মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের চিকিৎসাসেবা দেশের সরকারি হাসপাতালেই নিতে হবে

মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের চিকিৎসাসেবা
দেশের সরকারি হাসপাতালেই নিতে হবে

দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রধান নির্বাহীগণসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী প্রতিবছর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে গমন করছেন। যা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থারই বহি:প্রকাশ। এর ফলে দেশের নিজস্ব চিকিৎসা ব্যবস্থা যেমন একদিকে আস্থাহীনতায় ভুগছে তেমনিভাবে প্রতি বছর বহু অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ও সিনিয়র আমলাদের চিকিৎসাসেবা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করা গেলে সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়নসহ সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই দেশের হাসপাতালেই তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসা করানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা রাখবো প্রধানমন্ত্রীর পথ অনুসরণ করে মন্ত্রী, সাংসদ, আমলারা দেশের সরকারি, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত কিংবা অলাভজনক হাসপাতালগুলোতেই চিকিৎসা সেবা নেবার ঘোষণা দিবেন। আজ ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পল্লীমা গ্্রীণ এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ‘স্বাস্থ্য’ সুরক্ষায় বর্তমান সরকার চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণপূর্বক তা বাস্তবায়ন করছে। সরকারের এসব কর্মসূচির ‘সুফল’ টেকসই করার লক্ষ্যে সরকারকে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন নিরুৎসাহিত করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন থেকে দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা নেবেন বলে ৫ জানুযারী ঘোষণা দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা প্রশংসার দাবী রাখে এবং তা দেশের  চিকিৎসা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশের রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার বিত্তবান এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা একটি অনুকরণীয় বিষয় হতে পারে।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে সামিল হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা চিকিৎসা নিতে বিদেশমুখী হলে আমাদের রাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। এছাড়াও আমাদের দেশের চিকিৎসকরা বিদেশে সুনামের সাথে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছেন তা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।

রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের দেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রচেষ্টা দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের নৈতিক দায়বদ্ধতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। সাংসদ ও জনপ্রতিনিধিরা যদি নিজ নিজ এলাকায় চিকিৎসা নেন তাহলে স্থানয় পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ণ ঘটনে। অপরদিকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে ব্যর্থ হবে এবং চিকিৎসকদের মর্যাদা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে দেশে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

রোগীরা দেশেই উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিলে বা নিতে পারলে প্রতি বছর দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল হাতে গোনা কয়েকটা। তা মোটেও যথেষ্ট নয়। তাছাড়া রাজধানী ঢাকা ব্যতীত বিভাগীয় জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের সুযোগ গড়ে তোলা হয়নি। দেশে বেসরকারিভাবে বেশকিছু বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে উঠেছে সত্য। সে সব হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা প্রদানের দাবী করা হয়, কিন্তু এসব হাসপাতালে চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তাছাড়া দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো রোগীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। দেশের নামিদামী হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যায়। তারপর চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয়ে ভুল করা, অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি এসব রোগীদের বিদেশমুখীতায় ভ’মিকা রাখছে। বিদেশমুখীতা ঠেকাতে হলে দেশে সুলভে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে। সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান সংরক্ষণে সরকারের মনিটরিং থাকতে হবে। সর্বোপরি দেশের চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসকদের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। 

পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে মানবববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, পল্লীমা গ্রীণের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির মহাসচিব ডা: এস এম আব্দুর রহমান, পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন আহমেদ, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মাহবুল হক, পল্লীমা গ্রীণের সদস্য হাবিবুল ইসলাম, পল্লীমা মহিলা পরিষদের সৈয়দা শামীমা সুলতানা, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

মানববন্ধন থেকে নিন্মোক্ত দাবী জানানো হয়-
১.    প্রধানমন্ত্রীর পথ অনুসরণ করে মন্ত্রী, সাংসদসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, উচ্চপর্যায়ের আমলারা, বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার বিত্তবান এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দেশের সরকারি হাসপাতালেই তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিবেন।
২.    রাজধানী ঢাকার বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরে আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরা, স্থানীয় সকল সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে মানসম্পন্ন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।
৩.    জনসংখ্যার অনুপাতে ডাক্তার, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগসহ স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে জনগণকে ‘সুলভ মূল্যে উন্নত চিকিৎসা’ প্রদান করতে হবে।