পরিবেশ বিপর্যয়ে আশংকাজনকহারে বাড়ছে ক্যান্সার

পরিবেশ বিপর্যয়ে আশংকাজনকহারে বাড়ছে ক্যান্সার

আজ ০৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। বর্তমানে সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে ক্যান্সারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে সৃষ্ট বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক পরিবর্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতির উপর  নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে সকল পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড বন্ধে অনতিবিলম্বে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণসহ উন্নয়ন ভাবনায় পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, সকাল-১১টায় পবা কার্যালয়ে “ক্যান্সার এবং পরিবেশ বিপর্যয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিষমুক্ত খাদ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা: লেলিন চৌধুরী।

বক্তারা বলেন, ২০১২ সালে বিশ্বে ১৪ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল। এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ক্যান্সার রোধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিতে পারলে ২০৩২ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে মারা যাবে  ২২ মিলিয়ন মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ২১ লাখ। প্রতিবছর এখানে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে আড়াই লাখের মতো মানুষ। কৃষিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশকের ব্যবহার, খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনসহ বিষাক্ত রাসায়নিকের মিশ্রণ, শব্দ দূষণ, ধূলা দূষণ, পানি ও নানাবিধ দূষণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অপর্যাপ্ত খোলা জায়গা, খেলাধুলা ও বিনোদন সুবিধার অভাবে শিশুরা নানাবিধ অসুখ-বিসুখ নিয়ে বেড়ে উঠছে। সেই সাথে পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হওয়ায় এবং গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিতে বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনকহারে। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যসহ জাতীয় অর্থনীতিতেও। এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্যসহ সার্বিক উন্নয়নে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সকল কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী মোট ক্যান্সারের প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ সরাসরি পরিবেশ দুষণের সাথে যুক্ত। এ কারণে ২০০৪ সালে ১.৩ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যু বরণ করেছিলো। এ ছাড়া অন্য ক্যান্সার গুলোর উল্লেখ  যোগ্য বড় অংশ পরিবেশ বিপর্যয়ের সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত। পানি দূষণ, খাদ্য দূষণ, বিভিন্ন ধরণের বিকীরন, জীবন যাপনের ধরণ, প্রসাধন সামগ্রী, কীটনাশক, মানবসৃষ্ট নানা ধরনের ধোঁয়া-ইত্যাদি প্রতিদিন আমাদের ক্যান্সার ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে দশটি কেমিক্যাল ক্যান্সার তৈরির সাথে যুক্ত সেগুলোই ব্যাপকভাবে আমাদের খাদ্য, পানীয়, জীবনযাত্রা ও পরিবেশকে নিরন্তর দূষণ করছে। এই দশটি রাসায়নিক হচ্ছে ইউরিয়া, প্যারাবিন, থ্যালেট, পেট্রোলিয়াম বাই প্রডাক্টস, প্রোপাইলিন গ্লাইকল ও পলিইথিলিন গ্লাইকল, সোডিয়াম লরেল, ডাই ইথানল এ্যামাইন (ডিয়া) ও ট্রাই ইথানল  এ্যামাইন (টিয়া), ফরমালডিহাইড, কৃত্রিম সুগন্ধী ও কৃত্রিম রং, জি এম খাদ্য শস্য। এছাড়া কারসিনোজেন হিসেবে ঘোষিত ১০৭ টি কারণের মধ্যে এ্যাসবেস্টেস, আর্সেনিক, বেনজিন, বেনজো পাইরিন, সিলিকা, এ্যালমুনিয়াম, লোহা ও ইস্পাত কারখানা ইত্যাদিও বিভিন্ন ভাবে পরিবেশ দূষণের সাথে যুক্ত। বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রতি ১০ জন ফুসফুসে ক্যান্সার রোগির মধ্যে অন্তÍত ১ জন কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ দূষণের আক্রান্ত হয়ে থাকে। সভায় ক্যান্সার মুক্ত জীবনের জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন মেনে চলার উপর জোর দেওয়া হয়।


পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন-পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. আবদুস সোবহান, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের সহযোগী  অধ্যাপক ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী, প্রিজারভেশন অফ সিভিল রাইটসের চেয়ারম্যান সৈয়দ নাজমুল আরেফিন প্রমুখ।