লাঙ্গলবন্দ দূঘটনার এড়াতে পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি দূরীকরণ জরুরী

লাঙ্গলবন্দ ¯œানোৎসবের দূঘটনার এড়াতে
পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি দূরীকরণ জরুরী

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ¯œানোৎসবে পদদলিত হয়ে গত বছরের ২৭ মার্চ তারিখে নারায়নগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে ১০জন মানুষ মারা যায়। পবার একটি প্রতিনিধি দল দূর্ঘটনার পরই ৩১ মার্চ ২০১৫ তারিখে দুর্ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন এবং পরিবেশগত দিক পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যৎ দূর্ঘটনা এড়াতে কিছু সুপারিশ সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রেরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ¯œানোৎসবে পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তাকে সামনে রেখে পবার প্রতিনিধি দল ১২ মার্চ ২০১৬ তারিখে পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনাগত কার্যক্রম অগ্রগতি পরিদর্শন করে অনেক অব্যবস্থাপনা ও ত্রুটি দেখতে পায়। আসন্ন পূণ্য¯œান উৎসবে আগত লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তা বিবেচনায় উক্ত ত্রুটিসমূহ দূরীকরণে সত্ত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। আজ ১৯ মার্চ ২০১৬, সকাল ১১টায় পবা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
 
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের আলোকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পবার সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পবার সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, প্রকৌশলী মো: আবদুস সাত্তার, মাসুদুর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন- দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ উৎসব নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে পুরানো ব্রহ্মপুত্র নদে পুণ্য¯œান। প্রতি বছর লাখ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ পুণ্যার্জনের আশায় এই ¯œানোৎসবে অংশগ্রহণ করেন। পুণ্যার্থীদের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। এ বছর বাংলা নববর্ষকালীন সময়ে  পুণ্য¯œান হবে বিধায় পুণ্যার্থীদের সমাগম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর দেহভস্ম লাঙ্গলবন্দে ছড়ানো হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ লাঙ্গলবন্দে ¯œান করতে এসেছিলেন এবং তিনি রাজঘাটে ¯œান করেন। রাজঘাটে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ¯œানোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এ ঘাটে ¯œান করা গেলে পাপমোচনসহ অধিক পুণ্য অর্জন হবে এমন বিশ্বাস থেকে এ ঘাটে বেশি ভীড় হয়। প্রতিবছর চৈত্র মাসের শুক্ল তিথির অষ্টমীতে এই পুণ্য¯œান হয়। স্থানীয়রা জানান যে, এ বছর পুণ্য¯œান হবে পহেলা বা ২রা বৈশাখ (১৪ বা ১৫ এপ্রিল)।

প্রতিবেদনে বলা হয়- প্রধান সড়ক এবং ঘাট অভিমুখী পথগুলো দখলের ফলে সরু হয়ে পড়া, ব্রিজ নির্মাণাধীন অবস্থায় সরু বাইপাস ব্যবহার এবং চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব না হলে পুণ্যার্থীদের চাপ বেড়ে যাবে। পূণ্য¯œান করতে আসা পূণ্যার্থীদের খাবার পানি, চিকিৎসা ও টয়লেট সুবিধা, টয়লেটে পানির ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত; নারীদের কাপড় বদলানো স্থানের স্বল্পতা; নদী কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকায় পূণ্যার্থীদের পূণ্য ¯œানে সমস্যায় পড়তে হয় এবং পূণ্যার্থীদের নৌপথে ভ্রমন করা সম্ভব হয় না। তাদেরকে কেবল মাত্র সড়ক পথেই ভ্রমন করতে হয়; নদীর গভীরতা কম হওয়ায় পূণ্য ¯œানকালে পানি ঘোলা হয়ে যায়; ডাইং মিলের বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয় ফলে মাছ মরে ভেসে উঠে, পানি দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়।

বক্তারা বলেন- ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ এলাকার পুরানো ব্রিজের ভগ্নাংশ নদী থেকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পবা মাননীয় মন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ,  সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বরাবর ১২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে পত্র প্রেরণ করে। এর প্রেক্ষিতে  সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ০৬ মে ২০১৫ তারিখের ৩৫.০০.০০০০.০১৫.৩১.০৮৮.১৪ ( অংশ-১) ৩৬৬ নং স্মারকে পুরানো ব্রিজের ভগ্নাংশ নদী থেকে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তুসড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। যা অত্যন্ত দু:খজনক এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে নিন্মোক্ত করণীয় সুপারিশ করা হয়-
ক্স    ঐতিহ্যবাহী  ¯œানোৎসবকে নিরাপদ ও নির্বিঘœ করার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব, ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ফায়ার ব্রিগেড, ¯œান উদযাপন কমিটি, পর্যটন করপোরেশন-এর কর্মকর্তাদের সম্মিলিতভাবে লাঙ্গলবন্দ সরেজমিন পরিদর্শন করে অতিদ্রুত সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নদী খনন করা এবং কচুরিপানা মুক্ত রাখা।
ক্স    পূণ্য ¯œান করতে আসা পূণ্যার্থীদের খাবার পানি, চিকিৎসা ও টয়লেট সুব্যবস্থা করা, টয়লেটে প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থা রাখা
ক্স    নদী পথে চাঁদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল বিভাগ, বৃহত্তর ফরিদপুর  থেকে লোকজন আসার জন্য নদীর অববাহিকা ও প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য পানি সম্পদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ক্স    পুণ্য¯œানের সময় বাইপাস সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ক্স    পুণ্য¯œানের সময় প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা।
ক্স    প্রশাসন ও ¯œান উৎসব উদযাপন কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করা।
ক্স    প্রধান সড়ক এবং ঘাট অভিমুখী পথগুলো দখলমুক্ত করা।
ক্স    ঘাটের নির্মাণ ত্রুটিগুলো সংশোধন করে ঘাটগুলো নিরাপদ করা ব্রীজের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ভরাটকৃত খাল পুনঃখনন করে খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
ক্স    কঠিন বর্জ্য নদীর পাড়ে ও পয়ঃ বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে নদীতে ফেলা বন্ধ করা।
ক্স    সিএস রের্কড অনুযায়ী নদীর সিমানা নির্ধারণ করা, অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করা।
ক্স    শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে খাল/ নদীতে ফেলতে শিল্প মালিকদের বাধ্য করা।
ক্স    ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পুরানো ব্রিজের ভগ্নাংশ নদী থেকে সরিয়ে নেয়া এবং নদীর গতি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা।
ক্স    লাঙ্গলবন্দ পূণ্য¯œান স্থানকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।