এই হিসাবকে ভিত্তিমূল ধরে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশে শিশুর ডায়াবেটিসের হার হচ্ছে ৫.২%। ০৬ এপ্রিল ২০১৬, বুধবার, সকাল ১১টায় পবা মিলনায়তনে উক্ত গবেষণার ফলাফল প্রকাশে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধের আলোকে মূল বক্তব্য রাখেন ইব্রাহীম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা: আবু সাঈদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: মোজাহেরুল হক, বাংলাদেশ ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা: হাবীবুল্লাহ তালুকদার, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, সহ-সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম, মো: সেলিম,  প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসননাত, প্রকৌশলী মো: আবদুস সাত্তার প্রমুখ।

গবেষণা পত্রে বলা হয়- গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো মোট ২১৫২ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ছিলো ১০৬৪ জন এবং ছাত্রী ছিলো ১০৮৮ জন। গবেষণায় আর্থসামাজিক অবস্থা, দৈহিক উচ্চতা, শরীরের ওজন, বি এম আই, মধ্যবাহুর পরিধি, রক্তচাপ, অভুক্ত অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজমাত্রা মূলতুল্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)  কর্তৃক নির্ধারিত এতসংক্রান্ত মানদন্ড অনুসরণ করা হয়। এছাড়া গবেষণায় প্রয়োজনীয় আইনী কাঠামো অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণার অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিলো ১৩.৩ বছর। এদের বি এম আই (ইড়ফু সধংং ওহফবী) হলো ১৮.৫ এবংমধ্যবাহুর পরিধি ছিলো ১৮.৫ সে.মি। এই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা যায় কম বয়সী শিশুর ডায়াবেটিসের হার বেশি এবং গ্রামের শিশুদের চেয়ে শহরের শিশুরা ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হয়। পারিবারিক আয়ের সাথে ডায়াবেটিসের একটি সরাসরি স¤্পর্ক এই গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়। যে সব পরিবারের আয় বেশি সেসব পরিবারের শিশুদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও ততো বেশি। তবে শিশুর লিঙ্গ, বি এম আই এবং মধ্যবাহুর পরিধির সাথে ডায়াবেটিসের কোন সম্পর্কসুত্র এই গবেষণায় পাওয়া যায়নি।

পূর্বেকার গবেষণার সাথে তুলনা করে বর্তমান গবেষণার বিষয়টি প্রমানিত। এবং এটি বিশ্বব্যাপি শিশু ডায়াবেটিসের রেখাচিত্রের সাথেও সাযুজ্যপূর্ণ।
সংবাদ সম্মেলনে নিন্মোক্ত সুপারিশ করা হয়-
১.    শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা ও শরীরচর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য প্রতিটি স্কুল-কলেজে আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
২.    এখানকার অধিকাংশ শিশু টিভি, ভিডিও গেম, ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ প্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহারা নিয়ে সারাক্ষণ বসে বা শুয়ে সময় কাটায়। ফলে মরীরের স্বাভাবিক বিক্শা বাধাগ্রস্থ হয়্ এটিও শহুরে এবং উচ্চবিত্তীয় শিশুর স্থুলতা ও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এই প্রবণতাকে সীমিত করার পথ বের করতে হবে।
৩.    খাবারের নানাবিধ বিষ ও ক্ষতিকর পদার্থের মিশেল দেওয়ার কারণে শিশুর শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এতে শিশু নানাবিধ রোগের শিকারে পরিনত হচ্ছে। সমস্ত উপায়ে এটি বন্ধ করতে হবে।
৪.    মানুষের করা কাজের পরিনামে আজ আমাদের পরিবেশ বিপর্যস্ত। জল, বায়ু, মাটি, বৃক্ষ সব আজ হুমকির মুখে। বৈশ্বিক উষ্ঞতার ক্রমবৃদ্ধির ফলে সংঘটিত ঘটনাবলীতে মানুষের জীবনযাত্রা সঙকটাপন্ন। শিশুমরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত হওয়ায় এসব বৈরী অবস্থার শিকার তারাই হয়। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সকল কাজ বন্ধ করতে হবে।
৫.    আমাদের মনে রাখতে হবে—সবার আগে শিশু। শিশুরা রোগাক্রান্ত হওয়া মানে আগামীদিনের জাতির রোগগ্রস্ত হওয়া। তাই শিশুদের ডায়াবেটিস সহ যাবতীয় রোগ থেকে মুক্ত রেখে সুস্থ্য স্বাভাবিক ভাবে বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু আমাদের করতে হবে।
ধন্যবাদসহ